পাবনায় নকলে বাধা দেওয়ায় শিক্ষককে মারধরের ঘটনার মূল হোতাসহ জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার পাবনা প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি পাবনা জেলা শাখার ব্যানারে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে জেলার সব সরকারি কলেজের শত শত শিক্ষক অংশগ্রহণ করেন। এদিকে ওই ঘটনায় অধ্যক্ষের দায়েরকৃত মামলায় ঘটনার মূল হোতাকে বাদ দেওয়ায় শিক্ষকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। পুলিশ দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে।
মানববন্ধন চলাকালে একাধিক শিক্ষক অভিযোগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, জেলা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের প্রভাবে অধ্যক্ষের দায়েরকৃত মামলায় শামসুদ্দিন জুন্নুনের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। অথচ জেলা ছাত্রলীগের শীর্ষস্থানীয় নেতার ডানহাত হিসেবে শহরে পরিচিত জুন্নুনকে বাঁচানোর জন্য রাজনৈতিক মহলের এমন চাপ থাকা মোটেও ঠিক নয়। আমরা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শিক্ষকতার মতো মহান পেশায় জড়িত হয়েছি। তাই বলে আমাদের ন্যূনতম ইজ্জত নিশ্চিত করে কাজ করতে হবে। একই সঙ্গে তারা কর্মক্ষেত্রে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতের দাবি করেন। যারাই এ মামলায় হস্তক্ষেপের চেষ্টা করছেন, তাদের কাছে অনুরোধ করছি, সন্ত্রাসীদের পক্ষে অবস্থান না নেওয়ার জন্য। বুলবুল কলেজে শিক্ষার ন্যূনতম পরিবেশে নেই, প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ফেরানোর জন্য হলেও পাবনাবাসীর অন্তত এ বিষয়ে সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন। ছাত্রলীগ নামধারী কতিপয় ছাত্র ও বহিরাগতদের অত্যাচারে বুলবুল কলেজের সাধারণ ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকরা অতিষ্ঠ। গেল কয়েক বছরে অন্তত ১৫ শিক্ষক তাদের দ্বারা লাঞ্চিত হয়েছেন। কেউবা কলেজ থেকে নীরবে বদলি নিয়ে চলে গেছেন। মানববন্ধনে বক্তারা আরও অভিযোগ করে বলেন, বুলবুল কলেজের ছাত্রসংসদ ভবন গেল এক দশকেরও বেশি সময় ধরে জেলা ছাত্রলীগের এক শীর্ষ নেতা নিজ দখলে রেখেছেন। আবার কলেজ শাখার নেতা জুন্নুনও ক্যম্পাসে অফিস করেছেন। তারা কলেজ চলাকালীন সময় থেকে রাত অবধি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজন নিয়ে আড্ডায় থাকেন। বিষয়টি প্রশাসনের দেখার অনুরোধও জানান শিক্ষকরা। মানববন্ধন চলাকালে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি পাবনা জেলা শাখার সভাপতি প্রফেসর মো. শহিদুল ইসলাম, সহযোগী অধ্যাপক আবদুর রব, রাজু আহমেদ, নুরে আলম, কামরুজ্জামান, আতিকুল ইসলাম প্রমুখ শিক্ষক নেতারা বক্তব্য দেন।
পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওবায়দুল হক বলেন, বুধবার রাতে পাবনা সরকারি শহীদ বুলবুল কলেজের অধ্যক্ষ এসএম আবদুল কুদ্দুস বাদী হয়ে দুইজনের নাম উল্লেখসহ আরও তিন-চারজনকে অজ্ঞাত করে মামলা করেন। মামলার পর রাতেই পুলিশ অভিযান চালিয়ে পাবনা সদরের মালঞ্চি এলাকা থেকে এজাহারভুক্ত দুই আসামি সজল ইসলাম ও শাফিন শেখকে গ্রেপ্তার করে। সজল ইসলামের বাবার নাম মো. শাহেদ আলী। তার বাড়ি ঈশ্বরদীর গোকুল নগরে। অন্যদিকে শাফিন শেখের বাবার নাম মো. ইউসুফ আলী শেখ। তবে মামলায় ঘটনার মূল অভিযুক্ত সরকারি শহীদ বুলবুল কলেজ শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি সামসুদ্দিন জুন্নুনের নাম এজহারের উল্লেখ করা হয়নি।
এদিকে জেলা ছাত্রলীগের নিজস্ব প্যাডে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়েছে, অনিবার্য কারণবশত সরকারি শহিদ বুলবুল কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় অসাদুপায় অবলম্বণে বাধা দেওয়ায় পাবনায় কলেজ শিক্ষক মাসুদুর রহমানকে লাঞ্ছিত করেছে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা। ১২ মে তারিখের এ ঘটনার ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বুধবার সারা দেশে নিন্দার ঝড় ওঠে।