আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ১৫-০৫-২০১৯ তারিখে পত্রিকা

রপ্তানি সহায়তায় নতুন ৪৯ বহুমুখী পাট পণ্য

সাখাওয়াত হোসেন
| অর্থ-বাণিজ্য

পাট থেকে এখন প্রায় সবই তৈরি হচ্ছে। পাট প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে তৈরি হচ্ছে পলিথিনের আদলে ব্যাগ। হচ্ছে পাটের শাড়ি, শার্ট। হচ্ছে ডেকোরেটেড ফ্রুট বক্স। পাটের বহুমুখীকরণের মাধ্যমে তৈরি পণ্য এরই মধ্যে রপ্তানির বড় অংশ দখলে নিয়েছে। দেওয়া হচ্ছে রপ্তানিতে ভর্তুকি বা নগদ সহায়তা। এরই ধারাবাহিকতায় বড় হচ্ছে বহুমুখী পাট পণ্যের রপ্তানি সহায়তাপ্রাপ্ত পণ্য তালিকা।

সম্প্রতি বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বহুমুখী পাট পণ্যের তালিকায় থাকা পূর্বের ২৩২টি পণ্যের সঙ্গে যুক্ত হলো আরও ৪৯টি নতুন পণ্য। ফলে বর্তমানের বহুমুখী পাট পণ্যের তালিকায় রপ্তানিতে ভর্তুকি বা নগদ সহায়তা পাবে মোট ২৮১টি পণ্য। একই সঙ্গে বহুমুখী পাট পণ্যের সংজ্ঞা নির্ধারণেও অনুরোধ জানানো হয়েছে। 
সম্প্রতি বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত এক চিঠিতে বলা হয়েছে, বহুমুখী পাট পণ্যের সরকারি আর্থিক সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তির লক্ষ্যে পাট পণ্যের একটি সার্বজনীন সংজ্ঞা নির্ধারণে অনুরোধ জানানো হয়। এছাড়া একটি তালিকা প্রণয়ণের জন্য বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে গঠিত কমিটির সুপারিশের আলোকে বহুমুখী পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে রপ্তানি ভর্তুকি বা নগদ সহায়তা প্রদানের জন্য অনুরোধ জানানো হয়। অদ্যাবধি এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি জানা যায়নি।
এরই মধ্যে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন জুট ডাইভারসিফেকশন প্রমোশন সেন্টার (জেডিপিস) মাধ্যমে পূর্বের ২৩২টি বহুমুখী পাট পণ্যের তালিকার সঙ্গে আরও ৪৯টি পণ্য অন্তর্ভুক্ত করে ২৮১টি পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে ভর্তুকি বা নগদ সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে সংজ্ঞা ও তালিকাটি চূড়ান্তকরণের বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়। জেডিপিসি থেকে পাঠানো ২৮১টি পণ্যের তালিকা বহুমুখী পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে রপ্তানি ভর্তুকি বা নগদ সহায়তা প্রদানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুনরায় অনুরোধ করা হলো।
এদিকে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানির পরিসংখ্যানে জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে এ খাতের রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। পাট ও পাটজাত পণ্যের মধ্যে জুট ইয়ার্ন ও টুইন রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৫৬ কোটি ৪৫ লাখ ডলার। বিপরীতে রপ্তানি হয়েছে ৪২ কোটি ৭৩ লাখ ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ২৪ দশমিক ৩০ শতাংশ কম। চলতি অর্থবছরে জুট ইয়ার্ন ও টুইন রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬৯ কোটি ডলার। পাটের বস্তা ও ব্যাগ রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ কোটি ৬৩ লাখ ডলার। বিপরীতে রপ্তানি হয়েছে ৭ কোটি ৩৫ লাখ ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৩০ দশমিক ৮৮ শতাংশ কম। চলতি অর্থবছরে পাটের বস্তা ও ব্যাগ রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৩ কোটি ডলার।
বহুমুখী পাট পণ্যের ক্ষেত্রে অগ্রগতি থাকলেও কেন রপ্তানিতে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারছে না, এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সচিব এম বারিক খান আলোকিত বাংলাদেশকে জানান, পাট পণ্যের ওপর ভারত সরকারের এন্টি ডাম্পিং শুল্ক আরোপের কারণে পাট পণ্যের রপ্তানি কমে গেছে। পাট কলগুলোর মজুদ বেড়ে গেছে। এমন অবস্থায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আমদানিকারকরা উৎপাদন খরচের কম দামে পাট পণ্য ক্রয়ে প্রস্তাব দিচ্ছে। ওই মূল্যে পাট পণ্য বিক্রি করা হলে বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়বে পাটকলগুলো। দ্রুত সরকারের পক্ষ থেকে এ বাধা উঠিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। 
তিনি বলেন, আমরা সরকারের কাছে সরল সুদে ১০ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠনের প্রস্তাব দিয়েছি। এটি বাস্তবায়ন হলে পাট খাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যবসায়ীরা তাদের লোকসান কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবেন। একই সঙ্গে বাজার সম্প্রসারণেও উদ্যোগ নেওয়া উচিত। সম্প্রতি পাট খাতের সার্বিক সমস্যা ও সমাধানে সম্প্রতি বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করা হয়েছে। সেখানে আমরা পাট খাতের সার্বিক অবস্থা তুলে ধরেছি। 
জানা গেছে, দেশের পাট খাতের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৪ কোটি লোক জড়িত। গেল ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দেশে কাঁচা পাটের উৎপাদন হয়েছে ৭৫ লাখ বেল এবং আগের মজুদের পরিমাণ ছিল ২৩ লাখ ২৫ হাজার বেল। অর্থাৎ, মজুদসহ দেশের মোট কাঁচা পাটের উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৮ লাখ ২৫ হাজার বেল। এর মধ্যে বেসরকারি পাটকলগুলো ক্রয় করেছে ৪৯ লাখ ৯১ হাজার বেল এবং সরকারি পাটকলগুলো ক্রয় করেছে ১২ লাখ ২২ হাজার বেল। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের আরও একটি পরিসংখ্যান সূত্রে জানা গেছে, এ সময়ে মোট পাট পণ্যের উৎপাদন হয়েছে ১১ লাখ ৯ হাজার ৫৮৮ মেট্রিক টন। এর মধ্যে বেসরকারি পাটকলগুলো উৎপাদন করেছে ৮ লাখ ৯১ হাজার ৩৪৪ টন, যা মোট উৎপাদনের ৮০ দশমিক ৮৪ শতাংশ এবং সরকারি পাটকলগুলো উৎপাদন করেছে ২ লাখ ১৮ হাজার ২৪৪ টন, যা মোট উৎপাদনের ১৯ দশমিক ৬৬ শতাংশ।