আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ১১-০৫-২০১৯ তারিখে পত্রিকা

চট্টগ্রামে চড়া মাছ ও সবজির বাজার

মনিটরিং টিমের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের লুকোচুরি

ষ চট্টগ্রাম ব্যুরো
| প্রথম পাতা

পবিত্র রমজানের শুরুতে চট্টগ্রামের বাজারগুলোতে নির্দিষ্ট দামের চেয়ে বেশি দামে সব ধরনের মাংস বিক্রি করা হচ্ছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা বাজার মনিটরিংয়ে এলে পণ্যের দাম তালিকা টাঙিয়ে দেওয়া হয়। বাজার মনিটরিং টিম চলে গেলে নয়ছয় দরে বিক্রি করা হয় গরু-মহিষ, ছাগলসহ, সব ধরনের মুরগির মাংস। এছাড়াও ব্যবসায়ীদের খুশিমতো মাছ ও সব ধরনের সবজি বিক্রি হচ্ছে। রমজানের প্রথম শুক্রবার ছুটির দিন সকালে নগরীর বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

এদিকে রমজান মাসজুড়ে বাজার মনিটরিং চলবে বলে জানিয়েছেন দায়িত্বে থাকা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তৌহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, শুক্রবার দুপুর আড়াইটার থেকে বাজার মনিটরিংয়ে বের হয়েছে মনিটরিং টিম। ভেজাল জিনিস জব্দ ও ধ্বংস করে জরিমানা করা হচ্ছে। 

শুক্রবার নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজারে গিয়ে দেখা যায়, গরুর মাংস ব্যবসায়ীরা খেয়াল-খুশিমতো দামে মাংস বিক্রি করছে। ১০-১৫টি গরুর মাংসের দোকান থাকলেও সেখানে দু-একটি দোকানের ভেতরে দামের তালিকা টাঙিয়ে রাখছে। দোকানের এক কোনায় বিশেষ কৌশলে তারা এমনভাবে মূল্য তালিকা টাঙিয়েছে যাতে ক্রেতাদের চোখে না পড়ে। আবার বাজার মনিটরিং টিম এলে তা দোকানের সামনে টাঙিয়ে রাখে। মাংস ব্যবসায়ীরা জানান, তারা বেঁধে দেওয়া দামে মাংস বিক্রি করছে। অবশ্য ক্রেতারা বলছে, নির্দিষ্ট দামের চেয়ে চড়া দামে গরুর মাংস বিক্রি করা হচ্ছে। ভ্যানগাড়িচালক দুলাল মিয়া রিয়াজউদ্দিন মাংসের দোকানে এসেছেন গরুর মাংস কিনতে। হাড় ছাড়া গরুর মাংস ৬৮০ টাকা বিক্রি করার কথা থাকলেও তাকে কিনতে হয়েছে ৭০০ টাকায়। 
দুলাল মিয়া আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, সারা দিন পরিশ্রম করি। শুক্রবার ভালো খাবার খেতে মাংস কেনা হয়েছে। মাংস দোকানিরা এক কেজি মাংস ৭৫০ টাকা চাইলেও দর কষাকষি করে অবশেষে ৭০০ টাকা দিয়ে এক কেজি মাংস নিলাম। যে দোকান থেকে দুলাল মিয়া মাংস কিনেছে সেই দোকানে কোনো মূল্য তালিকা দেখা যায়নি। এ বিষয়ে মাংস বিক্রেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ম্যাজিস্ট্রেট এলে মূল্য তালিকা টাঙানো হয়। এমনিতে ৭০০ টাকা দরে মাংস বিক্রি করা হয়। অন্যান্য মাংসের দোকানে টাঙানো মূল্য তালিকায় লেখা রয়েছে, গরুর মাংস হাড় ছাড়া কেজি ৬৮০ টাকা, হাড়সহ ৫৫০ টাকা, কলিজা কেজি ৫৮০ টাকা, মহিষের মাংস হাড় ছাড়া কেজি ৬৫০ টাকা, হাড়সহ কেজি ৫২০ টাকা, খাসির মাংস কেজি ৭৫০ টাকা। কিন্তু মূল্য তালিকা দামে মাংস কিনলে বিক্রেতারা পছন্দমতো মাংস দিচ্ছে না বলে অভিযোগ ক্রেতাদের। 
ক্রেতা আমির হোসাইন বলেন, দুই কেজি গরুর মাংস ৬৮০ টাকা কেজি দরে কিনলাম; কিন্তু আমার পছন্দমতো মাংস না দিয়ে তাদের ইচ্ছেমতো চর্বি মেরুদ-ের হাড় দিয়ে দুই কেজি পূর্ণ করে দিল। রাজধানী ঢাকায় প্রতি কেজি হাড় ছাড়া গরুর মাংস ৫২৫ টাকা দাম নির্ধারণ করে দিলেও চট্টগ্রামে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কেউই দাম নির্ধারণ করে দেননি বলে অভিযোগ ক্রেতা সাধারণের। এদিকে কাজির দেউড়ি বাজার, চকবাজার এবং বহদ্দারহাটের নয়ছয় দামে মাংস বিক্রি করার চিত্র দেখা গেছে। একইভাবে মুরগির দোকানেও বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে ক্রেতাদের অভিযোগের পাহাড়। আন্দরকিল্লা সাবএরিয়ার মুরগির দোকান খামারিতে ১২৫ টাকা কেজিতে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হলেও রিয়াজউদ্দিন বাজারের মুরগির দোকানে প্রতি কেজি ২০ থেকে ২৫ টাকা বাড়তি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। রিয়াজউদ্দিন বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও লেয়ার মুরগি কেজি ২৩০ টাকা, সোনালি মুরগি কেজি ২৬০-২৯৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও দেশি মুরগি কেজি ৪৮০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। এদিকে ওজনে কম দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে।
বুধবার চকবাজারে বাজার মনিটরিংয়ে গিয়ে ওজনে কম দেওয়ায় এক মুরগি বিক্রেতাকে ধরে ফেলেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। সেই সময় ডিজিটাল স্কেল ‘টেম্পারিংয়ের’ মাধ্যমে মুরগির কেজিতে ৩৫০ গ্রাম কম দেওয়ায় মুরগি বিক্রেতা দেওয়া আলী রেজাকে ২ হাজার টাকা জরিমানা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রেজওয়ানা আফরিন। শুক্রবার কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকার পরও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের সবজি। ক্রেতাদের অভিযোগ ব্যবসায়ীরা রমজান মাস এলে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বেশি দামে মালামাল বিক্রি করে। রিয়াজউদ্দিন বাজারে কাঁচা পেঁপে কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা, মুলা, বেগুন, পটোল, বরবটি, কাঁকরোল, ঢ্যাঁড়শ, ঝিঙে, চিচিঙা প্রতি কেজি ৬০ টাকা, টমেটো কাঁচামরিচ, তিতকরলা কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, লাউ ৫০ টাকা, কচুর লতি ৮০ টাকা কেজি, দেশি শসা ৮০ টাকা, ফার্মের শসা ৫০ টাকা কেজি। প্রতি ডজন ব্রয়লার ডিম ৯০ থেকে ৯৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাছের বাজারে দেখা গেছে, কোরাল কেজি ৫৮০ টাকা, ইলিশ ৬৫০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি, প্রতিকেজি রূপচাঁন্দা ছোট ৫০০ টাকা, বড় ১ হাজার টাকা, রুই, কাতল, মৃগেল ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি, নাইলোনটিকা ১৯০ টাকা, চিংড়ি মানভেদে ৫৫০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।