আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ১৫-০৫-২০১৯ তারিখে পত্রিকা

শিশু-কিশোরদের মসজিদে নিয়ে যাওয়া

তারেক সাঈদ
| প্রকৃতি ও পরিবেশ

তুরস্কের বেশিরভাগ মসজিদের দেওয়ালে একটি কথা লেখা থাকে, কথাটি হলো : ‘মুহতারাম, নামাজ পড়ার সময় যদি পেছনের সারি থেকে বাচ্চাদের হাসির আওয়াজ না আসে তাহলে পরবর্তী প্রজন্মের 
ব্যাপারে ভয় করুন।’

আমরা আমাদের শিশুদের মসজিদে নিয়ে যাই। বিশেষ করে রমজান মাস, দুই ঈদ ও জুমার দিনে। বাবা, দাদা-নানা ও ভাইয়ের সঙ্গে মসজিদে যেতে শিশুরাও আনন্দ ও আগ্রহ বোধ করে। তাই পাঞ্জাবি-টুপি পরে তারাও বড়দের হাত ধরে নামাজের জন্য মসজিদে চলে আসে। বাংলার ঐতিহ্যের এটি একটি চোখজুড়ানো দৃশ্য। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগেই শিশুদের আল্লাহর ঘরের সঙ্গে পরিচয় করানো ও নামাজের জন্য অভ্যস্ত বানানো একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। কেননা শিশুকালে যে জিনিসে অভ্যাস হয়, পরে তা করা সহজ হয়, নচেৎ তা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এ জন্যই হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা তোমাদের বাচ্চাদের সাত বছর বয়স থেকেই নামাজের নির্দেশ দাও। আর যখন ১০ বছর বয়সে উপনীত হবে, তখন তাদের নামাজে অবহেলায় শাসন করো।’ (আবু দাউদ : ৪৯৫)।
কিন্তু সমাজের অধিকাংশ বয়োবৃদ্ধ মুসল্লির মাঝে প্রচলিত একটি ভুল ধারণা হলো, ছোট ছোট শিশুকে মসজিদে নেওয়া যাবে না কিংবা গেলেও তাদের সবার পেছনে অথবা একেবারে এক পাশেই দাঁড়াতে দিতে হবে। তাতে যতটা না সমস্যা, তার চেয়ে বড় সমস্যাটা হলো এই কোমলমতি শিশুদের সঙ্গে এমন রুক্ষ-রূঢ় আচরণ করা হয়, যার ফলে মসজিদের প্রতি তাদের আগ্রহ কমে যায়। আর অভিভাবকরা বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে যান।
অথচ আমরা জানি, রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন মসজিদে নববিতে সালাত আদায় করতেন, তখন তাঁর নাতিদ্বয় হাসান ও হুসাইন (রা.) তাঁর ঘাড়ে চড়ে বসতেন। এমনকি তাদের এ খেলায় যেন ব্যাঘাত না ঘটে, সে কারণে রাসুলুল্লাহ (সা.) সিজদায় বিশেষ সময় অতিবাহিত করতেন। সাহাবিরাও তা প্রত্যক্ষ করতেন।
তবে শিশুদের মসজিদে নেওয়ার ক্ষেত্রে শরিয়ত নির্ধারিত কিছু নিয়ম-নীতি রয়েছে। যেমনÑ
১. শিশু একেবারে অবুঝ হলে মসজিদে আনা নিষেধ।
যেমনটা ৩/৪ বছরের বাচ্চারা করে থাকে। যে লাফালাফি, দৌড়াদৌড়ি, নামাজির সামনে দিয়ে অতিক্রম, পেশাব-পায়খানা ইত্যাদি করে মসজিদের আদবের খেলাফ করে। এ কারণেই তাদের ব্যাপারে রাসুল (সা.) সতর্ক করেছেন।
হাদিসে এসেছে, হজরত ওয়াসিলা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘তোমরা তোমাদের মসজিদকে অবুঝ শিশু ও পাগলদের থেকে দূরে রাখো, তদ্রƒপ ক্রয়-বিক্রয়, বিচার-আচার, উচ্চ স্বর, দ-দান ও তরবারি কোষমুক্ত করা থেকে বিরত থাকো।’ (ইবনে মাজাহ :৭৫০)।
২. নামাজের কাতারে বুঝমান নাবালেগ শিশুর অবস্থান।
বুঝ হয়েছে, এমন নাবালেগ শিশুদের ব্যাপারে বিধান হলো, যদি শিশু একজন হয়, তাহলে তাকে বড়দের কাতারেই সমানভাবে দাঁড় করাবে। এক্ষেত্রে বড়দের নামাজের কোনো অসুবিধা হবে না। একাধিক শিশু হলে সাবালকদের পেছনে পৃথক কাতারে দাঁড় করানো সুন্নত। তবে হারিয়ে যাওয়া বা দুষ্টুমি করার আশঙ্কা হলে, বড়দের কাতারেও মুসল্লিদের মাঝে মাঝে দাঁড়াতে পারবে। (আলবাহরুর রায়েক : ১/৬১৮, আদ্দুররুল মুখতার : ১/৫৭১)।
মসজিদে ছোটরা এলে দুষ্টুমি করবেÑ এটাই স্বাভাবিক। তাই ছোটরা নামাজে এলে তাদের পাশে নিয়ে নামাজে দাঁড়ান, তাদের আলাদাভাবে দাঁড়াতে দেবেন না। ছোটরা আলাদাভাবে দাঁড়ালে দুষ্টুমি করবে, বড়দের সঙ্গে একত্রে দাঁড়ালে আর দুষ্টুমি করার সুযোগ পাবে না।
সেই সঙ্গে তাদের আদর করে, স্নেহ দিয়ে বুঝিয়ে বলুন, মসজিদে হাসাহাসি-দুষ্টুমি করলে মসজিদের পবিত্রতা এবং মুসল্লিদের মনোযোগ নষ্ট হয়। দেখবেন তারা চুপ থাকবে।
হাদিসে আছে, রাসুল (সা.) বলেছেনÑ ‘যে ব্যক্তি ছোটদের দয়া আর বড়দের পরোয়া করে না সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়!’ (মুসলিম : ১/৬)।
তুরস্কের বেশিরভাগ মসজিদের দেওয়ালে একটি কথা লেখা থাকে, কথাটি হলো : ‘মুহতারাম, নামাজ পড়ার সময় যদি পেছনের সারি থেকে বাচ্চাদের হাসির আওয়াজ না আসে তাহলে পরবর্তী প্রজন্মের ব্যাপারে ভয় করুন।’