রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ অঞ্চলের কৃষি অর্থনীতির বড় অংশজুড়ে রয়েছে আম। দেশের মোট আমের উল্লেখযোগ্য অংশ আসে এ দুই জেলা থেকেই। যদিও উৎপাদিত আম বিপণনে প্রান্তিক চাষিকে পড়তে হয় নানা ভোগান্তিতে। প্রায়ই দেখা যায়, ভোক্তাপর্যায়ে ফলটির দাম বাড়লেও এর সুবিধা তারা পান না। আলোকিত বাংলাদেশে প্রকাশ, হরেক রকমের দেশি ফলের বার্তা নিয়ে বুধবার এসেছে মধুমাস জ্যৈষ্ঠ। এ দিন থেকেই রাজশাহীর গাছ থেকে নামতে শুরু করে আম। বাগান থেকে ঝুড়ি ভর্তি হয়ে তা চলে যায় বাজারেও। উল্লেখ্য, প্রথম দিন থেকেই বাগানে আমের দাম কম থাকলেও বাজারে ছিল দাম চড়া। আর এতে অখুশি কৃষক ও ভোক্তাশ্রেণি।
প্রসঙ্গত বলতে হয়, দেশে গত কয়েক বছরে ধান-পাট-ফলমূল-শাকসবজি, তরিতরকারি ইত্যাদির উৎপাদন বাড়লেও ত্রুটিপূর্ণ মার্কেটিংয়ের কারণে কৃষক ও উৎপাদক-শ্রেণি প্রায়ই বঞ্চিত হয় ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি থেকে। অন্যদিকে সেসব পণ্য উচ্চমূল্যে কিনতে হয় ভোক্তা তথা ক্রেতাসাধারণকে। এবার রমজানে ফল ক্রয় করতে গিয়ে ক্রেতাদের একই রকম অভিজ্ঞতা হলো। আশঙ্কা করা হচ্ছে, যদি সরকার ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট বাহিনী ও মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে না পারে; তবে আমের ক্ষেত্রেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে। উল্লেখ্য, রোজা শুরু হতে না হতেই কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ও সিন্ডিকেট গ্রুপের কারসাজি বেশিরভাগ ফলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েক গুণ। বলা যায়, রমজানে ফলের দাম কমানোর সরকারের সব চেষ্টাই বিফলে গেছে। রাজধানীর ফলের বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে সব ধরনের ফলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে আপেল, আঙুর, নাশপাতি, মাল্টা, আনারস, পেয়ারা। বেড়েছে কলার দামও। আর সবচেয়ে বেশি বেড়েছে তরমুজের দাম। রোজার আগে যে তরমুজ ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে এখন তার দাম হাঁকা হচ্ছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। যেসব ঋতুভিত্তিক ফল একসময় স্বল্প ও মাঝারি আয়ের সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে ছিল, তা কেমন করে ক্রমে ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে, তা অচিরেই খতিয়ে দেখে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
ফলের বাজারের বর্তমান পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, অসাধু ব্যবসায়ী চক্র এবার অধিক মুনাফা লাভের আশায় বাজারে আমের দাম বাড়ানোসহ অপরিপক্ব আম বাজারজাত করতে চাইবেন। ফলে ক্রেতাসাধারণ তাদের প্রিয় ফল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হবেন। তাই কৃষক যাতে সহজে ও ন্যায্যমূল্যে আম বিক্রি করতে পারেন এবং ভোক্তারা যাতে যথাযথ দামে আম কিনতে পারেন, তা নিশ্চিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।