আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ১২-০৫-২০১৯ তারিখে পত্রিকা

শ্রমিক সংকটে মাঠে নষ্ট হচ্ছে ধান

কালিয়াকৈর ও উল্লাপাড়ায় বাম্পার ফলন

আলোকিত ডেস্ক
| দেশ

বোরো ধান কাটার ভরা মৌসুমে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে চলছে শ্রমিক সংকট- আলোকিত বাংলাদেশ

গাজীপুরের কালিয়াকৈর ও সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। এখন চলছে বোরো ধান কাটার ভরা মৌসুম। কিন্তু শ্রমিক সংকটে বিপদে পড়েছেন চাষিরা। এমনিতেই প্রতি বছর বোরো মৌসুমে ধান কাটা শ্রমিকের মজুরি বেড়ে যায়। এ বছর শ্রমিক সংকটের কারণে মজুরি বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। অথচ মজুরি বাড়িয়ে দিয়েও মিলছে না শ্রমিক। তাই মাঠের পর মাঠে পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে পাকা ধান। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর
কালিয়াকৈর : গাজীপুরের কালিয়াকৈরে চলছে বোরো ধান কাটার ভরা মৌসুম। বোরো ধানের বাম্পার ফলন হলেও এক মণ ধানে মিলছে না একজন শ্রমিক। বাজারে ধানের দাম কম ও ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে শ্রমের মজুরি বৃদ্ধি পাওয়ায় চরম হতাশায় ভুগছেন কৃষক। এ বছর শ্রমিকের মজুরি বেশি হওয়ায় বাধ্য হয়েই অনেক স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও নারীও ধান কাটার কাজ করছেন। উপজেলা কৃষি অফিস ও কৃষক সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর কালিয়াকৈর উপজেলা ও কালিয়াকৈর পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় ১০ হাজার ৩৯৫ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ করা হয়েছে। এটি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৫ হেক্টর বেশি। বর্তমানে একজন শ্রমিকের তিন বেলা খাবারসহ দৈনিক মজুরি দিতে হচ্ছে ৮৫০ থেকে ৯৫০ টাকা। জমি চাষ, সেচ, চারা, সার, কীটনাশক, রোপণ ও শ্রমিকসহ কৃষকের ধান কাটা ও মাড়াইয়ে প্রতি মণে খরচ হচ্ছে ১ হাজার টাকার উপরে। বর্তমানে বাজারে প্রতিমণ ধান বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা। শ্রমের মজুরি বৃদ্ধি ও ধানের বাজার মূল্য অনেক কম থাকায় কৃষকদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। এ বছর শ্রমিকের মজুরি বেশি হওয়ায় বাধ্য হয়েই অনেক স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও নারী ধান কাটার কাজ করছেন। এসব কারণে বোরো ধানের আবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন এখানকার কৃষক। কৃষকদের অভিযোগ, সংশ্লিষ্টরা ধানের বাজার, শ্রম বাজার এবং সার ও কীটনাশকের মূল্য সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে না। এছাড়াও স্থানীয় ব্যাপারীরা সিন্ডিকেট করে কৃষকের কাছ থেকে কম দামে ধান কিনে বিভিন্ন এলাকায় আসা ব্যাপারীদের কাছে বেশি দামে বিক্রি করছেন। এসব কারণে কৃষক ধান চাষ করে বিপদে পড়েছেন। 
চাপাইর ইউনিয়নের বড়ইবাড়ি এলাকার কৃষক আওলাদ হোসেন ও রুমান হোসেন এবং শ্রীফলতলী ইউনিয়নের লতিফপুর উত্তরপাড়া এলাকার কৃষক নজুমউদ্দিন, নিজন উদ্দিনসহ অনেকেই জানান, ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে শ্রমের মজুরি বৃদ্ধি পেয়েছে, এরপর আর কমেনি। এছাড়া ধানের বাজার মূল্য অনেক কম এবং জমি চাষ, সেচ, চারা, সার, কীটনাশকে খরচ বেশি। এসব কারণে লোকসান গুনতে হচ্ছে। এতো লোকসান দিয়ে আর বোরো আবাদ না করার কথা ভাবছেন তারা। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আশীষ কুমার কর বলেন, চলতি বোরো মৌসুমে এখানে ১০ হাজার ৩৯৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। শ্রমিক খরচসহ আনুষঙ্গিক খরচ বেশি হওয়ায় উৎপাদন খরচ বেশি হচ্ছে। এজন্য কৃষকদের বোরো আবাদ যান্ত্রিকীকরণের পরামর্শ দিচ্ছি। তবে এখানে শ্রমবাজার ও ধানের বাজার নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা নেই বলে জানান তিনি। 
উল্লাপাড়া : সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। কিন্তু শ্রমিক সংকটে বিপদে পড়েছেন চাষিরা। এমনিতেই প্রতি বছর বোরো মৌসুমে ধান কাটা শ্রমিকের মজুরি বেড়ে যায়। এ বছর শ্রমিক সংকটের কারণে মজুরি বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। বর্তমানে মাঠে ধান কাটতে দিন চুক্তিতে প্রতি শ্রমিককে দিতে হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। মজুরি বাড়িয়ে দিয়েও মিলছে না শ্রমিক। মাঠের পর মাঠে পড়ে নষ্ট হচ্ছে পাকা ধান। উল্লাপাড়ার বেতবাড়ি গ্রামের চাষি আবু বক্কর সিদ্দিকী জানান, গেল বছরগুলোর তুলনায় এবার বোরো মৌসুমে ধানের দাম কম। বাজারে নতুন ধান বিক্রি হচ্ছে প্রতিমণ ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা। ফলে এক মণ ধান বিক্রি করে একজন শ্রমিকের মজুরি দিতে হচ্ছে। তার ওপর বাজারে ধানের ক্রেতাও কম। অনেক চাষি বিক্রি করতে না পেরে বাজার থেকে ধান বাড়ি ফিরিয়ে নিচ্ছেন। ভ্যান ভাড়া গুনতে হচ্ছে ঘরের টাকা থেকে। উপজেলার পূর্বদেলুয়া গ্রামের চাষি রায়হান আলী জানান, তার ৫ বিঘা জমির ধান পেকে মাঠেই পড়ে রয়েছে। কিন্তু দ্বিগুণ মজুরি দিয়েও তিনি গত দুদিনে একজন শ্রমিকও সংগ্রহ করতে পারেননি। ফলে ধান ঘরে তোলার বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। একই কথা বললেন শংকরহাটি গ্রামের বাঞ্ছারাম সরকার ও কানসোনা গ্রামের আব্দুস সাত্তার। ধান কাটা শ্রমিক সংকট অব্যাহত থাকলে তাদের প্রচুর পাকা ধান মাঠেই পড়ে নষ্ট হয়ে যাবে। আর এতে প্রচুর লোকসান গুনতে হবে চাষিদের। 
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসের সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা আজমল হক বলেন, এ বছর উল্লাপাড়া উপজেলায় ৩০ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে। মাঠে একসঙ্গে সব ধান পেকে যাওয়ায় শ্রমিকের টান পড়েছে। অনেক কৃষি শ্রমিক এখন পেশা পরিবর্তন করে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, অটোরিকশা ও অটোভ্যান চালাচ্ছেন। 
এটাও শ্রমিক সংকটের একটা কারণ। তবে কৃষি বিভাগ কৃষকদের ভর্তুকি দিয়ে মাঠে ৯টি ধান কাটা মেশিন (কম্বাইন্ড হারভেস্টার) ছেড়েছে। এতে কৃষকরা কিছুটা হলেও উপকৃত হবেন বলে আশা প্রকাশ করেন এ কর্মকর্তা।