স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে ভালো এবং তিনি রোজা রাখছেন। খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হলে তাকে কেরানীগঞ্জ কারাগারে নেওয়া হবে। মঙ্গলবার সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসব তথ্য জানান।
খালেদা জিয়া শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণে বর্তমানে
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ভর্তি রয়েছেন। নাজিম উদ্দিন রোডের পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তাকে বঙ্গবন্ধু বিএসএমএমইউতে আনা হয় ১ এপ্রিল। রোববার খালেদা জিয়ার মামলাগুলোর বিচার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে বিশেষ আদালত বসানোর বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হয়। এর আগে এসব মামলার কার্যক্রম নাজিম উদ্দিন রোডের পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক ভবনে অস্থায়ী আদালতে পরিচালিত হয়ে আসছিল।
রমজান মাসে কারাবন্দি খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা কেমন এবং তিনি রোজা রাখছেন কি নাÑ সাংবাদিকরা এসব বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘উনি রোজা রাখছেন, আমি যতটুকু জানি। ব্লাডপ্রেসার, ডায়াবেটিসের ওষুধ নিচ্ছেন, ইনসুলিন নিচ্ছেন।’ তিনি বলেন, ‘আগে ইনসুলিন নিতেন না, সে জন্য ডায়াবেটিস কন্ট্রোলে ছিল না। এখন উনি (খালেদা জিয়া) ইনসুলিন নিচ্ছেন, এখন ওনার শরীর মোটামুটি ভালো আছে, আমরা যেটুকু খবর পেয়েছি। আমরা খবর পেয়েছি, উনি আগের চেয়ে অনেক সুস্থ।’ আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘যে ধরনের রোগে তিনি ভুগছেন, সেগুলো অনেক দিনের পুরোনো রোগ। যেমনÑ আর্থাইটিস ও ডায়াবেটিস। সেগুলো তার পুরোনো রোগ, সেগুলো তো চলছেই। সেগুলো চলছে বলেই তিনি হাসপাতালে আছেন।’
কেরানীগঞ্জে বিশেষ আদালত স্থানান্তরিত হয়েছে, খালেদা জিয়া সুস্থ হলে তাকে কেরানীগঞ্জ কারাগারে নেওয়া হবে কি নাÑ এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারকে আদালতে রূপান্তর করে সেখানে খালেদা জিয়াকে রেখেছিলাম। আমরা সেটাকে জাদুঘরে পরিণত করছি, প্রোগ্রাম নিয়ে নিয়েছি। অনেক অংশই ভেঙে ফেলা হবে। কাজেই ওনাকে আর ওখানে রাখা যাবে না। কেরানীগঞ্জে একটি আধুনিক কারাগার তৈরি করেছি। সেখানে মহিলাদের অংশটা করতে একটু সময় লেগেছিল। অন্যান্য কাজও বাকি ছিল। সেগুলো করতে একটু সময় লেগেছে। খালেদা জিয়াকে যদি হাসপাতাল থেকে ডিসচার্জ করা হয়, তাহলে হয়তো তাকে ওখানে নেওয়া হবে।’ খালেদা জিয়াকে কেরানীগঞ্জে কীভাবে রাখা হবেÑ সাংবাদিকরা জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘জেল কোড অনুযায়ী যতখানি ব্যবস্থা থাকা দরকার, ঠিক সেই রকম ব্যবস্থাই হবে।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে নারী-শিশু নির্যাতন ও ধর্ষণের সংখ্যা মহামারি আকারে বেড়ে গেছে। আপনি কী মনে করেন, দ্রুত শাস্তি না হওয়ায় মানুষ এ ধরনের অপরাধে লিপ্ত হচ্ছেÑ এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘আমি আপনার সঙ্গে একমত নই। আপনি সারা পৃথিবীর জরিপ দেখেছেন? সেখানে কী আমরা মহামারি আকারে মনে হয়? জরিপ নিয়ে দেখবেন, কোন দেশে কতটি রয়েছে, আমাদের দেশে কত।’ তিনি বলেন, ‘যে ক’টা ঘটনা ঘটেছে, কিশোরগঞ্জ ও অন্যান্য জায়গায়, সবগুলো আসামিকে শনাক্ত করা হয়েছে, ধরা হয়েছে, ১৬৪ ধারা হয়েছে। আমাদের কাজটা আমরা করে দিচ্ছি। তারপর বিচার বিভাগের কাজ বিচার বিভাগ করেন। সেখানে আমাদের কিছু করণীয় নেই।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘পুলিশের যে তদন্ত ও ব্যবস্থা নেওয়ার সেটা কিন্তু পুলিশ করছে। এ ধরনের ঘটনা যে কোনো দেশে একদম নেই, তা আপনারা বলতে পারবেন না। সব দেশেই আছে, কম-বেশি আছে। আমাদের দেশে একেবারে মহামারি আকার ধারণ করেছে, আমার মনে হয়, এ উক্তি সঠিক নয়।’ এর আগে নবনির্বাচিত বিজিএমইএ প্রেসিডেন্ট ও পরিচালকদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ঈদের আগে গার্মেন্ট শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধের বিষয়ে বিজিএমইএ নেতাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ঈদের আগে অনেকে বেতন দিতে পারে না। প্রতি বছরই সমস্যা হয়; বিজিএমইএ সমাধান করে। এগুলো নিয়ে তারা আগামী ১৯ তারিখে আমাদের সঙ্গে কথা বলবে।’