এক
নিজের চোখ দেখবে?
তবে আয়নার সামনে দাঁড়াও।
দেখতে পাচ্ছো!
তোমাকে দেখার অস্ত্রকে দেখতে
দারস্থ হতে হয়েছে ভিন্ন কিছুর।
অথচ, তুমি চোখেই দেখোÑ
নদীগুলো হয়েছে রেললাইনের মতো,
মেঘ হয়ে পাহারায় নিক্সন।
খড়কুটোর ঘরে বসে রাজনৈতিক চড়–ই
ঢেকে দেয় সবুজ বাগান।
মশাল জ্বেলে পুড়ে দেওয়া কারো জগৎ
ভেঙে পড়া যুবক-যুবতীর আর্তনাদ।
আরও দেখোÑ মানুষের পোশাক পরিহিত
অমানুষিক দৌড়ঝাঁপ।
নিজেকে দেখ, বিবেকের কপাট খুলে?
দেখবেÑ তোমার পূর্বসূরিরা আয়নার কারিগর
আর তুমি, অন্যের ভুল খোঁজা অস্থির, জ্ঞানপাপী যাযাবর...
দুই
মুচি আমার বন্ধু, মেথরও...
ঘর্মাক্ত চেহারায় কাজ শেষে যে আসেÑ
তার সঙ্গে চা ভাগাভাগি করি।
রিকশাঅলা, ভ্যানগাড়িঅলা আরও আরও অনেকে...
সবাই প্রিয় আমার।
ভেঙে ভেঙে নিজেকে গড়ি প্রতিনিয়তÑ
আমি আজন্ম ছাত্র তাদের।
যখন আয়নার সামনে দাঁড়াই,
আমার ঠিক পেছনে দাঁড়ায় বাবা!
তার পাশে মা।
তার পাশে হাসি মুখে দাদা-দাদিও এসে দাঁড়ায়Ñ
এর পরে পূর্বসূরিরা অনেকে।
দেখিÑ মানুষের পর মানুষ! সবাই আমার আপন
অথচ, এরা ভিন্ন পাড়ার বাসিন্দা।
অতঃপর আয়না দেখতে দেখতে
একদিন ঢুকে পড়ি কাচের শহরে।
চোখ স্থির হয়, সমুদ্রের তলদেশ ছোঁয়া
মাছের মতো ছুটতে থাকে আমার রুহ।
যাদের আয়নার পেছনে দেখেছি তাদের সবাই
ডোম, মুচি আর আমার বন্ধুদের প্রাণ।
অথচ, এতোদিন মানুষ ছিলাম!
তিন
আয়নার সামনে দাঁড়ালেই
এক দেহে দু’টি প্রাণ আবিষ্কৃত হয়Ñ
স্বজীবী আর পরজীবী।
দুজন দুজনকে কী সুন্দর আগলিয়ে রেখেছে
অথচ, কেউ কাউকে স্পর্শ করেনি কখনও
যেমন নিজেই দেখে না নিজের মেরুদ-
অথচ মেরুদ- ছাড়া মানুষ অচল!
আয়নার সামনে দাঁড়ালেই
পরজীবী প্রাণ নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়
সক্রিয় হয় স্বজীবী প্রাণ আরÑ
টুকরো টুকরো হয় কাঁচের দেওয়াল,
প্রতিটি ভেঙে পড়া টুকরো ধারণ করে
ভেতরের পশুত্বকে
যা কখনও দেখা যায়নি অতীতে।