আজ বিশ্ব মা দিবস। মা দিবসে প্রত্যেকেই কামনা করেন তাদের মা যেখানে যেভাবে আছেন যেন ভালো থাকেন, সুস্থ থাকেন। অনেক সন্তান আছে যারা নিজেরই অজান্তে মা’কে কষ্ট দিয়ে থাকেন। সন্তান তা উপলব্ধি করে মায়ের কাছে ক্ষমাও চান। কারণ সন্তানের ভুল হতেই পারে। আবার অনেকের মা এই পৃথিবী ছেড়ে পরপারে চলে গেছেন। সেই মায়েদের সন্তানদের কামনা থাকে একটাই, মা যেন বেহেশতবাসী হন কিংবা মা যেন শান্তিতে থাকেন। আমাদের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের তারকারা মা দিবসে তাদের মায়েদের প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা জানিয়ে তাদের না বলা কথা প্রকাশ করেছেন। অনুলিখন করেছেন অভি মঈনুদ্দীন
মৌসুমী : প্রতিদিন কেন কখনও আয়োজন করে বলা হয় না মাগো তোমায় অনেক ভালোবাসি। আমি আমার মা-বাবার প্রথম সন্তান হিসেবে জন্মের পর থেকেই অনেক আদর, স্নেহ, মায়া-মমতায় আমি বেড়ে উঠেছি। মায়ের সঙ্গে সেই ছোটবেলা থেকেই আমার সখ্য। মায়ের আদর-স্নেহ, ভালোবাসায় প্রত্যেক সন্তানই বেড়ে ওঠে। আমার কাছে মনে হয় আমার মা আমাকে একটু বেশিই ভালোবাসতেন। তাই কখনোই আমার মা আমাকে চোখের আড়াল হতে দিতেন না। আমি যখন মিডিয়ার সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করলাম এবং পরবর্তী সময়ে চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করলাম, আমার মাই প্রতিটি মুহূর্তে আমার পাশে থেকে আমাকে উৎসাহ দিতেন। আমার প্রতি তিনি এতটাই সচেতন ছিলেনÑ আমাকে কীভাবে ভালো লাগবে, আমার অভিনয় কীভাবে ভালো হবেÑ সেদিকে তার সজাগ দৃষ্টি থাকত। এখন আম্মুর বয়স হয়েছে। টুকটাক কিছু অসুস্থতা লেগেই থাকে। তারপরও আম্মু যতটুকু সময় পান আমার কাজগুলো দেখার চেষ্টা করেন। আমাকে উৎসাহ দেওয়ার চেষ্টা করেন। ছোটবেলায় আম্মুর আদরে-ভালোবাসায় আমি বেড়ে উঠেছি, সেই ভালোবাসার মায়াজালেই আমার আম্মুকে সারাটা জীবন আমি আমার কাছে রাখতে চাই।
পূর্ণিমা : মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম নেওয়ায় আমি আজকের পূর্ণিমা। তাই মায়ের প্রতি অনেক শ্রদ্ধা, ভালোবাসা আর কৃতজ্ঞতা। মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করি তিনি যেন আমার মাকে সবসময় ভালো রাখেন, সুস্থ রাখেন। সে মায়েরই মেয়ে আমি নিজেও একজন মা। তাই মায়ের কষ্টটা এখন খুব ভালোভাবে বুঝতে পারি। মায়ের কোনো তুলনা হয় না। না জেনে না বুঝে মাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি। কিন্তু আর কখনও মাকে কষ্ট দিতে চাই না। সবাই আমার মায়ের জন্য দোয়া করবেন। আর আমার বাবাকে যেন আল্লাহ বেহেশতবাসী করেন সে দোয়াও চাই সবার কাছে।
পপি : আজ আমার জীবনের অন্যরকম দিন। কারণ চলচ্চিত্রে আমার সাফল্যের জন্য আমার মা আজ সকালে ‘গরবিনী মা সম্মাননা’য় ভূষিত হতে যাচ্ছেন। তাই আজকের দিনটা আমার জীবনের স্মরণীয় একটি দিন হতে যাচ্ছে। আর আজকের দিনে বারবার শুধু বলতে চাই, আম্মু আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। তোমাকে নানা সময় অনেক কষ্ট দিয়েছি। ক্ষমা করে দিও। আর আমাদের ভাই-বোনদের তুমি তোমার আশীর্বাদের মধ্যে রেখ সবসময়। তুমি ছাড়া আমার এত সুন্দর জীবন কখনোই হয়ে উঠত না। আমি এর আগে অভিনয়ের জন্য তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হয়েছি। কিন্তু আজ মা আমার জন্য সম্মাননা পাচ্ছেন, এটাই আমার জীবনের শ্রেষ্ঠতম অর্জন।
তারিন : আমার আম্মুর নাম তাহমিনা বেগম, আমার জীবনের আদর্শ। আমার শক্তি, আমার অনুপ্রেরণা, আমার সবকিছুই আমার মাকে ঘিরে। আমার জীবনে মায়ের অবদান বলে শেষ করা যাবে না। ছোটবেলা থেকে আমার বেড়ে ওঠা, আমার শিক্ষা, আমার নৃত্যশিল্পী হয়ে ওঠা, সংগীতশিল্পী হয়ে ওঠা, সর্বোপরি একজন অভিনেত্রী হয়ে ওঠার পেছনে আমার মায়েরই অবদান সবচেয়ে বেশি। মায়ের কাছেই আমার গানে হাতেখড়ি। যখন কোনো স্ক্রিপ্ট হাতে পেতাম তখন মাই হতেন আমার কোআর্টিস্ট। অভিনয়ের চর্চা করতাম এভাবেই। আর এভাবেই আমার অভিনেত্রী হয়ে ওঠা। আমার মা খুব মেধাবী ছিলেন। তার ইচ্ছে ছিল বলেই আমি আজ অভিনেত্রী তারিনে পরিণত হতে পেরেছি। আমার মা যেভাবেই থাকুন, সবসময়ই যেন আল্লাহ ভালো রাখেন এ দোয়া চাই সবার কাছে।
শাহনূর : আমার মা তাসলিমা খানম কিছুদিন আগে গুরুতর অসুস্থ ছিলেন। এই পৃথিবীতে আমার মায়ের মতো আপন আর কেউ নেই। তাই মায়ের এমন অসুস্থতায় আমি প্রায় পাগলই হয়ে গিয়েছিলাম। যাই হোক সবার দোয়ায় আমার আম্মু এখন বেশ সুস্থ আছে। সত্যি বলতে কী আম্মুই আমার পৃথিবী। আম্মুর কাছেই আমি প্রথম নাচ ও গান শিখি। আমার মাকে আমি কখনোই কোনো কারণে কষ্ট দিইনি। যদিও বা ভুল করে দিয়ে থাকি আম্মু যেন আমায় ক্ষমা করে দেন। আমার খুব ইচ্ছে করে পুরো পৃথিবীর সবটুকু সুখ আম্মুকে দিতে।
বুবলী : সত্যি বলতে কী মা এমন একজন মানুষ প্রতিটি মানুষ তার মনের ভেতরে শ্রদ্ধার স্থানে রেখে দেন। আমার আজকের অবস্থানের পেছনে আম্মুরই অবদান সবচেয়ে বেশি। আমি যখন সিনেমাতে কাজ শুরু করি তখন পরিবার থেকে প্রতিবন্ধকতা ছিল। আম্মুর মত ছিল না। কিন্তু আমি আম্মুকে কথা দিয়েছিলাম যে আমি এমন কিছু করব না যার জন্য তোমাকে বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। আলহামদুলিল্লাহ আমি আম্মুকে দেওয়া কথা রেখেছি, এটাই আমার ভালো লাগা।
আঁখি আলমগীর : আমি খুব ভাগ্যবান একজন সন্তান। আমার বাবার কারণে আমাদের বাসায় অনেক অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রী আসতেন। আবার আমার মায়ের কারণে অনেক কবি-সাহিত্যিকের আনাগোনা ছিল বাসায়। আমার সংগীত জীবনের পথচলায় আমার বাবা-মা সবসময়ই আমার পাশে ছিলেন এবং এখনও আছেন। আমার মায়ের লেখা অনেক গান আছে। মায়ের লেখা গান নিয়ে আমার গাওয়া এবং বিশিষ্ট শিল্পী যারা গেয়েছেন সেই হিট গানগুলো নিয়ে একটি অ্যালবাম করার পরিকল্পনা করছি। এটা আমার মায়ের প্রতি, মায়ের লেখা গানের প্রতি ভালোলাগা ভালোবাসা থেকেই করব। আমার মায়ের জন্য সবাই দোয়া করবেন, মা যেন সবসময় ভালো থাকেন সুস্থ থাকেন।
মোজেজা আশরাফ মোনালিসা : আম্মুই আমার জীবনের সব। আম্মুই আমার জীবনের চলার পথের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা, শক্তি। আম্মুই আমার জীবনকে গড়ে দিয়েছেন। যে কারণে আল্লাহর অশেষ রহমতে আমি দেশের বাইরে এসেও জীবনকে পরিচালিত করতে পারছি। আমার জীবনে আম্মুর শিক্ষা, আম্মুর আদর্শ, আম্মুর ভূমিকা অপরিসীম। আম্মু আমাকে অনেক ভালোবাসেন, আদর করেন, আর এটা আমি এখন খুব মিস করি। প্রতিদিনই এখন আর আগের মতো বলতে পারি না মাগো আমি তোমায় অনেক ভালোবাসি। তারপরও বারবার বলতে ইচ্ছে করে আমার মাকে আমি আমার জীবনের চাইতেও বেশি ভালোবাসি। আমার আম্মু সবসময়ই ভালো থাকুক, সুস্থ থাকুকÑ এই দোয়াই করি।
মেহজাবিন চৌধুরী : আমার আম্মু মিসেস গাজালা চৌধুরী। আমার জীবনে চলার পথের প্রতিটি পদক্ষেপে আম্মু আমাকে সাহস জুগিয়েছেন। অভিনয় জীবনের আজকের সাফল্যের পেছনে আম্মু আমার প্রতিটি পদক্ষেপে সঙ্গে ছিলেন। যে কারণেই কিন্তু আমি আজকের মেহজাবিন হতে পেরেছি। না জেনে না বুঝে আম্মুকে কষ্ট দিয়েছি। তবে তাকে অনেক বেশি কষ্ট দিইনি আমি। তারপরও আম্মুর কাছে সরি। আম্মু প্রায়ই তার শরীরের নানা সমস্যা নিয়ে কথা বলেন। তার মাথাব্যথা করে, কোমর ব্যথা করে, ডায়াবেটিসের সমস্যা। তাই এসব কথা যখন শুনি তখন মনে হয় নিজের শরীরটা কেটে যদি আম্মুকে দিয়ে দিতে পারতাম, তাতেও যদি আম্মু পুরোপুরি সুস্থ থাকতেন আমি শান্তি পেতাম।
ইশানা : আমার অভিনয় জীবন, আমার ব্যক্তি জীবন এবং আমাকে সম্পূর্ণরূপে একজন মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আমার মায়ের ভূমিকা অপরিসীম। প্রতিটি মুহূর্তে আমি আমার আম্মুকে পাশে পাই নানা বিপদে-আপদে কিংবা যেকোনো কিছুতেই। আমার জীবনের চলার পথের প্রতিটি পদক্ষেপে আম্মুর গাইডলাইন, আম্মুর সাপোর্ট আমি ভীষণভাবে নিয়ে থাকি। চেষ্টা করি আম্মু যেন কোনো কারণে আমার কাছ থেকে কষ্ট না পান। তারপরও যদি কষ্ট পেয়ে থাকেন আম্মু যেন আমাকে ক্ষমা করে দেন। আমি সারাটি জীবন আমার আম্মুর পাশে পাশেই থাকতে চাই।
লিজা : আমার সঙ্গে আমার আম্মুর সম্পর্কটা একটু অন্যরকম মধুর সম্পর্ক। আমার বাবার সঙ্গেও। তাদের দু’জনকে সবসময়ই আমার এটা ওটা গিফট করতে ভীষণ ভালোলাগে। আম্মুর সঙ্গে ঝগড়া করি, আবার কিছুক্ষণ পর সরিও বলি। মা-মেয়ের সম্পর্ক যেমন মধুরতর হয় তেমনই সম্পর্ক আমাদের দু’জনের। আম্মুর হাতের রান্না করা খাবার ছাড়া আমার আর কোনো খাবারই একদমই ভালো লাগে না। তাই যখন শো’র কারণে দেশে-বিদেশে থাকতে হয় তখন খাওয়া নিয়ে আমার খুব সমস্যায় পড়তে হয়। আম্মু সবসময়ই আমার গান শোনেন। আমার গানের মধ্যেই আম্মু অন্যরকম সুখ খুঁজে পান। আমার আম্মু-আব্বু আমাকে নিয়ে গর্ব করেন সবসময়। এটা আমাকে পুলকিত করে। আমি সবসময়ই চেষ্টা করব আমার কারণে যেন কখনও তারা কষ্ট না পান।
জিনিয়া জাফরিন লুইপা : আম্মু বুঝতে পেরেছিলেন আমাকে দিয়ে গানটাই ভালোভাবে করিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে। তাই আম্মুর শতভাগ চেষ্টায় আমি নিজেকে আজকের একজন সংগীতশিল্পীতে পরিণত করতে পেরেছি। আম্মুর সংস্কৃতির নানা ক্ষেত্র সম্পর্কেই সবসময় আগ্রহ প্রকাশ করেছেন এবং জানেনও বটে। তবে তিনি আমার মধ্যে সংগীতের প্রতি অনুরাগটা বেশি দেখেছিলেন বলেই আমাকে সংগীতশিল্পী হিসেবে গড়ে তুলেছেন। আমি মাকে জীবনে একবারই অনেক বড় কষ্ট দিয়েছি। বুঝতে পেরেছিলাম যে কষ্ট দিয়েছি। কিন্তু এটাও সত্যি পরবর্তী সময়ে তা সবার জন্যই মঙ্গল হয়েছে। এখন আমরা পরিবারের সবাই বেশ ভালো আছি, আলহামদুলিল্লাহ। আর মা দিবসে আম্মুর প্রতি অনেক অনেক ভালোবাসা। আমার আম্মু পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ আম্মু।
ওমর সানী : বেশ কয়েক বছর আগে আমার মা আল্লাহর কাছে চলে গেছেন। সবসময়ই মায়ের জন্য দোয়া করি আল্লাহ যেন আমার মা-বাবাকে বেহেশত নসিব করেন। দোয়া ছাড়া তো আসলে এখন আর কিছুই করার নেই। আমার জীবনের চলার প্রতিটি পদক্ষেপে মাকে খুব মিস করি। মা যখন বেঁচে ছিলেন তখন অনেক দেরিতে শুটিং থেকে বাসায় ফেরা হতো আমার। তখন মনে মনে ভাবতাম সবাই রাতের খাবার খেয়ে ফেললেও আমার মা নিশ্চয়ই খাননি। ঠিকই বাসায় ফিরে দেখতাম মা আমার জন্য অপেক্ষা করছেন। আসলে মায়ের সম্পর্কে বলে শেষ করা যাবে না। মা যে আমার জীবনে কী ছিলেন তা বলে বোঝাতে পারব না। সবাই আমার মা-বাবার জন্য দোয়া করবেন।