আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ১১-০৫-২০১৯ তারিখে পত্রিকা

নানা সংকটে ঢাকা-বরিশাল নৌরুট

ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে বিলাসবহুল ২২ লঞ্চ

খান রফিক, বরিশাল
| শেষ পাতা

নৌপথে ঈদুল ফিতরের যাত্রা নির্বিঘœ করতে এবার আগেভাগেই প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীরা লঞ্চের টিকিট নিশ্চিতকরণে দৌড়ঝাঁপ চালাচ্ছেন। তাদের অভিযোগ তদবির ছাড়া লঞ্চের টিকিট পাওয়া দুষ্কর। লঞ্চ মালিকরা অবশ্য দাবি করেছেন, এবার ২২টি বৃহৎ লঞ্চ ঢাকা-বরিশাল নৌপথে ডাবল ট্রিপ দেওয়ায় দুর্ভোগ অনেকাংশে লাঘব হবে। এদিকে লঞ্চের মাস্টার ও সারেংরা জানিয়েছেন, ঈদ মৌসুম সত্ত্বেও এ রুটে পর্যাপ্ত বয়া, বাতি নেই। পন্টুন সংকটও তীব্র। এসব সমস্যা সমাধান না হলে ঈদে দুর্ভোগ বাড়বে।

শাহজালাল বিমানবন্দরে একটি বেসরকারি বিমানে কর্মরত বরিশালের বাসিন্দা মো. জুয়েল ঈদের টিকিটের জন্য এখনই ছুটছেন। টিকিট না পাওয়ার শঙ্কায় লঞ্চের কাউন্টারেও খোঁজ শুরু করেছেন তিনি। শুক্রবার বরিশাল নগরীর বিভিন্ন কাউন্টার ঘুরে দেখা গেছে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ ঈদ সার্ভিসের টিকিট সম্পর্কে খোঁজ নিচ্ছে। এমভি সুরভী লঞ্চ কাউন্টারে কথা হয় একাধিক যাত্রীর সঙ্গে। তারা জানান, কাউন্টার থেকে জানানো হয়েছে লঞ্চের টিকিট পেতে হলে আগে স্লিপ নিতে হবে। ওই স্লিপের ভিত্তিতে টিকিট দেওয়া হবে। কিন্তু গেল বছরও স্লিপ দেওয়া সত্ত্বেও টিকিট পাননি অনেকেই। যে কারণে লঞ্চের টিকিট পেতে তারা আগেভাগেই তদবির শুরু করেছেন।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থার ঢাকা-বরিশাল নৌযান রুট কমিটির সদস্য সচিব মো. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী জানান, তারা ২০ রোজায় ঈদের স্পেশাল সার্ভিসের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। তার আগে ঈদে লঞ্চযাত্রীদের সেবা কীভাবে আরও বাড়ানো যায় তা নিয়ে আলোচনা চলছে। তিনি বলেন, দক্ষিণাঞ্চলে তাদের ২২০ লঞ্চ রয়েছে। এর মধ্যে ঈদে ঢাকা-বরিশাল নৌপথে এবার সর্বোচ্চ ২২টি লঞ্চ ঈদ সার্ভিস দিতে পারে। টিকিট প্রাপ্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অনলাইনে সব টিকিট ছেড়ে দিলে সাধারণ মানুষ পাবে না। যে কারণে লঞ্চ মালিকরা নিজস্ব পন্থায় কিছু টিকিট ছাড়বে। তাছাড়া ঈদেও টিকিট তো হয় টেলিফোনে, কাউন্টারে ঘুরে পাওয়া যাবে না।

লঞ্চ মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় নেতা ও এমভি সুন্দরবন লঞ্চের স্বত্বাধিকারী সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, ১৮ মে সংগঠনের এজিএম রয়েছে। ওই সভায় ঈদ সার্ভিস নিয়ে আলোচনা হবে। এবার লঞ্চের সংখ্যা বেশি। ঈদে ডাবল ট্রিপে ২২টি লঞ্চ ঢাকা-বরিশাল রুটে চলতে পারে। টিকিট পাওয়া প্রসঙ্গে রিন্টু বলেন, তারা আগেভাগে স্লিপ নিয়ে এর ভিত্তিতে টিকিট দেন। স্লিপ অনুযায়ী টিকিট না পাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যে সংখ্যক কেবিন রয়েছে তার থেকে দ্বিগুণ স্লিপ পড়লে কি করার আছে। কেবিনের সংখ্যা তো বাড়ানো যায় না। সম্প্রতি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় তিনি ঈদের ছুটি কয়েক ধাপে দেওয়ার প্রস্তাব রাখেন। তাতে যাত্রীদের যেমন টিকিট পেতে সহজ হবে, তেমনি দুর্ভোগও কমবে। তবে লঞ্চের সংখ্যা বেশি তাই এবার টিকিট পেতে অনেক সহজ হবে।
এদিকে ঈদের আগে ঢাকা-বরিশাল রুটের নিরাপত্তা ও পন্টুন সংকটের দাবি তুলেছেন লঞ্চের মাস্টার ও সারেংরা। এমভি সুন্দবন-৯ এর মাস্টার মো. মজিবর রহমান বলেন, ঈদ এলেও ঢাকা-বরিশাল নৌপথের অনেক স্থানে মার্কা, বাতি নেই। বিষয়টি তারা পাইলট ইন্সপেক্টর মৌজে আলী সিকদারকে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এবার নতুন লঞ্চ এসেছে। ২২টি লঞ্চ ঈদে সার্ভিস দিতে পারে। গেল বছর ঈদে লঞ্চ চলেছে ১৮টি। তিনি বলেন, তাদের অন্যতম সমস্যা পন্টুন সংকট। ঈদের সময় ২২টি লঞ্চ এ পন্টুনে বার্দিং সম্ভব নয়। বর্তমানে যে পন্টুন রয়েছে তাতে ১৪ থেকে ১৫টি লঞ্চ ভেড়ানো যায়। বাকিগুলো একটির পেছনে আর একটি ঝুলতে থাকে। তারা বিষয়টি পোর্ট অফিসারকে অবহিত করে আরও দুইটি পন্টুন স্থাপনের আহ্বান জানিয়েছেন। টিকিটপ্রাপ্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, টিকিট অধিকাংশই ব্লাকে চলে যায়। যে কারণে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ হয়। সঠিক ব্যবস্থাপনা হলে টিকিটের এতটা সংকট থাকবে না। এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএ’র বরিশাল নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপপরিচালক আজমল হুদা মিঠু সরকার বলেন, গেল বছর ঈদ সার্ভিসের মতো এ বছরও একইভাবে লঞ্চ চলাচল করবে। সার্ভিসের আগে নৌপথের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ করা হবে। এ বিষয়ে শিগগিরই তারা সব সেক্টর নিয়ে সভা করবেন।