ক্রিকেটবিশ্বকে চমকে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৫ উইকেটে হারিয়ে আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ; এবার টাইগারদের লক্ষ্য বিশ্বকাপ। সেই মিশন শুরু হচ্ছে আজ। ডাবলিনে শুক্রবার ম্যাচ শেষ করে বিলম্ব করেনি পুরো দল। বাংলাদেশ সময় শনিবার রাত আড়াইটায় বিশ্বকাপ দলের ১৩ সদস্য লেস্টারে পৌঁছেছেন। অধিনায়ক মাশরাফি মুর্তজা ও ওপেনার তামিম ইকবাল ছাড়া বিশ্বকাপ দলের বাকি ক্রিকেটাররা তিন দিন সেখানে ক্যাম্প করবেন।
লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে সাকিব-মুশফিকদের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন বিসিবির মিডিয়া ম্যানেজার রাবিদ ইমাম ও অ্যান্টি করাপশন ইউনিট প্রধান মঞ্জুর মোরশেদ। সেখান থেকে একসঙ্গে টিম-বাসে প্রায় দেড় ঘণ্টা যাত্রা শেষে বাংলাদেশ সময় রাত আড়াইটায় লেস্টারে পৌঁছায় দল, ২৩ মে পর্যন্ত সেখানে থাকবেন মুশফিকরা। যদিও তিন দিনের ক্যাম্পে নেই তামিম-মাশরাফি। অধিনায়ক এসেছেন দেশে, তামিম গেছেন দুবাই। ২৩ মে মাশরাফি ও তামিম দলের সঙ্গে যোগ দেবেন। লেস্টারে বিসিবির খরচে টাইগারদের ক্যাম্প করতে হবে, নিরাপত্তা সংক্রান্ত দায়দায়িত্বও বিসিবির। বৃহস্পতিবার লেস্টার ছেড়ে প্রস্তুতি ম্যাচের ভেন্যু কার্ডিফে যাবে বাংলাদেশ দল। তখনই আইসিসির প্রটোকল পাবে তারা। ২৪ মে থেকে শুরু হবে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচগুলো। কার্ডিফে এক দিন অনুশীলন শেষে ২৬ মে ভারত ও ২৮ মে পাকিস্তানের বিপক্ষে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে টাইগাররা। ২৯ মে কার্ডিফ থেকে লন্ডনে ফিরবে দল। ২ জুন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওভালে শুরু হবে টাইগারদের বিশ্বকাপ মিশন। গতবার অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলেছিল বাংলাদেশ। এবার স্বপ্নটা আরও বড়। তাতিয়ে দিয়েছে ত্রিদেশীয় সিরিজ।
তবে আয়ারল্যান্ডের কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে বেশ কষ্টই হয়েছিল ক্রিকেটারদের। প্রচ- ঠান্ডায় প্রায় জবুথবু হয়ে স্বাগতিক ‘এ’ দলের বিপক্ষে ৮৮ রানের হার দিয়ে শুরু হয়েছিল প্রস্তুতি। ড্রেসিংরুমে অধিনায়ক মাশরাফির প্রেরণাই তেতে উঠতে ভূমিকা রেখেছেÑ জানান অলরাউন্ডার ফরহাদ রেজা। ত্রিদেশীয় সিরিজে অপ্রতিরোধ্য বাংলাদেশের পেছনের রহস্যটা তুলে ধরেছেন ফরহাদ, ‘প্রথম থেকে তিন বিভাগে আমরা ভালো খেলেছি। অনুশীলন ম্যাচে ভালো খেলতে পারিনি। প্রচ- ঠান্ডা ছিল, আমরা মানিয়ে নিতে পারছিলাম না। মাশরাফি ভাই ড্রেসিংরুমে কথা বলেছেন, যা প্রেরণা দিয়েছে। ফাইনালে তো সবাই খুব ভালো করেছে। এ জয়, সত্যিকার অর্থেই অসাধারণ।’
ফাইনালে ডিএল মেথডে ২৪ ওভারে ২১০, এত বড় লক্ষ্য তাড়া করে জেতার রেকর্ড খুব বেশি নেই বাংলাদেশের; লক্ষ্য স্থির হওয়ার পর মনের অবস্থা কী হয়েছিল? ফরহাদের জবাব, ‘এক মুহূর্ত মনে হয়নি ম্যাচটা হারব আমরা। সবার মধ্যে জেদ ছিল। যেভাবেই হোক, শেষ পর্যন্ত লড়াই করার একটা মানসিকতা ছিল।’ গত কয়েক মৌসুম ধরে ঘরোয়া ক্রিকেটে দুর্দান্ত নৈপুণ্য করার পুরস্কার হিসেবেই ত্রিদেশীয় সিরিজ সুযোগ পেয়েছিলেন ফরহাদ। সিরিজের মূল ম্যাচে সুযোগ হয়নি, তবে প্রস্তুতি ম্যাচটি খেলেছিলেন, ৬৬ রান দিয়ে ১ উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি ব্যাট হাতে করেছেন ১৫ রান। দীর্ঘদিন পর জাতীয় দলের হয়ে সফর করার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে ফরহাদ বলেন, ‘অনেক দিন পর গিয়েছি সবার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ব্যাপার ছিল। তবে সবকিছুই ঠিকভাবে হয়েছে। খুব ভালো লেগেছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, আমরা যেভাবে খেলতে চেয়েছি, সেভাবেই খেলতে পেরেছি।’ ফরহাদ শনিবার প্রায় মধ্যরাতে দেশে ফিরে গতকাল সকালে যোগ দিয়েছেন এলিট স্কিল ক্যাম্পে। ঈদের আগে ক্যাম্পে বেশ কিছুদিন কাজ করবেন বলে জানালেন তিনি।
সৌম্য সরকারের ব্যাটিংয়ের মূলমন্ত্র, ভয়ডরহীন মানসিকতা। কিন্তু এ মন্ত্রে আস্থা হারিয়ে ফেলেছিলেন, মনে ঢুকেছিল সংশয়ের ঘুণপোকা, হারিয়ে খুঁজছিলেন নিজেকে। এবার দেশ ছাড়ার আগে ঠিক করেছিলেন, ভয়কে জয় করবেন। ত্রিদেশীয় সিরিজে রান করার চেয়েও সৌম্যর বড় তৃপ্তি, নিজের সঙ্গে সেই লড়াইয়ে জয়, লেস্টারে পৌঁছে বাংলাদেশি গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘এখন আমার হারানোর আর ভয় নেই। আয়ারল্যান্ডে আসার আগে ভেবেছি, অনেক হয়েছে। আর এসব ভেবে লাভ নেই।’ ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রতিটি ম্যাচে ম্যাচসেরার পুরস্কারের পাশাপাশি আরেকটি স্বীকৃতি ছিল, ‘ফাউন্ডেশন অব দ্য ম্যাচ।’ ম্যান অব দ্য সিরিজের মতো যদি ‘ফাউন্ডেশন অব দ্য সিরিজ’ থাকত, তাহলে সেই পুরস্কারের জোর দাবিদার হতেন সৌম্য। বাংলাদেশের শিরোপার ভিত তো তার ব্যাটেই গড়া! ফাইনালে বাংলাদেশের কঠিন রান তাড়া সহজ করে দিয়েছিল সৌম্যর ৪১ বলে ৬৬ রানের ইনিংস। ফাইনালে ওঠার পথেও বাংলাদেশের দুটি জয়ে সুর বেঁধে দিয়েছিল তার ব্যাট। করেছিলেন ৬৮ বলে ৭৩ ও ৬৭ বলে ৫৪ রান। তার ৪৪ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে টানা তিন ইনিংসে পঞ্চাশ ছোঁয়া হলো এই প্রথমবার।