আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ১১-০৫-২০১৯ তারিখে পত্রিকা

প্রচ- গরমে হতে পারে হিটস্ট্রোক

ডা. মহসীন কবির
| সুস্থ থাকুন

চলছে ভয়াবহ গরম। এ গরমে প্রচ- রোদের তাপে মাঝেমধ্যেই আমরা শারীরিকভাবে কিছুটা অসুস্থ বোধ করি। যেমনÑ হঠাৎ মাথা ঝিমঝিম করা কিংবা চোখে ঝাপসা দেখাসহ বমি বমি ভাব হওয়া। আমরা সবাই জানি এটি গরমের জন্য হচ্ছে ও তা একটু পরেই ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু এ ধারণাটি ভুল। প্রচ- গরমের কারণে আমাদের যখন-তখন হতে পারে হিটস্ট্রোক, এমনকি মৃত্যুও। তাই এ গরমে আমাদের অবশ্যই সাবধান থাকতে হবে। আসুন জেনে নিই হিটস্ট্রোক নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যÑ

 

হিটস্ট্রোক কী

প্রচ- গরমের কারণে আমাদের শরীর থেকে ঘাম ঝরে। আর এ ঘামের সঙ্গে বেরিয়ে যায় শরীরের প্রয়োজনীয় লবণ। লবণ ও পানির পরিমাণ কমে গিয়ে শরীরে তৈরি হয় ডিহাইড্রেশন। আমাদের দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৯৮ ফারেনহাইট। যদি এটি ১০৪ ফারেনহাইট ছাড়িয়ে যায় তখনই হিটস্ট্রোক হতে পারে। আর দেহের এ তাপমাত্রার তারতম্য ঘটে সূর্যের প্রখর খরতাপ ও ক্লান্তি থেকে। ডিহাইড্রেশন ও দেহের তাপমাত্রার তারতম্যই হলো হিটস্ট্রোকের প্রধান কারণ। 

 

হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে যারা

ছোট বাচ্চা, প্রবীণ ব্যক্তি, যাদের দেহের ওজন অতিরিক্ত, যারা শারীরিক পরিশ্রমের কাজ বেশি করেন, তারা প্রচ- গরমে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন। শিশু ও ছোট বাচ্চার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সাবধানে থাকতে হবে। কারণ তাদের দেহে তাপ নিয়ন্ত্রণ সিস্টেমটি বড়দের মতো নয়; তাই তারা বুঝতে পারে না তাদের দেহে তাপের তারতম্য ঘটছে।

 

হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার পূর্বলক্ষণ

- প্রচ- গরমে হঠাৎই শরীরে ক্লান্তিবোধ হওয়া।

- প্রচ- তৃষ্ণা পাওয়া ও গলা শুকিয়ে মাথা ঘোরা।

- মাথা ঝিমঝিম করা ও বমি বমি ভাব হওয়া।

- মাথাব্যথা ও চোখে ঝাপসা দেখা।

- দেহের তাপমাত্রা অস্বাভাবিক বেশি হওয়া।

- শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া ও হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া।

- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না থাকা ও খিঁচুনি হওয়া।

 

হিটস্ট্রোকের প্রাথমিক জরুরি চিকিৎসা

- আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুত ঠান্ডা জায়গায় নিতে হবে ও শরীরের ভারী জামা-কাপড় খুলে দিতে হবে।

- আক্রান্ত রোগীকে পানি খাওয়াতে হবে। সম্ভব হলে ডাবের ও স্যালাইনের পানি খাওয়াতে হবে।

- কিছুক্ষণ পরপর দেহের তাপমাত্রা দেখতে হবে। শরীরের তাপমাত্রা কোনোভাবেই ১০১-১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি বাড়তে দেওয়া যাবে না। প্রয়োজনে রোগীর ঘাড়ের নিচে, হাতের তালুতে, পেটের নিচের অংশে বরফ দিতে হবে, যাতে শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত কমে যায়। 

- মনে রাখতে হবে এ সময় আক্রান্ত রোগীকে কোনো ধরনের জ্বরের ওষুধ বা প্যারাসিটামল একেবারেই দেওয়া যাবে না। এতে রোগীর অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে।

- দেহের তাপমাত্রা ও শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব না হলে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিতে হবে।

 

হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত না হওয়ার জন্য যা করণীয়

- প্রচ- গরমে কিছুক্ষণ পরপর পানি পান করতে হবে।

- বেশি ঘাম ঝরলে ডাবের বা স্যালাইনের পানি খেতে হবে।

- প্রচ- গরমে অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রমের কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

- ভারী কাজ করতে হলে কিছুক্ষণ পরপর স্যালাইনের পানি খেতে হবে।

- গরমে আরামদায়ক পোশাক পরতে হবে। ভারী কাপড় বা কালো রঙের পোশাক পরা যাবে না।

- প্রয়োজনে দিনে দুই-তিনবার গোসল করতে হবে।

- পর্যাপ্ত ভিটামিন ‘সি’যুক্ত ফলমূল ও খাবার খেতে হবে।

- উচ্চরক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

 

 

ডা. মহসীন কবির 

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, লেখক ও গবেষক

ইনচার্জ, ইনস্টিটিউট অব জেরিয়েট্রিক মেডিসিন

বাংলাদেশ প্রবীণহিতৈষী সংঘ, ঢাকা

[email protected]