আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ১১-০৫-২০১৯ তারিখে পত্রিকা

রোগী দেখেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী

| প্রথম পাতা

আলোকিত ডেস্ক : ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং সপ্তাহের পাঁচ দিন ব্যস্ত থাকেন দেশ পরিচালনায়। তবে প্রধানমন্ত্রী হয়েও নিজ হাতে রোগীদের সেবা দিয়ে যাওয়ার ব্রত তিনি ত্যাগ করতে পারেননি। ডাক্তারি পেশার প্রতি সীমাহীন ভালোবাসার টানে সপ্তাহের একটি দিন চলে যান হাসপাতালে। প্রতি শনিবার হাসপাতালে গিয়ে ছুরি-কাঁচি হাতে তুলে নেন শেরিং। আর প্রধানমন্ত্রীকে চিকিৎসক হিসেবে পেয়ে খুশি রোগীরাও। শেরিং সপ্তাহের দিনগুলো ভাগ করে নিয়েছেন। পাঁচ দিন প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর সামলে প্রতি শনিবার সশরীরে হাসপাতালে উপস্থিত থেকে রোগী দেখেন, নিজ হাতে করেন অস্ত্রোপচার। সপ্তাহের অবশিষ্ট দিন, অর্থাৎ রোববার সারা দিন পরিবারের সঙ্গে কাটান। প্রতি শনিবার চিকিৎসকের পোশাক পরে হাসপাতালে ব্যস্ত সময় পার করেন শেরিং। এছাড়া ওই হাসপাতালে নার্স ও অন্যরা যে যার মতো কাজ করে যান। কেউ প্রধানমন্ত্রীকে ভ্রুক্ষেপ করেন না। শেরিং বলেন, এমনিতে কেউ ফুটবল খেলে কাটান সপ্তাহান্তের অবসর, কেউবা খেলেন গলফ। পুরো সপ্তাহের কর্মদিবস শেষে আমিও ক্লান্ত হয়ে পড়ি। আর তাই প্রতি শনিবার রোগীদের নিজ হাতে সেবা করি। এতে আমি আনন্দ পাই, আমার শারীরিক ও মানসিক চাপ কমাই।
ডাক্তারি এবং প্রধানমন্ত্রিত্বÑ দুটিকেই এক চোখে দেখেন শেরিং। এক মনে করার একটা ব্যাখ্যাও দিয়েছেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী। হাসপাতালে একজন ডাক্তার রোগীকে সারাতে ওষধ দেন কিংবা শরীরের বিভিন্ন অংশ পরীক্ষা করে দেখেন। প্রধানমন্ত্রীর কাজও একই। কারণ তাকে সরকারের বিভিন্ন পলিসি পরীক্ষা করে দেখতে হয়, সার্বিক অবস্থার উন্নতির চেষ্টা করতে হয়। ১৯৯১ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে পড়েছেন শেরিং। এমবিবিএস কোর্স শেষ করার পর একটি প্রশিক্ষণও নেন ময়মনসিংহে। এরপর তিনি জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে উচ্চশিক্ষা নেন। এরপর ডাক্তারি পেশায় শুরু হয় তার পথচলা। প্রায় এক দশক মাঠপর্যায়ে ডাক্তারি পেশায় ব্যস্ত ছিলেন তিনি।
২০১৩ সালে অনেকটা আকস্মিকভাবেই দেশটির জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেন তিনি। কিন্তু ভাগ্য সহায় হয়নি। তবে নির্বাচনের হার মেনে নিয়ে আবার মনোনিবেশ করেন ডাক্তারি পেশায়। এ সময় গ্রামেগঞ্জে চিকিৎসা দিয়ে বেড়িয়েছেন মানুষকে। এরপর ২০১৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী হন। প্রধানমন্ত্রী হয়ে দেশের স্বাস্থ্য খাতকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করেন তিনি; নেন নানামুখী পদক্ষেপ। নাগরিকদের সুন্দর স্বাস্থ্য আর সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যকে দেশের উন্নয়নের মাপকাঠি হিসেবে বিবেচনা করেন শেরিং। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর চিকিৎসা পেয়ে রোগীরাও খুশি। মূত্রাশয়ের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে এসেছিলেন বুমথাপ নামের এক রোগী। প্রায় ৫ ঘণ্টা ধরে তার অস্ত্রোপচার করেন প্রধানমন্ত্রী নিজে। প্রধানমন্ত্রীর এমন সেবা পেয়ে ভীষণ আনন্দিত এবং আশ্বস্ত বুমথাপ।
প্রতিদিন নিজেই গাড়ি চালিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে যান শেরিং। পথিমধ্যে পড়ে হাসপাতাল। কিন্তু সপ্তাহের পাঁচ দিন তো তাকে সামলাতে হয় দপ্তর। আর তাই সামলে নেন নিজের আবেগ। তিনি বলেন, হাসপাতাল দেখে আমার মনে হয় গাড়িটি ঘুরিয়ে যদি হাসপাতালে চলে যেতে পারতাম! ডয়েচে ভেলে