আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ১৫-০৫-২০১৯ তারিখে পত্রিকা

উত্তরখানে মা ও দুই সন্তানের লাশ

পুলিশের ধারণা খুনিরা বহিরাগত

নিজস্ব প্রতিবেদক
| প্রথম পাতা

রাজধানীর উত্তরখানে মা ও দুই সন্তানকে হত্যায় জড়িতরা বহিরাগত বলে ধারণা করছে পুলিশ। তবে ঘটনার তিন দিন চলে গেলেও মঙ্গলবার পর্যন্ত ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফরেনসিক দল ওই বাসা থেকে আলামত সংগ্রহ করেছে।

মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ঘটনাটি হত্যাকা- বলে ধারণা করা হচ্ছে। হত্যার সঙ্গে বহিরাগতরা জড়িত। তবে হত্যাকা-ে অংশ নেওয়াদের সঙ্গে নিহতদের আত্মীয়স্বজন কেউ জড়িত আছেন কি না, সে বিষয়টি খতিয়ে 

দেখা হচ্ছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। 
রোববার রাতে উত্তরখানের ময়নারটেক এলাকার একটি বাসা থেকে জাহানার বেগম মুক্তা (৫০), তার মেয়ে তাসফিয়া সুলতানা মীম (২০) ও ছেলে মুহিব হাসানের (৩০) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। 
ক্রাইম সিন ইউনিটের অতিরিক্ত উপকমিশনার তৌহিদুল ইসলাম জানান, মেঝে ও বিছানায় পড়ে থাকা রক্ত, চাদর, পোশাক, বঁটি, ছুরি এবং আসবাবপত্র থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। বাইরে থেকে কেউ বাসায় প্রবেশ করে হত্যাকা- ঘটিয়েছে কি না, তা জানার চেষ্টা চলছে। লাশের পাশে দুইটি চিরকুট পাওয়া গেছে। চিরকুটে আঙুলের ছাপ আছে কি না, তা ল্যাবে পরীক্ষা করা হবে। সেই সঙ্গে হাতের লেখা দুইটি কার, তা নিশ্চিত হতে চিরকুট দুইটি হ্যান্ড রাইটিং এক্সপার্টের কাছে পাঠানো হবে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ চৌধুরী জানিয়েছিলেন, মা জাহানারা বেগমের গলায় ও পেটে ছুরিকাঘাতের হালকা দাগ রয়েছে। তবে তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া মেয়ে তাসফিয়া সুলতানা মীমকে গলায় গামছা পেঁচিয়ে হত্যা করা হয়। ছেলে মুহিব হাসানকে হত্যা করা হয়েছে গলা কেটে। ভিসেরা পরীক্ষার জন্য নমুনার প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
তবে মৃত্যুর বিষয়টি আত্মহত্যা দাবি করে জাহানার দেবর আহসানুল্লাহ বলেন, চারটি কারণে তারা আত্মহত্যা করতে পারে বলে মনে হচ্ছে। অসময়ে স্বামীর মৃত্যু, স্বামীর পেনশনের টাকা না পাওয়া, ছেলে মুহিবের বেকারত্ব ও প্রতিবন্ধী মেয়েকে নিয়ে উদ্বেগ। তবে আমাদের সঙ্গে তাদের ভালো সম্পর্ক ছিল। কোনো পারিবারিক ঝামেলা ছিল না।
সূত্র জানায়, জাহানারার বাড়ি কুমিল্লার তিতাস উপজেলার কান্দি গ্রামে। তার শ্বশুরবাড়ি কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামে। ছেলে মুহিব বিবিএ শেষ করে চাকরির চেষ্টা করছিলেন। ৩ মে অনুষ্ঠিত বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অংশও নেন তিনি। জাহানারার স্বামী ইকবাল হোসেন মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলায় বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের (বিআরডিবি) ব্যবস্থাপক পদে কর্মরত অবস্থায় ২০১৬ সালে মারা যান। তার মৃত্যুর পরই আর্থিক সংকটে পড়ে পরিবারটি। 
সূত্র আরও জানায়, চলতি মাসের ৫ তারিখে ভৈরব থেকে ঢাকায় আসেন তারা। পৈত্রিক সূত্রে উত্তরখানে জমি পেয়েছিলেন জাহানারা। বাবার নামে থাকা ওই সাড়ে ৪ কাঠা জমির অংশীদার তারা চার ভাই-বোন। ওই জমিতে বাড়ি নির্মাণ করে বসবাসের উদ্দেশ্যেই ঢাকায় এসেছিলেন জাহানারা। জমিটির পাশেই ময়নারটেকের ৩৪/বি নম্বর বাসাটি তিনি ভাড়া নেন। যদিও জাহানারা তার নিজের অংশ বুঝে পাননি। অন্যদিকে পৈত্রিক সম্পত্তি হলেও, জমি দখলে নিতে তার ভাইকে টাকা দিতে হয়েছিল।
এ বিষয়ে তার বড় ভাই মনিরুল ইসলাম বলেন, আমি আমেরিকায় থাকা অবস্থায় ১৯৯৮ সালে আমার টাকা দিয়ে বাবা ওই জমিটি তার নিজের নামে কিনেছিলেন। যেহেতু জমিটা আমার টাকা দিয়ে কেনা হয়েছিল, তাই পরবর্তীতে আমার অন্য দুই বোন ও এক ভাই আমাকে টাকা পরিশোধ করে। আমার এক বোন অস্ট্রেলিয়াতে আর ছোট ভাই আমেরিকায় থাকে। এজন্য জমি বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। তবে জাহানারাকে বাড়ি করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। জাহানারাকে আমরা সবাই মিলে সহযোগিতা করতাম। মেয়েকে নিয়ে প্রায়ই হতাশা প্রকাশ করতেন তিনি। মেয়ে মীম কারও কথা শুনতেন না। অনেক সময় না খেয়ে থাকতেন। চিরকুটে স্বজনদের অবহেলার অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, কী কারণে লিখেছে, তা আমার জানা নেই।