- প্রতি মাসে ৫০ থেকে ৬০ টাকা আদায়
- নিয়ন্ত্রণ করছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট
ফেনীতে চলছে সিএনজি-অটোরিকশায় টোকেন বাণিজ্য। টোকেন বিক্রি করে প্রতি মাসে ৫০ লাখ থেকে ৬০ লাখ টাকা আদায় করছেন সিএনজিচালক মালিক সমিতি নামে ভুঁইফোঁড় সংগঠনের নেতারা। ফলে প্রতি বছর রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। শ্রমিক নেতারা টোকেনের টাকার একটি বড় অংশ পুলিশের পকেটে যাওয়ার দাবি করলেও পুলিশ এসব অস্বীকার করছে।
সিএনজি-অটোরিকশা মালিকরা জানান, মহাসড়কে ফেনীর ২৫ কিলোমিটার ও কুমিল্লার লাটিমি, বাতিসা, চৌদ্দগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকার লোকজন ফেনীতে যাতায়াত করেন। বর্তমানে মহাসড়কে সিএনজি-অটোরিকশা চলাচলে নিষেধাজ্ঞার কারণে বিপাকে পড়েন মহাসড়কের পাশের এলাকার বাসিন্দারা। অটোরিকশাগুলো মহাসড়কে চলাচলের সুযোগ করে দিতে টোকেন চালু করেন পুলিশ ও শ্রমিক নেতারা। এতে একশ্রেণির শ্রমিক নেতা এবং পুলিশের পকেট ভারি হচ্ছে। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন চালক ও মালিকরা।
বিআরটিএ’র তথ্য মতে, রেজিস্ট্রিকৃত সিএনজি-অটোরিকশা রয়েছে ৯ হাজার ২০০ ও নম্বরবিহীন রয়েছে ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার। বিআরটিএ যথাসময়ে রেজিস্ট্রেশন দিতে না পারায় ‘পুলিশ টোকেন’ নামে চাঁদা আদায়ের ফন্দি বের করেন শ্রমিক সংগঠনের নেতারা। প্রশাসনের নাম ভাঙিয়ে প্রতিটি টোকেনের জন্য মাসে ৫০০ টাকা করে ১ থেকে দেড় কোটি টাকা সিএনজি-অটোচালকদের কাছ থেকে নিচ্ছেন শ্রমিক নেতারা। একটি নতুন সিএনজি শ্রমিক ইউনিয়নে ভর্তি ফি বাবত চালকদের কাছ থেকে ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা করে নিচ্ছে। জেলার ছয় উপজেলায় নম্বরবিহীন সিএনজিগুলো টোকেন ব্যবহার করে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। নম্বরবিহীন এসব সিএনজি-অটোরিকশা অপরাধমূলক কাজ করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। নম্বর না থাকায় অপরাধ করে পার পেয়ে যাচ্ছে তারা। যার ফলে চিহ্নিত করা সম্ভব হচ্ছে না এসব চতুর অপরাধীকে।
এদিকে রেজিস্ট্রেশনকৃত অটোরিকশাগুলোও মহাসড়ক পারাপারে পুলিশি হয়রানির শিকার থেকে বাঁচতে টোকেন ব্যবহার করছে। আবার কিছু অটোচালক সিএনজির রেজিস্ট্রেশন মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও নবায়ন করছেন না। টোকেন দিয়ে চলছে। টোকেন ছাড়া রাস্তায় উঠলে সিএনজি-অটোরিকশা চালকদের ট্রাফিক পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশের হয়রানির শিকার হতে হয়। প্রতি মাসে ওই টোকেনের টাকার একটি বড় অংশ পায় ট্রাফিক পুলিশ থেকে শুরু করে থানা পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অটোচালকরা জানান, মহিপাল থেকে দাগনভূঞা অঞ্চলে টোকেন বিক্রি করেন জাহাঙ্গীর। ফেনী শহরের শিশুনিকেতন স্ট্যান্ড থেকে গুণবতী, লাটিমি, পদুয়া, মোহাম্মদ আলী, শর্শদি, আমতলী, আমিনবাজার এসব এলাকায় টোকেনে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার সিএনজি-অটোরিকশা চলে। শহরের মডেল হাইস্কুলের সামনে থেকে কালিদহ, লস্করহাট ও সোনাগাজী অঞ্চলে ৩ হাজারের মতো টোকেনে সিএনজি-অটোরিকশা চলাচল করে। মহিপাল স্ট্যান্ড থেকে দাগনভূঞা, বসুরহাট, বেকের বাজার, সিলোনিয়া, রাজাপুর, কোরাইশমুন্সী, দরবেশেরহাট এলাকাগুলোয় ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার সিএনজি-অটোরিকশা চলে টোকেনে। সার্কিট হাউস থেকে বালিগাঁও, সুন্দরপুর ও মথুয়াইতে ৮০০ থেকে ১ হাজার সিএনজি-অটোরিকশা টোকেনে চলাচল করে। শহীদ মার্কেটের সামনে থেকে ছাগলনাইয়া রুটে ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার সিএনজি-অটোরিকশা টোকেনে চলাচল করে। পোস্ট অফিসের সামনে থেকে ফুলগাজী রুটেও ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার অটোরিকশা টোকেনে চলাচল করে। এছাড়া ফেনী-পরশুরাম সড়কে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার অটোরিকশা টোকেনে চলাচল করে।
সিএনজিচালকরা বলেন, সিএনজি-অটোরিকশা রেজিস্ট্রেশন করতে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা লাগে; পাশাপাশি হয়রানির শিকারও হতে হয়। এছাড়া বছর শেষে নবায়ন ফি বাবত ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা দিতে হয়। আর টোকেনে প্রতি বছর যাচ্ছে ৬ হাজার টাকা। এ তারা রেজিস্ট্রেশনে আগ্রহ নেই। অনেকের রেজিস্ট্রেশন মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও রেজিস্ট্রেশন নবায়ন না করে টোকেন দিয়ে চালান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শ্রমিক নেতারা জানান, বিভিন্ন থানার ক্যাশিয়াররা তাদের কাছ থেকে টোকেনের টাকা নিয়ে যায়। ফেনী জেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক জালাল উদ্দিন হাজারী জানান, শ্রমিক সংগঠনের নামে একশ্রেণির লোক চাঁদা আদায় করছে বলে তিনি শুনেছেন। এসব সংগঠনের কোনো অস্তিত্ব নেই। ১৯৯১ সালের রেজিস্ট্রেশন নম্বরে একটি মাত্র শ্রমিক সংগঠনের রেজিস্ট্রেশন রয়েছে। ফেনী ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মো. আলাউদ্দিন জানান, এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মহিপাল হাইওয়ে পুলিশের ওসি আবদুল আউয়াল জানান, হাইওয়ে পুলিশ এসব টোকেন বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত নয় বলে তিনি দাবি করেন। বিআরটিএ’র পরিদর্শক মাহবুবে রাব্বানী জানান, সিএনজি-অটোরিকশা রেজিস্ট্রেশন নবায়ন আগের তুলনায় অনেক কমেছে। এতে সরকার বড় অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে। টোকেনযুক্ত নম্বরবিহীন সিএনজি-অটোরিকশার বিরুদ্ধে সভায় আলোচনা হয়েছে। শিগগিরই অভিযান চালানো হবে। ফেনীর নবনিযুক্ত পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান জানান, কোনো রকম চাঁদাবাজি বরদাশত করা হবে না। খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।