খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তর-পশ্চিম পাশে ১৭৩ দশমিক ৪৫ একর জমির মালিকদের অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ‘ভূমি পুনর্বিন্যাস প্ল্যান’ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ)। ফলে সরকারি সাহায্য ছাড়াই ওই এলাকা এখন আকর্ষণীয় ও পরিকল্পনামাফিক গড়ে উঠবে। কেডিএ কর্মকর্তারা বলছেন, প্রকল্পটির ডিপিপি প্রণয়নের কাজ চলছে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে শিগগিরই এটির বাস্তবায়নে কাজ শুরু করা হবে।
কেডিএ’র ভাষ্য অনুসারে, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তর-পশ্চিম পাশে বিভিন্ন ব্যক্তি মালিকানাধীন আনুমানিক ১৭৩ দশমিক ৪৫ একর জমি রয়েছে। ওই জমির উত্তর পাশে সংস্থাটি পরিকল্পিতভাবে ময়ূরী আবাসিক এলাকা গড়ে তুলেছে। পূর্বপাশে খুলনা সিটি করপোরেশন লিনিয়ার পার্ক তৈরি করেছে। দক্ষিণ পাশে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি মৎস্য খামার ও আবহাওয়া অফিস বিদ্যমান এবং পশ্চিম পাশে সিটি বাইপাস রাস্তা রয়েছে। চারপাশে পরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা এলাকার মাঝের স্থানটি দীর্ঘদিন অপরিকল্পিতভাবে পড়ে থাকায় ওই এলাকার সরকারি খালের জায়গা অবৈধভাবে দখল হয়ে চলাচলের রাস্তায় পরিণত হচ্ছে; অপ্রশস্ত রাস্তার পাশে স্থায়ী স্থাপনা ও জলাশয় ভরাট হয়ে বসতবাড়ি গড়ে উঠছে। অপরিকল্পিত উন্নয়নের ফলে জায়গাটি দিন দিন বস্তিতে পরিণত হচ্ছে।
অন্যদিকে, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি মৎস্য খামার, আবহাওয়া অফিস, ময়ূরী আবাসিক এলাকা ও লিনিয়ার পার্কের কারণে জায়গাটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ফলে জায়গাটির ভবিষ্যৎ গুরুত্ব বিবেচনায় প্লানিং ইন্টারভেনশন জরুরি। এ কারণে সার্বিক দিক বিবেচনা করে ওই এলাকার জমির মালিকদের অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ‘ভূমি পুনর্বিন্যাস প্লান’ প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়নের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছেÑ খেলার মাঠ, শিশু পার্ক, হাসপাতাল, উন্মুক্ত জায়গা, সাঁতারের জন্য পুকুর, গাড়ি পার্কিং, বনায়ন, খাল উদ্ধার ও নেটওয়ার্কিং, ওয়াকওয়ে, ড্রেন ও ফুটপাত, আবাসিক/অনাবাসিক প্লট, ফুড কোড, সুপার মার্কেট, মসজিদ, কবরস্থান, খুবি শিক্ষার্থী ডরমেটরি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পানির পাম্প হাউসের জন্য জায়গা, ইজিবাইক ও রিকশা স্ট্যান্ড, জিমনেসিয়াম, কমিউনিটি সেন্টার, ক্লাব ও পাবলিক টয়লেট ইত্যাদি সুযোগ-সুবিধা। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন উন্নয়নে ব্যয় হবে অন্তত ১৬০ কোটি টাকা।
জানা গেছে, কেডিএ এতদিন জমি অধিগ্রহণ করে বিভিন্ন পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা গড়ে তুলেছে। কিন্তু জমি অধিগ্রহণের ফলে এর মালিকরা আর তাদের জমিতে থাকতে পারে না। ফলে এক ব্যক্তি যে স্বপ্ন নিয়ে জমি কেনে তার সেই স্বপ্ন আর পূরণ হয় না। তাদের সেই স্বপ্ন পূরণ করার জন্য এবার কেডিএ জমির মালিকদের সঙ্গে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে ‘ভূমি পুনর্বিন্যাস প্লান’ প্রণয়ন করছে। এ পরিকল্পনাতে ওই এলাকার মধ্যে যেসব নাগরিক সুবিধা প্রদান করা হবে, তার জন্য যে পরিমাণ জমি লাগবে তা সব জমির মালিকদের মধ্যে আনুপাতিক হারে বণ্টন হবে। এছাড়া ভূমি উন্নয়নের জন্য যে খরচ হবে, তা প্রয়োজনীয় সংখ্যক প্লট/জমি সাধারণ জনগণের মাঝে বিক্রি করে জোগাড় করা হবে। এভাবে ভূমি উন্নয়ন করার অন্যতম সুবিধা হলো সব জমির মালিকরা প্লট পাবে, সরকারি সাহায্য ছাড়াই ভূমির উন্নয়ন হবে এবং সর্বোপরি এলাকাটি পরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠবে। তবে যাদের জমির পরিমাণ কম তাদের কয়েকজনকে মিলে একটা প্লট দেওয়া হবে। জমি কমÑ এমন কেউ যদি নিজে একটা প্লট নিতে/রাখতে চায়, তাহলে অতিরিক্ত জমির জন্য কাঠাপ্রতি প্রকৃত উন্নয়ন খরচ জমা সাপেক্ষে একটা প্লট নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। অনুরূপভাবে যদি কেউ তার জমি না রাখতে চায়, তাহলে সরকারি মৌজা দরে তার জমির সমুদয় অর্থ পরিশোধ করা হবে। সেক্ষেত্রে ওই ব্যক্তি আর কোনো প্লট পাবে না। কেডিএ’র সহকারী টাউন প্ল্যানার আবু সাঈদ বলেন, সংস্থার অন্যতম প্রধান কাজ হচ্ছে পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং ওই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা।