আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ১৯-০৫-২০১৯ তারিখে পত্রিকা

গ্রাহকদের প্রশ্ন

চট্টগ্রাম ওয়াসার এত পানি কোথায় যায়

সাইফুদ্দিন তুহিন, চট্টগ্রাম
| শেষ পাতা

চট্টগ্রাম ওয়াসার দৈনিক পানি উৎপাদন বেড়ে ৩৫ কোটি লিটার ছাড়িয়েছে। ওয়াসার মতে পানিতে ‘টইটম্বুর’ পাইপ লাইন। চাইলেই মিলছে পানি। কিন্তু গ্রাহকদের কথা ভিন্ন। তারা বলছেন, পানিতে সয়লাব নগরী এমন তথ্য মানা যায় না। নগরীর বড় অংশজুড়ে চলছে পানির হাহাকার। কোথাও কোথাও সপ্তাহ ধরেই পানি নেই। অভিযোগ দিলেও প্রতিকার মেলে দেরিতে। তাতে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ গ্রাহক। তাদের প্রশ্ন দৈনিক উৎপাদিত এত পানি যায় কই। ওয়াসার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পানি সরবরাহ প্রচুর হলেও লাইনের কিছু ত্রুটি আছে। তাই বাড়তি পানির সুফল অনেক গ্রাহক পান না। অনেকেই আবার বাড়তি পানি পেয়ে দারুণ খুশি। তবে ওয়াসা ও আর গ্রাহকের বক্তব্যে দ্বিমত থাকলেও বাড়ছে ক্ষোভ। গরমের মাত্রা বৃদ্ধির পর নগরজুড়ে বেড়েছে পানির চাহিদা। পানি সংকট থেকে মুক্তি মিলতে নগরীর দামপাড়া এলাকার ওয়াসা কার্যালয়ে নিয়মিত স্মারকলিপি অনুরোধ অভিযোগ জানানো সমানে চলছে।

ষাটের দশকে চট্টগ্রাম ওয়াসা প্রতিষ্ঠার পর পরিধি ছিল অনেক কম। ছোট্ট চট্টগ্রাম শহরে যা সরবরাহ হতো তা দিয়েই সন্তুষ্ট থাকতেন গ্রাহকরা। ধীরে ধীরে নগরীতে বাড়তে থাকে লোকসংখ্যা। সেই সঙ্গে বাড়তে থাকে পানির চাহিদা। নব্বইয়ের দশকে নগরীর লোকসংখ্যা ৪০ লাখ ছাড়িয়ে যায়। পরিধি বেড়ে দাঁড়ায় ৬০ বর্গ মাইল। কিন্তু নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে দেখা দেয় পানি সংকট। ধীরে ধীরে তা তীব্র রূপ নেয়। এরপর থেকে পানির চাহিদা কেবল বাড়তেই থাকে। একপর্যায়ে দৈনিক পানির চাহিদা বেড়ে দাঁড়ায় ৬০ কোটি লিটার। ওয়াসা তখন দৈনিক পানি উৎপাদন করত চাহিদার অর্ধেকের কম মাত্র ২১ কোটি লিটার। ওই সময় গ্রীষ্ম মৌসুম শুরু হলেই নগরীতে পানির জন্য নেমে আসত নরক যন্ত্রণা। খালি কলসি নিয়ে নিয়মিত মিছিল হতো নগরীতে। কিন্তু কিছুতেই সংকটের সমাধান মেলেনি। 

ওয়াসার সংশ্লিষ্টরা জানান, বড় ধরনের পানি উৎপাদন প্রকল্প হাতে না নেওয়ায় মূলত দীর্ঘ সময় সংকট কাটেনি। ২০০৭ সালের পর একের পর এক বড় পরিকল্পনা হাতে নিতে থাকে ওয়াসা। এর মধ্যে বড় কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প থেকে সরবরাহ শুরু হয় কয়েক বছর থেকে। হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্প থেকে উৎপাদন শুরুর পর থেকে বদলে যায় সরবরাহ পরিস্থিতি। এ একটি প্রকল্প থেকে দৈনিক ১৪ কোটি লিটার পানি উৎপাদন হচ্ছে। তাতে নগরীর অনেক জায়গায় পুরনো পানি সংকট কেটে গেছে। তবে ওয়াসার বিভিন্ন স্থানে এখনো গভীর নলকূপ থেকে পানি সরবরাহ হচ্ছে। এসব এলাকার সরবরাহ ব্যবস্থাও দুর্বল। তাই গভীর নলকূপ একবার বিকল হলে পুরো এলাকার পানি সরবরাহ এলোমেলো হয়ে যায়। চান্দগাঁও থানাধীন খরমপাড়া এলাকায় গেল দুই সপ্তাহজুড়ে চলছে পানি সংকট। এ ব্যাপারে ওয়াসার প্রধান কার্যালয়সহ এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলীর কাছে এলাকার লোকজন অভিযোগ জমা দিয়েছে। কিন্তু প্রতিকার মেলেনি।
তাসনিম আলম জানান, খরমপাড়া এলাকায় পানি সংকট চলছে দীর্ঘদিন ধরে। অভিযোগ করেও প্রতিকার পান না। এখন ওয়াসার কার্যালয় ঘেরাও করা ছাড়া উপায় নেই। তিনি আরও জানান, এলাকার লোকজন নিয়ে আজ রোববার ওয়াসা কার্যালয়ে যাবেন। দেখি পানি সরবরাহ পায় কি না।
এ ব্যাপারে ওই এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী রানা চৌধুরী জানান, খরমপাড়া এলাকার একটি গভীর নলকূপ বিকল হয়ে যায়। ওখানে গভীর নলকূপ থেকেই পানি সরবরাহ দিতে হয়। তাই নলকূপ বিকল হওয়ায় পানি সরবরাহের বিকল্প কোনো উৎস ছিল না। গভীর নলকূপটি এখন মেরামত করা হয়েছে। এখন আর সংকট নেই।
সম্প্রতি নগরীর হালিশহর এলাকায় পানি সংকট তীব্র রূপ নেয়। এলাকার লোকজন ক্ষোভে মিছিল করেছে। ওয়াসা কার্যালয়ে দলবেঁধে লোকজন গিয়ে অভিযোগ দিয়েছে। পরে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম ফজলুল্লাহর নির্দেশে প্রকৌশলীরা হালিশহরে পানির স্বাভাবিক সরবরাহ শুরু করার ব্যবস্থা নেন। এরপর লোকজনের দুর্ভোগের অবসান হয়।
নুরুল আমিন জানান, হালিশহর এলাকা মূল শহর থেকে কিছুটা দূরে। পানির প্রবাহ হালিশহর পর্যন্ত ঠিক থাকে না পাইপ লাইনে। তাই সারা বছর পানি সংকট লেগে থাকে। আগে পানি সংকট বেশি থাকলেও এখন কম। কিন্তু সংকট পুরোপুরি কাটেনি। মূলত ওয়াসার তদারকির অভাবেই পানি সংকট থাকে হালিশহরে।