আজ ১৫তম তারাবিতে সূরা মুমিনুন, সূরা নুর এবং সূরা ফুরকান (১-২০) পড়া হবে। পারা হিসেবে আজ পড়া হবে ১৮তম পারা। আজকের তারাবিতে পঠিতব্য অংশের বিষয়বস্তু তুলে ধরা হলোÑ
দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশের ইসলাম পাতায় ‘আজকের তারাবি’ শিরোনামে প্রতিদিন তারাবি নামাজে কোরআন মজিদের যে অংশটুকু তেলাওয়াত করা হবে তার সারমর্ম ২৭ রমজান পর্যন্ত ছাপানো হবে। মসজিদের সম্মানিত ইমাম বা কমিটির দায়িত্বশীলদের খেদমতে তারাবির আগে বা পরে এ অংশটুকু মুসল্লিদের উদ্দেশে পড়ে শোনানোর অনুরোধ জানাচ্ছি।
খুলনার লবণছড়ার বাইয়তুল আমিন জামে মসজিদে প্রতিদিন তারাবি নামাজের আগে এই নিবন্ধটি পাঠ করা হয়
২৩. সূরা মুমিনুন (মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত ১১৮, রুকু ৬)
সূরাটিতে দ্বীনের বিভিন্ন মূলনীতি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। সূরার প্রথম ৯ আয়াতে এমন কিছু গুণের কথা বলা হয়েছে, যা অর্জনের মাধ্যমে ব্যক্তি সফল মোমিন হতে পারে এবং হতে পারে জান্নাতুল ফেরদাউসের অধিকারী। গুণগুলো হলো, রিয়া ও কপটতামুক্ত খাঁটি ঈমান, নামাজের মধ্যে খুশু তথা আল্লাহর সামনে ভয় ও বিনয়ের সঙ্গে সলাতে দাঁড়ানো, অনর্থক কথাবার্তা-কাজকর্ম ও জেনা-ব্যভিচার এবং অশ্লীলতা থেকে মুক্ত থাকা, জাকাত প্রদান, আমানত রক্ষা করা এবং প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করা, নিয়মিত নামাজ আদায় এবং নামাজের সময়, আদব ও রুকনগুলোর প্রতি যতœবান থাকা।
এর পর মানুষ ও সাত আসমান-জমিনের সৃষ্টি, বৃষ্টিবর্ষণ এবং এর মাধ্যমে বিভিন্ন ফল-ফসলের উৎপাদন, চতুষ্পদ প্রাণী ও এদের মাঝে দুধ, গোশত, পশম, বহনক্ষমতা, ধৈর্যশীলতা প্রভৃতি বিভিন্ন উপকারিতার সৃষ্টি প্রসঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার কুদরতের প্রমাণ পেশ করা হয়েছে। সূরায় কিছু আম্বিয়া (আ.) এর ঘটনা আলোচনা করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে নুহ, হুদ, সালেহ, মুসা, হারুন এবং ঈসা আলাইহিমুস সালামের ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে। তাদের সবার একই দাওয়াত, একই কার্যক্রম এবং একই উদ্দেশ্য ছিল। যারা নবীদের আদর্শ থেকে বিমুখ তারা সবসময় পরস্পর ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত, তাদের অন্তর অজ্ঞতা, বিস্মৃতি ও অলসতায় নিপতিত। অন্যদিকে আল্লাহর কিছু বান্দা আছেন যারা পরস্পরকে মহব্বত করে, তাদের অন্তর হেদায়েতের আলোয় আলোকিত, তাদের মাঝে রয়েছে আল্লাহর ভয়, রিয়া ও কপটতামুক্ত খাঁটি ঈমান। তারা নেক আমল করা সত্ত্বেও এই ভয়ে থাকে যে, ‘জানা নেই, আমার এই আমল কবুল হলো কি না?’ খাঁটি ঈমানদারদের বিপরীতে এমন কিছু দুর্ভাগাও রয়েছে, যারা কোরআন এবং কোরআনের নবীর সঙ্গে ঠাট্টা-বিদ্রƒপ করে। সূরায় তাদের বিভিন্ন আপত্তির জবাব দেওয়া হয়েছে। আল্লাহর একত্ববাদ সাব্যস্তকরণ এবং শিরক খ-নের পর সূরার শেষ দিকে বলা হয়েছে, কেয়ামতের দিন যারা সৌভাগ্যবান তাদের আমলের পাল্লা ভারী হবে আর দুর্ভাগাদের আমলের পাল্লা হবে হালকা; ওই দিন জাগতিক কোনো সম্পর্ক কাজে আসবে না। সূরার শেষ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে পৃথিবীর সব মানুষকে এই শিক্ষা দিয়েছেন, তোমরা এই দোয়া করো, হে আমার রব! আমার প্রতি অনুগ্রহ করুন এবং আমাকে ক্ষমা করে দিন। আপনিই শ্রেষ্ঠ অনুগ্রহকারী।
২৪. সূরা নুর (মদিনায় অবতীর্ণ, আয়াত ৬৫, রুকু ৯)
সূরাটিকে ‘নুর’ বলার কারণ হলো, সূরাটিতে ‘নুর’ শব্দটি রয়েছে। তাছাড়া সূরায় এমন সব আদব, সৎগুণ এবং বিধিবিধান ও নিয়মকানুনের কথা বর্ণিত হয়েছে, যা সমাজ জীবনকে আলোকিত করে দেয়। ব্যভিচার, চারিত্রিক অপবাদ, অপপ্রচারে লিপ্ত হওয়ার শাস্তি, ‘লিআন’ এর বিধান, দৃষ্টির হেফাজত, পর্দা, অতিশয় বৃদ্ধা নারীর পর্দা, ঘরে প্রবেশের অনুমতি, বিবাহযোগ্য নরনারী এবং বিধবাদের বিয়ের ব্যবস্থা করা, দাস-দাসীদের ব্যাপারে নির্দেশনা, বৈঠক থেকে ওঠা এবং আল্লাহর রাসুলকে খেতাব করার আদব তথা সমাজ জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ আদব প্রসঙ্গে সূরায় আলোচনা রয়েছে। সূরায় ‘ইফকে’র বিখ্যাত ঘটনা সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে।
আম্মাজান হজরত আয়েশাকে (রা.) একটি কুচক্রী মহল মিথ্যা অপবাদ দিয়েছিল। আল্লাহ তায়ালা দশটি আয়াত নাজিল করে তাদের সে অপবাদের জবাব দিয়েছেন এবং আম্মাজান আয়েশার (রা.) চারিত্রিক পবিত্রতার ঘোষণা দিয়েছেন। সূরায় বলা হয়েছে, আল্লাহই হলেন আসমানগুলো ও জমিনের নুর। তিনি যাকে খুশি তাকে তাঁর নুরের পথ দেখান। যারা সে নুরের ছোঁয়া পায় তারা দিন-রাত আল্লাহর তসবিতে মশগুল থাকে; দুনিয়ার কোনো ব্যস্ততা তাদের আল্লাহর জিকির থেকে গাফেল রাখতে পারে না। আর যারা খোদার নুর-বঞ্চিত তারা ভ্রষ্টতার অন্ধকারে নিপতিত, তারা সবসময় মরীচিকার পেছনে ছুটছে।
স্রষ্টার একত্ববাদের বিভিন্ন প্রমাণের প্রতি নজর বুলানোর আহ্বান জানানো হয়েছে আলোচ্য সূরায়। এরপর বলা হয়েছে, মোমিন বান্দা সর্বাবস্থায় আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্যে নিজেকে নিয়োজিত রাখে। আর মোনাফেকরা সবসময় সুযোগের সন্ধানে থাকে। আল্লাহ তায়ালা সবার অবস্থা ও আমল সম্পর্কে সম্যক অবগত এবং তারই কাছে ফিরে যেতে হবেÑ এ মর্মে ঘোষণার মাধ্যমে সূরাটি সমাপ্ত হয়েছে।
২৫. সূরা ফুরকান (মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত ৭৭, রুকু ৬)
সূরার শুরুতে কোরআন মজিদের আলোচনা রয়েছে। কোরআনের ব্যাপারে মুশরিক জাতি নানা রকমের আপত্তিকর প্রশ্ন তুলত। সূরায় সে সবের জবাব দেওয়া হয়েছে। সূরাটিতে কোরআনের আলোচনার পরে নবীজির (সা.) আলোচনা এসেছে। একশ্রেণির লোক জেদের বশবর্তী হয়ে নবীজিকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করত। তাদের ধারণা ছিল, ‘কোনো মানুষের পক্ষে রাসুল বা নবী হওয়া সম্ভব নয়। নবী-রাসুল তো হবেন ফেরেশতাদের কেউ। আর যদি মেনেও নেওয়া হয়, মানুষ নবী বা রাসুল হতে পারে, তাহলে তিনি তো হবেন পার্থিব বিচারে অবস্থাশালী এবং নেতৃস্থানীয়, কোনো অসহায় এতিম কখনও নবী হতে পারে না।’ তাদের এ ধরনের অসার ধ্যান-ধারণার মজবুত ও সুদৃঢ় জবাবের মাধ্যমে ১৮তম পারা সমাপ্ত হয়েছে।
হ রাশেদুর রহমান
পেশ ইমাম ও খতিব, বুয়েট সেন্ট্রাল মসজিদ