আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ১১-০৫-২০১৯ তারিখে পত্রিকা

বেতন বৈষম্য নিরসনের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন চাই

মুন্নাফ হোসেন
| সম্পাদকীয়

শিক্ষক হচ্ছেন মানুষ গড়ার কারিগর। একটা শিশুকে পরিপূর্ণ মানুষে রূপদান করতে শিক্ষকের ভূমিকা অনস্বীকার্য। একটা জাতি উন্নতির চরম শিখরে পদার্পণ করতে পারে উপযুক্ত শিক্ষার মাধ্যমে। শিক্ষা শব্দটি থেকে শিক্ষক শব্দের উৎপত্তি। শিক্ষার মান বৃদ্ধি পায় তখন, যখন শিক্ষকের মান বৃদ্ধি থাকে। প্রাথমিক বিদ্যালয়েই শিক্ষার বীজ বপন করা হয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময়ই একজন শিক্ষার্থী ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ভাবতে শিখে; স্বপ্ন দেখে ভালো মানুষ হওয়ার। একজন শিক্ষকই তাকে ভাবতে শেখান, স্বপ্ন দেখান। অথচ আমার সোনার বাংলার শিক্ষককে হতে হয়েছে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদটি যেন অভিশাপে পরিণত হয়েছে। ভাবতেই অবাক লাগে, শিক্ষক হলো তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী। এটা সহকারী শিক্ষকদের জন্য একটা ঘৃণা। একজন এসএসসি পাস কৃষি ডিপ্লোমাধারী যেখানে দশম গ্রেডে বেতন পান, সেখানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পান ১৫তম গ্রেড।
দীর্ঘদিন ধরে কর্তৃপক্ষ বেতন বৈষম্য দূরীকরণের আশ্বাস দিয়ে আসছে; কিন্তু বাস্তবে ফলাফল এখনও শূন্য। প্রতিমন্ত্রী, সচিবসহ কর্তাব্যক্তিরা শুধু প্রতিশ্রুতিই দিয়ে যাচ্ছেন; কিন্তু পদক্ষেপ নিচ্ছেন না।  সহকারী শিক্ষকদের বেতন ১১তম গ্রেডে দিতে কোনো জটিলতা নেই। বর্তামানে সহকারী শিক্ষক হতে হলে তাকে স্নাতক পাস হতে হবে। তাহলে ১১তম গ্রেড দিতে জটিলতা কোথায়? আর প্রতিশ্রুতি চাই না, বেতন বৈষম্যের অবসান চাই।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার প্রথম হাতেখড়ি হয় প্রতিটা মানুষের। একটা শিশুকে হাতে-কলমে পড়া শেখানো অত্যন্ত কষ্টের। এ কাজটি অনেক দুরূহ। অতি আদরে পথ চলতে শেখানো হয় প্রতিটি শিশুকে। এখানেই তার নৈতিক ও বুদ্ধিদীপ্ত বিকাশ ঘটে। এমন কঠিন কাজটি করে থাকেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। অথচ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা বেতন পান ১৫তম গ্রেডে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা দশম গ্রেডে বেতন পান। আমি মনে করি প্রধান শিক্ষকদের আরও ওপরে নেওয়া যায়। এতে তাদের মর্যাদা আরও বাড়বে। অন্যদিকে সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডে আনলে বৈষম্য দূর হবে। সহকারী শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য দূরীকরণে অনেকদিন ধরে আন্দোলন চলে আসছে; কিন্তু তাদের আন্দোলনে হালে পানি পায়নি। যৌক্তিক আন্দোলনে সরকারের উচ্চমহল সুদৃষ্টি দিলে বেতন বৈষম্য দূর করা কঠিন কাজ নয়। 
বর্তমানে এইচএসসি পাস নার্সদের নবম গ্রেডে বেতন দেওয়া হয়। এটি অবশ্যই সরকার প্রশংসার দাবিদার। কিন্তু স্নাতক পাস সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড ১৫তম। এটা কেমন বৈষম্য?
দেশ বর্তমানে দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশ উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য। একজন সহকারী শিক্ষক যে বেতন পান, তা দিয়ে সন্তানের লেখাপড়া চালিয়ে সংসার চালানো খুব কষ্টের। তাছাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টার ১৫ মিনিট পর্যন্ত পাঠদান করানো হয়। তাই অন্যকোনো কাজ করে উপার্জন করা সম্ভব নয়। এ অবস্থায় বেতন বৃদ্ধি করা অতীব জরুরি। অন্যদিকে কৃষি ডিপ্লোমাধারীরা এইচএসসি পাস করে বেতন পান দশম গ্রেডে। এতে কোনো অভিযোগ নেই, নেই কোনো কষ্ট। কষ্ট একটাইÑ যারা অত্যন্ত পরিশ্রম করে ছোট ছোট শিশুকে মানুষ করছেন, তাদের বেলায় বেতন বৈষম্য কেন?
বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে হয়তো এমন বৈষম্য হতো না। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে হলে বেতন বৈষম্য দূর করা ছাড়া উপায় নেই। শুধু উচ্চমহলের একটু সুদৃষ্টি দরকার। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে সব স্তরে বৈষম্য দূর করা জরুরি।
গণতন্ত্রের মানসকন্যা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন, যত দ্রুত সম্ভব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের মানোন্নয়নে ১১তম গ্রেডে বেতন দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে বেতন বৈষম্য দূর করে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে এগিয়ে আসুন। হ

সহকারী শিক্ষক
মমিনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
ধনবাড়ী, টাঙ্গাইল
[email protected]