আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ১১-০৫-২০১৯ তারিখে পত্রিকা

শৃঙ্খলা ফেরাতে ব্যবস্থা নিন

বাজার ব্যবস্থা

| সম্পাদকীয়

মুক্তবাজার অর্থনীতিতে চাহিদা ও জোগানের ভিত্তিতে পণ্যমূল্য নির্ধারিত হবেÑ এটি একটি সাধারণ ধারণা। কিন্তু বাজার ব্যবস্থায় যদি কারসাজি কিংবা তদারকির দুর্বলতা অব্যাহতভাবে চলতে থাকে; তবে পণ্যমূল্যের স্বাভাবিকতা বজায় রাখা সম্ভব হবে কি? সে ক্ষেত্রে মুক্তবাজার ব্যবস্থা ভোক্তার জন্য দুর্বিষহ হওয়া স্বাভাবিক। বাস্তবে আমরা লক্ষ করছি, রমজান ঘিরে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে ক্রেতার বাড়ছে নাভিশ্বাস, ফলে চাহিদা ও সাধ্যের মধ্যে ব্যাপক ফারাক তৈরি হচ্ছে। এটা ঠিক যে, বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের আন্তরিকতার ঘাটতি নেই। রমজান শুরু হওয়ার অনেক আগে থেকেই প্রধানমন্ত্রী ও বাণিজ্যমন্ত্রী পণ্যমূল্য স্বাভাবিক রাখতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছেন। সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দফায় দফায় বৈঠক করছে, ক্রেতাদের আশ্বস্ত করছে পণ্যমূল্য বাড়বে না বলে। কিন্তু প্রতিবারই এসব প্রতিশ্রুতির বাস্তব প্রতিফলন দুর্লভ ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। এবারের রমজানকে ঘিরেও কোনো সুখবর নেই। বাজার ব্যবস্থার এহেন দুর্বলতা কিছুতেই প্রত্যাশিত নয়।
বাজার ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পরিতাপের বিষয় হলো, আমাদের বাজার ব্যবস্থায় শৃঙ্খলার দারুণ অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। অন্যদিকে সরকার নিয়ন্ত্রিত শক্তিশালী বিকল্প বাজার ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। আলোকিত বাংলাদেশের এ বিষয়ক এক প্রতিবেদনে বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে দেশের ইউনিয়ন পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল সরকারের হাত। ব্যবসায়ীরা ইচ্ছা করলেই পণ্যের দাম বাড়ানো সম্ভব ছিল না। তখন ডিলারের মাধ্যমে জনগণের দোরগোড়ায় পণ্য বিক্রি করত সরকার। সাবান থেকে শুরু করে চাল, ডাল, আটাসহ বিভিন্ন পণ্য বিদেশ থেকে সরকারিভাবে আমদানি করে এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মানুষের কাছে বিক্রি করা হতো। দেশের বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার প্রতিষ্ঠা করে বাংলাদেশ কনজ্যুমার সাপ্লাই করপোরেশন (কসকর), সমবায় মার্কেটিং সোসাইটি এবং সর্বশেষ ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। বিপুল জনবল সমৃদ্ধ এসব প্রতিষ্ঠান মানুষের কাছে সহজেই পণ্য পৌঁছে দিতে ভূমিকা রেখেছে। ১৯৮৫ সাল থেকে দুটি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়ে সরকার টিসিবির মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি, বরং টিসিবি ক্রমেই দুর্বল সংস্থায় পরিণত হয়। অন্যদিকে বিকল্প বাজার ব্যবস্থার ধারণা সংকুচিত করে বাজার মনিটরিং করার দিকে জোর দেয় সরকার। এক্ষেত্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মনিটরিং সেল, বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, প্রতিযোগিতা কমিশন বাজারে শৃঙ্খলা আনতে কাজ করছে একাধিক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানের তদারকির পরও অযৌক্তিকভাবে বাড়ছে নিত্যপণ্য মূল্য।
অভিযোগ রয়েছে, বর্তমান বাজার ব্যবস্থা ভোক্তাবান্ধব নয়, ব্যবসায়ীবান্ধব। মুক্তবাজার অর্থনীতির ধারা চালুর পর রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত সরবরাহ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে। পাশাপাশি ‘সরকার ব্যবসা করবে না’Ñ এমন ধারণা থেকেই ধীরে ধীরে সংকুচিত হয় বিকল্প বাজার ব্যবস্থা। যার সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে সিন্ডিকেট। পণ্য বিক্রি পর্যায়ে রসিদ বাধ্যতামূলক, পরিবেশক আইন পরিপালন ও প্রতিটি বাজারে মূল্য তালিকা প্রদর্শনের নিয়ম থাকলেও তার বাস্তবায়ন নেই। এক্ষেত্রে তদারকি প্রতিষ্ঠানগুলোর উদাসীনতা স্পষ্ট। ব্যবসায়ীদের চাপে পরিবেশক আইন এখন কার্যকর হয় না। ওই আইনে পণ্যমূল্য বৃদ্ধির আগে ট্যারিফ কমিশনে সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করে উৎপাদকদের আবেদন করার নিয়ম ছিল। এক্ষেত্রে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণে ক্রেতাকে হতে হবে সচেতন, আর সরকারকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সর্বগ্রাহ্য পরিকল্পনার মাধ্যমে বাজার শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনে কঠোর অবস্থান জরুরি। হ