আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ১৫-০৫-২০১৯ তারিখে পত্রিকা

আদালতের পর্যবেক্ষণ আমলে নিন

ভেজাল খাদ্যপণ্য প্রতিরোধ

| সম্পাদকীয়

দেশে ভেজাল পণ্যের মাত্রা আশঙ্কাজনক পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ছোট-বড় সব উৎপাদন সংস্থা কমবেশি ভেজাল বিস্তারে নিয়োজিত। সম্প্রতি বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) পরীক্ষায় দেখা যায়, ৫২টি খাদ্যপণ্য পরীক্ষায় পুরোপুরি উত্তীর্ণ নয়। এরপর এসব পণ্য বাজার থেকে তুলে নিতে হাইকোর্টে রিট করে কনসাস কনজ্যুমারস সোসাইটি (সিসিএস)। রিটের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত যে রায় প্রদান করেন, তা অত্যন্ত সময়োপযোগী এবং দৃষ্টান্তমূলক। খাদ্য নিরাপত্তায় কোনো আপস সহনীয় নয় অভিমত দিয়ে বিএসটিআই পরীক্ষায় নিম্নমানের ৫২ খাদ্যপণ্য অবিলম্বে বাজার থেকে প্রত্যাহার করতে এবং এসব খাদ্যপণ্যের ক্ষেত্রে আইন অনুসারে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এসব খাদ্যপণ্য উৎপাদন, বিক্রি ও সরবরাহে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিতেও বলা হয়েছে। একই সঙ্গে ভেজাল খাদ্যপণ্য বাজার থেকে দ্রুত প্রত্যাহার করে এ বিষয়ে ২৩ মে প্রতিবেদন দাখিল করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি সরকার, সরকারি দল ও প্রধানমন্ত্রীকে মাদক নির্মূলের মতো ভেজাল খাদ্যপণ্যের বিরুদ্ধেও যুদ্ধ অথবা প্রয়োজনে জরুরি অবস্থা ঘোষণার অনুরোধ জানিয়েছেন হাইকোর্ট।
এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়, হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ এবং আদেশে জনমানসের ভাবনারই প্রতিফলন ঘটেছে। লক্ষণীয়, মাত্রাতিরিক্ত ভেজাল খাদ্যপণ্যের দরুন অসুখ-বিসুখ বিপুল বিস্তার ঘটেছে। ফলে চিকিৎসার ব্যয় মেটাতে গিয়ে অনেক পরিবারকেই অন্য মৌলিক অধিকারগুলো সংকুচিত করতে হয়। জনস্বাস্থ্যও দারুণ সংকটে পড়েছে। দেশে যে রোগ-শোকের প্রকোপ কত বেড়েছে ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলো তার প্রমাণ দেয়। অবস্থাদৃষ্টে প্রতীয়মান, ভেজাল খাদ্যপণ্য আমাদের একটি অসুস্থ জাতিতে পরিণত করতে চলেছে। এ অবস্থা কিছুতেই বিদ্যমান থাকা উচিত নয়। সবচেয়ে পরিতাপের বিষয় হলো, অনেক নামিদামি কোম্পানির খাদ্যপণ্য মান বজায় রাখছে না। এ অবস্থায় কোম্পানিগুলোর প্রতি তীব্র আস্থার সংকট তৈরি হওয়া স্বাভাবিক। যে কোম্পানি নিজ দেশের নাগরিকদের মানসম্পন্ন খাদ্যপণ্য সরবরাহ করতে পারে না, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে তারা একঘরে হতে বাধ্য। অর্থাৎ দেশে অর্থনীতির জন্যও ভেজাল খাদ্যপণ্য উৎপাদন সহায়ক হতে পারে না।
ভেজাল নিয়ন্ত্রণে সরকারি সংস্থাগুলো বিশেষ মনিটরিং ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। এ বিষয়ে আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, খাদ্যে ভেজাল নিয়ন্ত্রণে শুধু রমজান মাসেই অভিযান চালানো যথেষ্ট নয়। খাদ্যে ভেজালের বিরুদ্ধে সারা বছরই অভিযান অব্যাহত রাখা উচিত। খাদ্যপণ্যের ভেজাল নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলা হয়, শুধু নিজেদের কর্মকর্তা মনে না করে, দেশপ্রেমিক নাগরিক ও জনগণের প্রতি ভালোবাসা থেকে দায়িত্ব পালন করা উচিত। আমরা আশা করব, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আদালতের এ পর্যবেক্ষণ হৃদয়ঙ্গম করতে সক্ষম হবে। হ