হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলায় প্রথম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে বখাটে এক কিশোরের বিরুদ্ধে। ধর্ষণের ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে শিশুটির অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। শুক্রবার সন্ধ্যারাতে উপজেলার পুকড়া ইউনিয়নের কাকুড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এদিকে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায় এক কিশোরীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে দুই যুবকের বিরুদ্ধে। কোলা পেতœীপাড়া গ্রামে একই রাতে এ ঘটনা ঘটে। তাছাড়া শেরপুরের নকলায় প্রথম শ্রেণিতে পড়ুয়া দুই শিশুর অভিযোগে শামীম মিয়া নামে এক কিশোর ও প্রেমের ফাঁদে অপহরণ করে ৯ম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগে জাহাঙ্গীর আলম নামে আরও এক কিশোরকে গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করেছে পুলিশ। প্রতিনিধি ও বিডিনিউজের খবরÑ
হবিগঞ্জ : স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাজপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির এক ছাত্রীকে শুক্রবার রাতে মুখে গামছা বেঁধে তুলে নিয়ে যায় কাকুড়া গ্রামের মৃত আরজত আলীর বখাটে ছেলে জাহাঙ্গীর মিয়া। শিশুটিকে বাড়ির পার্শ্ববর্তী নির্জন স্থানে নিয়ে ধর্ষণের পর ফেলে চলে যায়। পরে ওই শিশু
অসুস্থ অবস্থায় ঘরে এসে বসে থাকে। কিছুক্ষণ পর তার মামা বাড়িতে এসে রক্তক্ষরণের বিষয়টি দেখতে পান। এক পর্যায়ে রাত ১২টায় তাকে হবিগঞ্জ আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।
নির্যাতনের শিকার কিশোরীর স্বজনরা জানান, হাসপাতালে আসার পর গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. আরশেদ আলীর সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি আসতে অপারগতা প্রকাশ করেন। প্রায় ১ ঘণ্টা পর ওই ডাক্তারের বাসায় গিয়ে দীর্ঘক্ষণ ধরে অনুরোধ করার পর তিনি এসে মেয়েটিকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। পরবর্তী সময়ে অর্থকড়ি এবং অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করে রাত সোয়া দুইটায় তাকে নিয়ে সিলেটের উদ্দেশে রওনা হন স্বজনরা।
হবিগঞ্জ আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক মেহেদী হাসান বলেন, মেয়েটির রক্তক্ষরণ বন্ধ হচ্ছিল না। অবস্থা বেগতিক হওয়ায় তাকে সিলেটে প্রেরণ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে বানিয়াচং থানার ওসি মো. রাশেদ মোবারক বলেন, ঘটনাটি আমাদের মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে। দোষী ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রেখেছে পুলিশ। এ ব্যাপারে তদন্তপূর্বক দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে কথা বলতে ডা. আরশেদ আলীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ ও শারীরিক ইনজুরির কারণে সম্পূর্ণ অচেতন করে মেয়েটিকে চিকিৎসা দিতে হবে। তাই তাকে সিলেটে রেফার করা হয়েছে। বিলম্বে আসার ব্যাপারটি তিনি অস্বীকার করেন।
ঝিনাইদহ : কালীগঞ্জ থানার ওসি ইউনুস আলী বলেন, রাত ১০টার দিকে প্রকৃতির ডাকে ভিকটিম ঘরের বাইরে গেলে আগে থেকে ওৎ পেতে থাকা দুই যুবক তাকে মুখ চেপে ধরে তুলে নিয়ে যায়। বাড়ি থেকে সামান্য দূরে মাঠে নিয়ে ওই দুই যুবক তাকে ধর্ষণ করে। পরে ওড়না দিয়ে মুখ ও হাত-পা বেঁধে সেখানে ফেলে রেখে যায়। রাতে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পাওয়া যায়নি। শনিবার সকালে গ্রামের লোকজন মাঠে কাজ করতে গিয়ে তাকে দেখে পুলিশে খবর দেয়। ওসি বলেন, পুলিশ মেয়েটিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। তাকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় মেয়েটির বাবা দুইজনকে আসামি করে কালীগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেছেন।
শেরপুর : ধর্ষিতা দুই শিশুর জবানবন্দি রেকর্ড করার জন্য তাদের শেরপুর আদালতে পাঠানো হয়েছে। ভুক্তভোগীদের মেডিকেল পরীক্ষার জন্য শেরপুর সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। দুই শিশু ধর্ষণে অভিযুক্ত শামীম মিয়া উপজেলার বানেশ্বরদী ইউনিয়নের ভূরদী নয়াপাড়া এলাকার নওসেন আলীর ছেলে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ধর্ষক শামীম মিয়া ওই শিশুদের লিচু দেওয়ার কথা বলে প্রতিবেশি ফারুক মিয়ার লিচুর বাগানে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করে। শিশুদের ভয়ভীতি দেখিয়ে বিষয়টি পরিবারের লোকজনের কাছে জানাতে নিষেধ করায় শিশুরা কাউকে জানায়নি। কিন্তু শিশুদের চলন বলনে ব্যতিক্রম দেখে ও শারীরিক অবস্থার অবনতি লক্ষ করে পরিবারের লোকজন জিজ্ঞাসা করলে শিশুরা ধর্ষণের বিবরণ দেয়। পরে শুক্রবার শিশুদের অভিভাবকরা থানায় অভিযোগ করলে তাৎক্ষণিক পুলিশি অভিযান চালিয়ে শামীম মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং শনিবার দুপুরের দিকে তাকে আদালতে প্রেরণ করা হয়।
অন্যদিকে মধ্য নকলা এলাকার নবম শ্রেণিতে পড়–য়া এক শিক্ষার্থীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে রাজধানী ঢাকার অজ্ঞাত এক বাড়িতে রেখে ধর্ষণ করার অভিযোগে রুনিগাঁও এলাকার আবদুস সাত্তারের ছেলে জাহাঙ্গীর আলমকে শুক্রবার গ্রেপ্তারসহ ভিকটিমকে উদ্ধার করে পুলিশ।
নকলা থানার ওসি কাজী শাহনেওয়াজ উভয় বিষয়ে সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। ধর্ষণের শিকার ২ শিশুসহ নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য জেলা সদর হাসপাতালে এবং জবানবন্দি নেওয়ার জন্য শেরপুর আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।