আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ১৭-০৫-২০১৯ তারিখে পত্রিকা

২ শতাংশ ডাউনপেমেন্টে পুনঃতফসিলের সুবিধা; দেনা পরিশোধে সুদহার ৯ শতাংশ

ঋণখেলাপিদের জন্য বড় ছাড়

| প্রথম পাতা

নিজস্ব প্রতিবেদক : খেলাপি গ্রাহকদের জন্য বড় ধরনের ছাড় দিয়েছে সরকার। ঋণের ২ শতাংশ ডাউনপেমেন্ট দিয়ে ৯ শতাংশ সুদে ঋণ পরিশোধের সুযোগ পাবেন তারা। এক বছরের রেয়াতকালসহ পরিশোধের সময় পাবেন সর্বোচ্চ ১০ বছর, আগের অনারোপিত সব সুদও মওকুফ করে দেওয়া হবে। একই সঙ্গে নিয়মিত ঋণ পরিশোধকারী ভালো গ্রাহকরাও সান্ত¡Íনা পুরস্কার হিসেবে পাবেন সনদ, প্রকাশ করা হবে তাদের ছবি, পরিশোধিত সুদের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ মওকুফ সুবিধাও পাবেন। বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত পৃথক দুটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। জানা গেছে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে ওই নীতিমালা বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে তা নীতিমালা হিসেবে জারি করল। ‘ঋণ পুনঃতফসিল ও এককালীন এক্সিট সংক্রান্ত বিশেষ নীতিমালা’ শীর্ষক প্রজ্ঞাপনের শুরুতে বলা হয়েছে, বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত কারণে ব্যবসায়ী/শিল্পোদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ব্যাংকের ঋণ অনেক ক্ষেত্রেই নিয়মিতভাবে পরিশোধিত হচ্ছে না এবং সংশ্লিষ্ট ঋণ বিরূপভাবে শ্রেণিকৃত হয়ে পড়ায় ঋণ বিতরণ ও আদায় কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে উৎপাদনশীল খাতসহ অন্য খাতগুলোয় স্বাভাবিক ঋণপ্রবাহ বজায় রাখাসহ ব্যাংকিং খাতের বিরূপভাবে শ্রেণিকৃত ঋণ নিয়মিত আদায়ের লক্ষ্যে কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এতে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরভিত্তিক ঋণখেলাপিরা সুযোগ পাবেন। ছাড় গ্রহণের জন্য ৯০ দিনের মধ্যে অর্থাৎ ১৬ আগস্টের খেলাপির আবেদন করবেন। ২ শতাংশ ডাউনপেমেন্ট দিয়ে ১০ বছর পর্যন্ত ঋণ পরিশোধের সুযোগ পাবেন। তবে প্রথম এক বছর কোনো টাকা পরিশোধ করতে হবে না। পুনঃতফসিলকৃত ঋণের সুদহার হবে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ বা ব্যাংকের কস্ট ফান্ডের সঙ্গে ৩ শতাংশ যোগ করে। খেলাপি ঋণের সুদ ব্যাংক আয় দেখাতে পারে না। তাই পৃথক হিসাবে রাখতে হয়। পৃথক হিসাবে রাখা সব সুদ মাফ করে দেওয়া হবে। এ সুবিধা গ্রহণকারীরা ব্যাংক থেকে আবার নতুন করে ঋণ নিতে পারবেন। প্রচলিত নিয়ম মেনে সতর্কতার সঙ্গে ঋণ দিতে বলা হয়েছে। নতুন ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করলে পুনঃতফসিল সুবিধা বাতিল হবে। 
সুবিধা গ্রহণের পর নিয়মিত অর্থ পরিশোধ না করলেও তাদের খেলাপি করা যাবে না। এখানে ছাড় দেওয়া হয়েছে। ৯টি মাসিক কিস্তির তিনটি এবং ত্রৈমাসিক তিন কিস্তির একটি পরিশোধ না করলেও নিয়মিত থাকা যাবে। তবে মাসিক কিস্তির মধ্যে ছয়টি ও ত্রৈমাসিক কিস্তির দুটি পরিশোধ না করলে পুনঃতফসিল সুবিধা বাতিল করা হবে। 
স্বাধীনতার পর থেকে যারা ঋণখেলাপি তাদের এককালীন এক্সিট সুবিধা দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে তাদের খেলাপি ঋণের হিসাব হবে ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বরের এককালীন হিসাবায়ন ভিত্তিতে। অর্থাৎ ১৯৭১ সালের পর থেকে ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত যত খেলাপি ঋণ আছে তার হিসাব করা হবে। কোনো ঋণখেলাপি যদি মনে করেন এককালীন ঋণ পরিশোধ করে খেলাপির তালিকা থেকে বেরিয়ে যাবেন, তাহলে সে ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে প্রজ্ঞাপনে। এতে বলা হয়েছে, ২ শতাংশ ডাউনপেমেন্টে ঋণখেলাপিরা ঋণ পরিশোধের জন্য এক বছর পর্যন্ত সময় পাবেন। আগের সব সুদ বাবদ পাওনা মওকুফ করা হবে। এককালীন পরিশোধের জন্য সুদহার আরও কম- ব্যাংকের কস্ট অব ফান্ডের সমান। তবে এক বছরের মধ্যে টাকা পরিশোধ না করলে সুবিধা বাতিল হবে। এই এককালীন এক্সিট সুবিধা ও পুনঃতফসিল সুবিধা কার্যকরের ৯০ দিনের মধ্যে ব্যাংক ও গ্রাহকের মামলা স্থগিত করতে হবে। পরবর্তী সময় গ্রাহক কোনো শর্ত ভঙ্গ করলে সুবিধা বাতিল করে মামলা ফের চালু হবে। 
এদিকে ভালো গ্রাহকদের নতুন করে কোনো সুবিধা দেওয়া হয়নি। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভালো গ্রাহকদের প্রণোদনা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে ওই নির্দেশনা বেশিরভাগই মানা হয়নি। বৃহস্পতিবার আবার ওই প্রণোদনা দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কোনো গ্রাহক সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত পূববর্তী চারটি ত্রৈমাসিক কিস্তি পরিশোধ করলে তিনি ভালো গ্রাহক হিসেবে বিবেচিত হবেন। তবে স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠান খেলাপি হলে তিনি ভালো গ্রাহক হিসেবে বিবেচিত হবেন না। বিগত এক বছর পরিশোধ করা সুদের ওপর ১০ শতাংশ ছাড় পাবেন ভালো গ্রাহকরা। বর্তমানে ঋণ নিতে গেলে ১২ থেকে ১৮ শতাংশ পর্যন্ত ঋণের সুদ দিতে হচ্ছে। কোনো গ্রাহক ১৫ শতাংশ সুদে ১০০ টাকা ঋণ নিয়ে বছর শেষে ওই ১৫ টাকা পরিশোধ করলে তিনি ১০ শতাংশ ছাড় পাবেন। অর্থাৎ ১৫ টাকা সুদ পরিশোধ করা হলে তিনি ছাড় পাবেন দেড় টাকা। অর্থাৎ ভালো গ্রাহকের সুদহার দাঁড়াবে সাড়ে ১৩ টাকা। যেখানে খেলাপিদের সুদ হবে ৯ শতাংশ। ভালো গ্রাহকদের ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডে ছাড় দিতে বলা হয়েছে। বার্ষিক রিপোর্টে তাদের ছবি প্রকাশ ও বার্ষিক সভায় তাদের সম্মাননা সনদ দিতে বলা হয়েছে ওই প্রজ্ঞাপনে।