আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ১৫-০৫-২০১৯ তারিখে পত্রিকা

ভ্যাট আইন নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দূরত্ব মিটেছে : অর্থমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক
| অর্থ-বাণিজ্য

নতুন মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট আইন কার্যকর করার বিষয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যে দূরত্ব ছিল তা মিটেছে। ফলে, ১ জুলাই থেকেই নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে অবস্থিত অর্থমন্ত্রীর কার্যালয়ে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সঙ্গে বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী এ কথা জানান। প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যপী বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী জানান, দুই পক্ষের মধ্যে তৈরি হওয়া দূরত্ব আলোচনার মাধ্যমে দূর হয়েছে। ভ্যাট আইন নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সরকারের কোনো দূরত্ব রইল না। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, কোনো পণ্যে ভ্যাট বাড়ছে না, বরং কমতে পারে। এর বাইরে অর্থ মন্ত্রণালয় করের এলাকা বাড়াবে। এ ক্ষেত্রে অর্থ মন্ত্রণালয়কে সবধরনের সহযোগিতা করবে এফবিসিসিআই।
বৈঠকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) বর্তমান সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, নব নির্বাচিত সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, বিজিএমইএ সদ্য সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
পহেলা জুলাই থেকে বাস্তবায়ন হতে যাওয়া ভ্যাট আইন নিয়ে সরকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করছে না বলে অভিযোগ করে আসছিলেন ব্যবসায়ীরা। একই সঙ্গে কোন পণ্যে কত শতাংশ ভ্যাট বসবে তা নিয়েও অস্পষ্টতা রয়েছে বলে বেশকিছু দিন ধরে অভিযোগ করছেন ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা। বিষয়টি সুরাহা করতে অর্থমন্ত্রী ও এনবিআর চেয়ারম্যান বরাবর চিঠিও দেওয়া হয়েছিল ব্যবসায়ীদের তরফ থেকে। এমন অবস্থায় মঙ্গলবার ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন অর্থমন্ত্রী।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের অর্থমন্ত্রী বলেন, ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কিছুটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল, সেটি পুরোপুরি কেটে গেছে। ব্যবসায়ীদের দাবি ছিল আইনটি চূড়ান্ত করার পর তাদের দেখার সুযোগ দিতে হবে। তবে, ভ্যাট আইন এমন একটি আইন যা বাজেটে পাস না হওয়া পর্যন্ত দেখানো যায় না। আইনগত কারণে ভ্যাট আইনের সব তথ্য প্রকাশ করা যাবে না, এটা বোঝানোর পর ব্যবসায়ীরা মেনে নিয়েছেন। আইন বাস্তবায়ন নিয়ে ব্যবসায়ীদের আর কোনো আপত্তি নেই। এ আইন স্বচ্ছতার সঙ্গে ঝামেলাহীনভাবে বাস্তবায়ন করা হবে, যা ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ী নেতাদের আশ্বস্ত করেছি, এই আইন ‘হ্যাসেল ফ্রি’ ভ্যাট আইন হবে। ভ্যাট দিতে কেউ কষ্ট পাবে না, সব কিছুই করব উইন উইন সিচুয়েশনে।
মন্ত্রী আরও বলেন, আসছে বাজেটে কোনো পণ্যে  ভ্যাটের হার বাড়বে না বরং কমবে। তবে ভ্যাটের আওতা বাড়বে। ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন দুই-একদিনের কাজ নয়, এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া অর্থাৎ এটা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তনযোগ্য। মাঝপথে যদি কোনো সমস্যা মনে হয়, তাহলে সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে। ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের পরও যদি কোথাও কোনো সীমাবন্ধতা দেখা দেয় তাহলে তা জনবান্ধব ও ব্যবসাবান্ধব করতে পরিবর্তন করে সময়োপযোগী করা হবে। স্বচ্ছতার সঙ্গে ঝামেলাহীনভাবে আসছে ১ জুলাই থেকেই এটি বাস্তবায়ন করা হবে। এ বিষয়ে ব্যবসায়ীরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে বলে আশ্বস্ত করেছেন। 
এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দীন বলেন, দেশের উন্নয়নে যে যার জায়গা থেকে কাজ করে যাচ্ছি। এখানে কারও সঙ্গে কারও প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই। অর্থমন্ত্রী আশ্বস্ত করেছেন, কর ব্যবস্থা এমন হবে যে যিনি কর দেবেন তিনি ব্যথা পাবেন না, আবার করও দেবেন। কোনো জায়গায় ট্যাক্স বৃদ্ধি পাবে না। বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে কমবে। সুতরাং এটাই ব্যবসায়ীদের জন্য যথেষ্ট। কিন্তু নেট (এলাকা) উনি বাড়াবেন। এটার জন্য যা যা করণীয় তা বাস্তবায়নে সহযোগিতা করব। অর্থমন্ত্রী যে আশ্বাস দিয়েছেন সেটার ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রাখতে চাই। আশাকরি, নির্ধারিত কোনো সেক্টরে বা কোনো পণ্যে কোনো অসুবিধা হয়, সেটি নিশ্চয় উনারা বিবেচনায় নেবেন।
এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ভ্যাট আইন একেবারেই নতুন কিছু নয়। এখনও সীমিত আকারে এ আইন চালু আছে। ভ্যাট আইন নিয়ে একমত হয়েছি। এতে কোনো দ্বিধা নেই। ভ্যাট আইন বাস্তবায়নে কোনো সমস্যা থাকলে তা পরবর্তী সময়ে পরিবর্তনের সুযোগ থাকবে। নির্দিষ্ট সময়ে ভ্যাট আইনটি বাস্তবায়নে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। ভ্যাট আইন সংস্কারে এফবিসিসিআই ও এনবিআরের যৌথ উদ্যোগে একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ করা হবে। যারা ভ্যাট আইন সংস্কারে ভবিষ্যতে কাজ করবে।