সৌম্য সরকার ও তামিম ইকবালের দুর্দান্ত শুরুর পর জয়ের পথেই ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু মাঝে দ্রুত মুশফিকুর রহিম ও মোহাম্মদ মিঠুন সাজঘরে ফিরে গেলে অনেকটাই হতাশ হয়ে পড়ে বাংলাদেশ। ঠিক সে সময় ড্রেসিংরুমে উঠে দাঁড়ান মাশরাফি বিন মুর্তজা। নতুন ব্যাটসম্যান মোসাদ্দেক হোসেনের কাছে গিয়ে পিঠ চাপড়ে দিয়ে বলেন, সৈকত তুই পারবি, যা ইচ্ছা খেল, শেষ করে আয়। শেষ পর্যন্ত অধিনায়কের এমন অনুপ্রেরণায় জ্বলে ওঠেন মোসাদ্দেক। দেশের জার্সিতে দ্রুততম হাফসেঞ্চুরির রেকর্ড গড়ে টাইগারদের এনে দেন অবিশ্বাস্য জয়। ম্যাচ শেষে বাংলাদেশের জয়ের নায়ক মোসাদ্দেকের মনে পড়ছে অধিনায়ক সেই কথা।
মোসাদ্দেক যখন ২২ গজে নামেন, তখন বাংলাদেশ জয় থেকে দূরে মাত্র ৬৭ রান। কিন্তু হাতে বল ছিল ৫০টি। উইকেটও পড়ে গিয়েছিল ৫টি। সব মিলিয়ে রানটা একটু কঠিনই ছিল টাইগারদের জন্য। তবে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে নিয়ে এক প্রান্তে জ্বলে ওঠেন মোসাদ্দেক। শেষ পর্যন্ত এ ডানহাতি ঝড় তুলে ২৪ বলে ৫২ রানের ইনিংস খেলে ৭ বল আগেই লাল-সবুজদের জয় ছিনিয়ে আনেন। তাতে প্রথমবার কোনো ত্রিদেশীয় সিরিজের ট্রফি ছোঁয়ার আনন্দে মাতে টিম বাংলাদেশ। উইকেটে যাওয়ার আগে অধিনায়কের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েই শুক্রবার ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে দারুণ খেলেন সৈকত। এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘উইকেটে যাওয়ার আগে মাশরাফি ভাই বলছিলেন, ‘ সৈকত তুই পারবি। যা ইচ্ছা খেল, শেষ করে আয়।’ শুধু ওই সময়ই নয়, আগের ম্যাচে বোলিংয়ের সময়, এমনকি এবার ঢাকা লিগের পুরো সময়, মাশরাফি ভাই আমাকে নানাভাবে উৎসাহ দিয়ে গেছেন। দলের বাইরে ছিলাম তখন। উনি বলেছেন যে, কী কী করলে দলে ফিরতে পারি। অধিনায়ক এমন ভরসা করলে আত্মবিশ্বাস সবসময়ই ভালো থাকে।’ ২২ গজে গিয়ে সৈকতের শুধু মনে হয়েছে পজিটিভ খেলা, ‘ব্যাটিংয়ে যাওয়ার পর আমার একটি ব্যাপারই কাজ করছিল, ইতিবাচক ক্রিকেট খেলব। এমন একটা পরিস্থিতি ছিল, খুব সহজ ছিল না। আমি চেষ্টা করেছি, বল বুঝে খেলতে। আর কিছু না।’ ডাকওয়ার্থ লুইসে যখন বাংলাদেশের লক্ষ্য নির্ধারিত হয় ২৪ ওভারে ২১০, তখন সিনিয়ররা সবাই ড্রেসিং রুমে জুগিয়েছেন সাহস। তাতে বেশ অনুপ্রাণিত হন মোসাদ্দেক, ‘আমরা যখন ফিল্ডিং করে ফিরেছি, তখন মাশরাফি ভাই থেকে শুরু করে মুশফিক ভাই, তামিম ভাই, রিয়াদ ভাই, সবাই একটা কথা বলছিলেন, আমাদের যে ব্যাটিং সামর্থ্য আছে এবং পুরো টুর্নামেন্টে যেমন খেলেছি, আমাদের পক্ষে এ রান তাড়া করা সম্ভব।’ ২০ বলে, বাংলাদেশের হয়ে দ্রুততম ওয়ানডে হাফসেঞ্চুরি করার পর বাঁধভাঙা উল্লাসে মাতেন এ ডানহাতি? টুমু এঁকেছেন বাতাসে, মুষ্ঠিবদ্ধ হাত ছুড়েছেন হাওয়ায়। সেই উদযাপনের প্রসঙ্গে মোসাদ্দেক বলেন, ‘উদযাপনটা আমার নিজের জন্যই ছিল। অন্য কারও জন্য নয়। অনেক সময় নিজের কাছে নিজের প্রত্যাশা থাকে। পূরণ হলে ভেতর থেকে অনেক কিছু বেরিয়ে আসে।’ আর কয়েকদিন পরই বিশ্বকাপ। তার আগে সত্যিই মোসাদ্দেকের কাছ থেকে এমন পারফরম্যান্সের আশায় ছিল বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত সেটা হওয়াতে বাড়তি আত্মবিশ্বাস নিয়েই এবার ইংল্যান্ড পা রাখবে টিম টাইগার্স।