নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ডেন্টাল ক্লিনিকগুলোতে ভুয়া ডাক্তারের ছড়াছড়ি। দিন দিন ভুয়া চিকিৎসকদের দৌরাত্ম্য বেড়েই চলছে। চিকিৎসক হওয়ার সনদ না থাকলেও অনেকেই নিজেকে চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে। ওই সব ভুয়া চিকিৎসকের খপ্পরে পড়ে অনেক রোগীর জীবন হয়ে উঠছে সংকটাপন্ন। জানা গেছে, ৮ মে রাতে সিদ্ধিরগঞ্জের সানারপাড় রহিম মার্কেট (মৌচাক মোড়) এলাকায় অনুমোদনহীন হেলথ কেয়ার আধুনিক হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগী দেখার সময় ভুয়া ডাক্তার মো. তানভীর আহমেদ সরকার ও ম্যানেজার আবুল বাশারকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১১ এর একটি টিম। পরে তানভীরকে দুই বছরের বিনাশ্রম কারাদ- এবং বাশারকে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদ- প্রদান করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। ২০০৯ সালে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে বাণিজ্য বিভাগ হতে এইচএসসি পাস করেছিল তানভীর। তবে তার প্রেসক্রিপশনে সে দীর্ঘদিন নিজেকে একজন বড় মাপের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার পরিচয় দিয়ে আসছিল। পরে অনুমোদনহীন হেলথ কেয়ার আধুনিক হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারটি সিলগালা করে দেওয়া হয়।
এর আগে ২ এপ্রিল সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় ‘ফ্যামিলী ল্যাব হসপিটাল’ নামের একটি কিøনিকে র্যাবের অভিযানে ভুয়া ডাক্তার মো. নজরুল ইসলাম শেখকে একবছরের কারাদ- প্রদান করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। ওই ভুয়া ডাক্তারের নামের পাশে পদবীর ডিগ্রি হিসেবে লেখা ‘এমবিবিএস, সনোলজিষ্ট’। ৫ ফেব্রুয়ারি সিদ্ধিরগঞ্জের কদমতলী এলাকার ‘এম হোসেন জেনারেল হসপিটাল’ নামের হাসপাতালে র্যাবের অভিযানে আটক ভুয়া ডাক্তার ফাহমিদা আলমকে ছয় মাসের জেল ও হাসপাতালটি সীলগালা করে দেওয়া হয়। নিজেকে অভিজ্ঞ ডাক্তার পরিচয় দিয়ে ফাহমিদা আলম দিনের পর দিন প্রতারণা করে আসছিলেন রোগীদের সঙ্গে। প্রেসক্রিপশনে তার নামের পাশে পদবীর ডিগ্রি হিসেবে লেখা থাকত ‘এমবিবিএস, এফসিপিএস’।
এর আগে ২০১৭ সালের ১৩ জানুয়ারি বন্দর উপজেলার শাহী মসজিদ এলাকায় দুই ভুয়া চিকিৎসককে পৃথক মেয়াদে সাজা দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে হবিগঞ্জের বড় গ্রামের জয়নাল আবেদীনের ছেলে রুহুল আমিনকে ১৫ দিন ও সিরাজগঞ্জের কোরবান আলীর ছেলে কামাল হোসেনকে এক মাসের কারাদ- দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
২০১৬ সালের ১০ আগস্ট শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কে অবস্থিত ন্যাশনাল মেডিকেল সেন্টারে র্যাবের অভিযানে ভুয়া ডাক্তার গৌরি চাঁদ প-িত ওরফে সুবিরকে ভ্রাম্যমাণ আদালত দুই বছরের কারাদ- দেন। একই সঙ্গে আরও একলাখ টাকা জরিমানা করা হয়। দ-প্রাপ্ত ভুয়া ডাক্তার গৌরি চাঁদ প-িত ওরফে সুবিপর কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদী এলাকার সত্যেন্দ্র প-িতের ছেলে। ২০১৬ সালের ৮ জুন সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইল চৌধুরীবাড়ী বাসস্ট্যান্ডে জনস্বাস্থ্য জেনারেল হাসপাতালে মোবারক ইসলাম নামের এক ভুয়া ডাক্তারকে দুই বছরের কারাদ- দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় ভুয়া ডাক্তার মোবারক ইসলামের অফিসে তল্লাশি চালিয়ে বিপুল পরিমাণের বাংলাদেশ, ভারত ও চায়নার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের জাল সার্টিফিকেট ও সার্টিফিকেট তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। এ সময় জনস্বাস্থ্য জেনারেল হাসপাতালটিকে সিলগালা করে দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত।
২০১৫ সালের ২০ মে শহরের খানপুরে একটি অনুমোদনহীন ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে সীলগালা ও মো. আলীম কোরেশী ওরফে ড্যানি নামে ভুয়া ডাক্তারকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদ- সঙ্গে আরও ৫ হাজার টাকা দ- দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।