আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ১৯-০৫-২০১৯ তারিখে পত্রিকা

সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রবেশ

লাগবে জননিরাপত্তা বিভাগের পাস

আমিরুল ইসলাম
| প্রথম পাতা

অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড দেখিয়ে সাংবাদিকরা বাংলাদেশ সচিবালয়ে প্রবেশ করতে পারবেন না। কারণ প্রেস অ্যক্রিডিটেশন গাইড তথা নীতিমালার কোথাও এ কার্ড ব্যবহার করে সচিবালয় কিংবা অন্য কোনো সংরক্ষিত এলাকায় প্রবেশের বিধান রাখা হয়নি। তবে পেশাগত কাজে সচিবালয়ে যদি সাংবাদিকরা প্রবেশ করতেই হয়, তাহলে সেই পাস ইস্যু করবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ। কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ইস্যু করা পাস হবে প্রবেশ পাস, অথবা নিরাপত্তা পাস। অবশ্যই অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড নয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং পিআইডির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পিআইডির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কোনো নীতিমালা বা কোথাও লিখিত নেই যে, অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডধারী মিডিয়া প্রতিনিধি সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত বাংলাদেশ সচিবালয়ে প্রবেশ করতে পারবেন। বরং অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড হলো মিডিয়া প্রতিনিধিদের পেশাগত স্বীকৃতি এবং সুবিধা। এ কার্ড দিয়ে সংরক্ষিত বা কেপিআইতে প্রবেশ করার সুযোগ নেই। এ বিষয়ে প্রধান তথ্য কর্মকর্তা মো. জয়নাল আবেদীন আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, ‘বিষয়টি এখন প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত বলা যাবে না। আমরা সব শ্রেণির মিডিয়া সংগঠনের প্রধানদের নিয়ে বৈঠক করব। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঠিক হবে, যেসব সংবাদকর্মী সচিবালয়ে কাজ করবেন তাদের প্রবেশ পাস পিআইডি দেবে, না স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেবে। আগামী কিছু দিনের মধ্যেই এ বৈঠক আহ্বান করা হবে। এখনই বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছে বলা যাবে না। এ বিষয়ে ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব শাবান মাহমুদ বলেন, ‘তথ্য ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়। কোন মন্ত্রণালয় সাংবাদিকদের সচিবালয়ে প্রবেশ পাস ইস্যু করবে, সেটা ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি বিচার্য বিষয় নয়। বরং দেখার বিষয় হচ্ছে, অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড ইস্যুতে পেশাদারিত্ব, স্বচ্ছতা নিশ্চিত করেছেন কি না। সবার আগে দেখতে হবে, প্রকৃত অর্থে কার্ডধারী পেশাদার সাংবাদিক কি না। অপরদিকে কমিউনিটির নেতা হিসেবে আমি বলব, অতীতের ধারাবাহিকতায় সাংবাদিকদের সচিবালয়ে প্রবেশে পাস তথা অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে ইস্যু করাই যুক্তিযুক্ত হবে। এটা দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসছে। 
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ৩১ জানুয়ারি মন্ত্রণালয়টির জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. আবু বকর ছিদ্দিকের সভাপতিত্বে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় তিনি বলেন, বাংলাদেশ সচিবালয় দেশের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক কেন্দ্র এবং একটি সংরক্ষিত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, কর্মচারী, বিভিন্ন সভায় আগত সদস্য ও দর্শনার্থীসহ প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ হাজার মানুষ সচিবালয়ে গমনাগমন করেন। চার থেকে ছয় হাজার যানবাহন সচিবালয়ে প্রবেশ করে। সচিবালয়ে স্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং মন্ত্রণালয় ও বিভাগে সংযুক্ত দপ্তর, অধিদপ্তর, অন্যান্য সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারী, যারা সচিবালয়ে সংযুক্ত কিংবা প্রেষণে কর্মরত তাদের অনুকূলে নিরাপত্তা অধিশাখা থেকে প্রবেশ পাস ইস্যু করা হয়। এ ছাড়া দর্শনার্থীদের জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা দৈনিক পাস ইস্যু করেন। অপরদিকে বাংলাদেশ সচিবালয়ে প্রধান তথ্য কর্মকর্তা পিআইডি থেকে ইস্যু করা সাড়ে ছয় হাজার অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডধারী বিভিন্ন ধরনের মিডিয়া প্রতিনিধি সচিবালয়ে প্রবেশ করেন, যারা সরকারি কোনো দাপ্তরিক কাজের সঙ্গে সংযুক্ত নয়। এ ক্ষেত্রে সচিবালয়ের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ সংরক্ষণ করা একান্তই প্রয়োজন। সভায় অতিরিক্ত সচিব বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য মিডিয়া কর্মীদের সচিবালয়ে প্রবেশের সুযোগ থাকা প্রয়োজন। তবে সচিবালয়ে যাদের কোনো নির্দিষ্ট দায়িত্ব নেই, তাদের অপ্রয়োজনে সচিবালয়ে প্রবেশের সুযোগ থাকা উচিত নয়। বিষয়টি সবাইকে উপলব্ধি করা প্রয়োজন। 
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সভায় সিনিয়র উপপ্রধান তথ্য কর্মকর্তা মতামত ও সুপারিশ প্রদান করতে গিয়ে বলেন, পিআইডি থেকে বিভিন্ন মিডিয়া প্রতিনিধির জন্য অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড ইস্যু করা হয়। এই কার্ড স্থায়ী এবং অস্থায়ী প্রকৃতির। এ দুই প্রকার কার্ডের সংখ্যা ৬ হাজার ৫৩১টি। তার মধ্যে স্থায়ী কার্ড হচ্ছে এক হাজার ৩৬৭টি এবং অস্থায়ী কার্ড হচ্ছে ৫ হাজার ১৪৬টি। বিভিন্ন কারণে ৩ হাজার ২৬৭টি স্থায়ী ও অস্থায়ী আ্যক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে, প্রতিনিয়ত মিডিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এরই মধ্যে অনলাইন পত্রিকার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২৩৫টি। রেজিস্ট্রেশনের জন্য প্রেরণ করেছে ২ হাজার ২১৭টি। এত বিপুল সংখ্যক কার্ডধারী মিডিয়া প্রতিনিধি যথেচ্ছভাবে অতি গুরুত্বপূর্ণ সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে বাংলাদেশ সচিবালয়ে প্রবেশ করছেন। সিনিয়র উপপ্রধান তথ্য কর্মকর্তা বলেন, কোন নীতিমালায় বা কোথাও লিখিত নেই যে, অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডধারী মিডিয়া প্রতিনিধিরা সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত সচিবালয়ে প্রবেশ করতে পারবেন। অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড হলো মিডিয়া প্রতিনিধিদের পেশাগত স্বীকৃতি এবং সুবিধা। এ দিয়ে সংরক্ষিত বা কেপিআইতে প্রবেশ করার সুযোগ নেই।
নীতিমালা অনুযায়ী বিভিন্ন পত্রিকার সার্কুলেশন অনুযায়ী মিডিয়া প্রতিনিধিদের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডের সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়। বিস্তারিত আলোচনা শেষে সিদ্ধান্ত হয় যে, প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন গাইড তথা নীতিমালায় অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডধারী মিডিয়া প্রতিনিধি সংরক্ষিত এলাকা বাংলাদেশ সচিবালয়ে প্রবেশের ব্যবস্থা/অনুমতি নেই। সে ক্ষেত্রে প্রধান তথ্য কর্মকর্তা অতিদ্রুত সব মিডিয়ার শীর্ষ সংগঠনের সঙ্গে সভা করে নীতিমালা অনুসরণপূর্বক সংবাদ কর্মীদের সচিবালয়ে প্রবেশ পাস প্রদানের জন্য জননিরাপত্তা বিভাগে প্রস্তাব প্রেরণ করবেন। জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে সচিবালয়ে প্রবেশ পাস ইস্যু করা হবে।
বৈঠকের আলোকে গৃহীত সিদ্ধান্ত মোতাবেক, গত দুই মাসে এ বিষয়ের সর্বশেষ অগ্রগতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানাতে পারেনি পিআইডি। ফলে সিদ্ধান্তও বাস্তবায়ন করতে পারছেন না স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ। বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়ে ৩১ মার্চ জননিরাপত্তা বিভাগের উপসচিব মো. ফিরোজ উদ্দিন খলিফা তথ্য সচিব, প্রধান তথ্য কর্মকর্তা, জননিরাপত্ত বিভাগের সচিবের একান্ত সচিব, সচিবালয়ে কর্মরত পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার, জননিরাপত্তা বিভাগের যুগ্মসচিব রাজনৈতিক-১ এবং অতিরিক্ত সচিব রাজনৈতিক ও আইসিটির ব্যক্তিগত সহকারীকে পত্র দেওয়া হয়েছে। ওই পত্রে বলা হয়, গুরুত্বপূর্ণ এ বৈঠকের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সব মিডিয়া শীর্ষ সংগঠনের সঙ্গে সভা করে নীতিমালা অনুসরণ করে সংবাদ কর্মীদের সচিবালয়ে প্রবেশ পাস প্রদানের জন্য জননিরাপত্তা বিভাগে প্রস্তাব প্রেরণের জন্য বলা হলো।