খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি পাটকলে প্রায় ৩২৫ কোটি টাকা মূল্যের পাটজাত পণ্য মজুত রয়েছে। বিদেশে বাজার মন্দার কারণে প্রায় বছরজুড়ে পড়ে থাকা বিশাল অঙ্কের এ পাটজাত পণ্য বিক্রি হচ্ছে না। ফলে শুধু কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং শ্রমিকদের বেতন ও মজুরি বাবদ ৭৫ কোটি ১৪ লাখ ৭০০ টাকা বকেয়া হয়ে পড়েছে পাটকলগুলোতে। এছাড়া পাট ক্রয়সহ অন্যান্য দেনার পরিমাণ আরও অনেক বেশি। এদিকে, শ্রমিকদের অব্যাহত ধর্মঘটের কারণে সাত দিনে খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি পাটকলে ৭ কোটি টাকার লোকসান হয়েছে। শ্রমিকদের ধর্মঘট অব্যাহত থাকলে লোকসানের পরিমাণ আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বকেয়া মজুরি প্রদান ও মজুরি কমিশন বাস্তবায়নসহ ৯ দফা দাবিতে খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি জুটমিলের ৩৩ হাজার শ্রমিক মিলগুলোতে উৎপাদন বন্ধ রেখে ৫ মে থেকে দ্বিতীয় দফায় সড়ক ও রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে। শ্রমিকদের এ আন্দোলনের কারণে খালিশপুর শিল্পাঞ্চলসহ খুলনা অঞ্চলের পাটকলগুলোতে বর্তমানে ‘অগ্নিগর্ভ’ অবস্থা বিরাজ করছে। বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি) সূত্র জানায়, খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি জুট মিলের শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের ১২ সপ্তাহের মজুরি ও বেতনসহ প্রায় ৬৫ কোটি টাকা বকেয়া পড়েছে। এর মধ্যে শুধু শ্রমিকদের বকেয়া পাওনা রয়েছে ৫৮ কোটি ৭০ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এছাড়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চার মাসে ১৬ কোটি ৪৪ লাখ ১৭ হাজার টাকা বকেয়া পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে বকেয়া মজুরি ও বেতন না পেয়ে পাটকলগুলোর শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। মিল সূত্র জানায়, খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি জুটমিলের প্রতিদিনের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২৭২ মেট্রিক টন। সেখানে প্রতিদিন উৎপাদন হচ্ছে ১০০ দশমিক ২৯ মেট্রিক টন। প্রতিদিনের উৎপাদিত এ ১০০ দশমিক ২৯ মেট্রিক টন পাটজাত পণ্যের বাজার মূল্য ৮০ থেকে ৮৫ লাখ টাকা। সে হিসেবে ছয় দিনে প্রায় ৬ কোটি টাকার পাটপণ্য উৎপাদন বঞ্চিত হয়েছে। বর্তমানে পাটকলগুলোতে মাত্র ৪৭ হাজার ৭৪৭ কুইন্টাল কাঁচা পাট মজুত রয়েছে, যা দিয়ে মাত্র ১৫ দিন পাটকলগুলোর উৎপাদন চলতে পারে। এছাড়া ওই মিলগুলোতে ৩২ হাজার ৬৬০ মেট্রিক টন হেসিয়ান, সেকিং, সিবিসি ও ইয়ার্ন পাটজাতপণ্য মজুত আছে। এদিকে, খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি পাটকলে প্রায় ৩২৫ কোটি টাকার পাটজাত পণ্য মজুত রয়েছে। বাংলাদেশের পাটজাত পণ্যের মূল বাজার হচ্ছেÑ সুদান, ঘানা, সিরিয়া, ইরান ও ভারত। কিন্তু গত এক বছর ধরে ওই দেশগুলোতে বাংলাদেশের পাটজাত পণ্য রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। ফলে পাটকলগুলো চরম আর্থিক সংকটে পড়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে।
বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন খুলনা অঞ্চলের সমন্বয়কারী (লিয়াজোঁ কর্মকর্তা) মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের মজুরি ও বেতন বন্ধ রয়েছে। তবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের বকেয়া পাওনা পরিশোধ করার চেষ্টা করছে। আশা করি খুব দ্রুতই এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। উল্লেখ্য, বর্তমানে খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি পাটকলে ১৪ হাজার ৫২৫ জন স্থায়ী, ১৮ হাজার অস্থায়ী এবং ৫২২ জন বদলি শ্রমিকসহ ৩৩ হাজার ৪৭ জন শ্রমিক এবং ১ হাজার ১৮৭ জন কর্মচারী কর্মরত রয়েছেন।