আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ২০-০৫-২০১৯ তারিখে পত্রিকা

সামাজিক অবক্ষয় রোধে সিয়াম সাধনা

মো. রুহুল আমিন খান
| সভ্যতা ও সংস্কৃতি

সবাই যদি রাসূল (স.) এর কথা মেনে চলে এবং বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করে তাহলে হ্রাস পাবে সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়। সমাজে থাকবে না পারিবারিক কলহ, অশ্লীলতা, অবাধ যৌনাচার, ঝগড়া-বিবাদ, হানাহানি-মারামারি ও সমকামিতার মতো ঘৃণিত কোনো কাজ। আর কোনো নারীকে মাহে রমজানে ধর্ষণের শিকার হতে হবে না

শুক্রবার মসজিদে হারামে পবিত্র নগরী মক্কায় নিয়োজিত নিরাপত্তারক্ষীদের মধ্যে শহীদ পরিবারের শিশুদের জন্য ইফতারের আয়োজন করা হয়। সেখানে তাদের হাতে বিভিন্ন উপহারসামগ্রী তুলে দেওয়া হয়। তাদের অভ্যর্থনা জানান হারাম শরিফের অন্যতম খতিব শায়খ ড. ফয়সাল বিন জামিল গাজ্জাবিসহ সরকারি কর্মকর্তারা। রমজান উপলক্ষে সামাজিক সম্প্রীতি ছড়াতে হারামাইন শরিফাইনে নিয়মিতই এমন নানা আয়োজন থাকে ষ ছবি ও সংবাদ হারামাইন অফিসিয়াল ওয়েবসাইট

 

মাহে রমজান সিয়াম সাধনার মাস। সিয়াম সাধনা বা রোজা হচ্ছে আত্মশুদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মানুষ  নিজেকে অনুধাবন করতে পারে। উপলব্ধি করতে পারে ক্ষুধার্ত ও নিপীড়িত মানুষের দুঃখ-কষ্ট।
পরকালীন জীবনের কথা চিন্তা করে তাদের অন্তরে জাগ্রত হয় আল্লাহর ভয়। নিজেকে করে পরিশুদ্ধ। ফলে গোনাহের চিন্তা করতেও তাদের শরীর কেঁপে ওঠে। তারা গোনাহ ও সামাজিক মূল্যবোধবিরোধী কোনো কাজে জড়িত হতে পারে না। সামাজিক মূল্যবোধ তথা সততা, কর্তব্যপরায়ণতা, নিষ্ঠা, ধৈর্য, উদারতা, শিষ্টাচার, সৌজন্যবোধ, নিয়মানুবর্তিতা, অধ্যবসায়, দেশপ্রেম, কল্যাণবোধ, পারস্পরিক মমতাবোধ ইত্যাদি নৈতিক গুণাবলি ফুটে ওঠে তাদের আচার-আচরণে।
সিয়াম সাধনা বা রোজা মানে শুধু উপবাস থাকা নয়। খানাপিনা ও যৌনকর্মসহ সব পাপাচার থেকে বিরত থাকাই প্রকৃত সিয়াম সাধনা। রোজা বা সিয়াম সাধনা হচ্ছে গোনাহ থেকে আত্মরক্ষার ঢাল। রাসুল (সা.) বলেন, ‘... রোজা ঢালস্বরূপ। অতএব তোমাদের কেউ যেন রোজার দিনে অশ্লীল কথা না বলে এবং হৈ-হট্টগোল না করে। আর যদি কেউ তাকে গালাগাল করে অথবা তার সঙ্গে লড়াই-ঝগড়া করে, তাহলে সে যেন বলে, আমি রোজা রেখেছি...।’ (বোখারি)। 
সিয়াম সাধনা শুধু একটি ইবাদতই নয় বরং আত্মশুদ্ধি ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। তাই রোজাদারকে মিথ্যা কথা, সব অবৈধ ও অশালীন কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। তা নাহলে সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থেকেও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা সম্ভব হবে না। তাই এ ব্যাপারে সতর্ক করে রাসুল (স.) বলেন, যে ব্যক্তি রোজা রেখে মিথ্যা কথা বলা এবং  মিথ্যা আচরণ থেকে বিরত হলো না তার ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত থাকা আল্লাহর কোনো প্রয়োজন ছিল না। (বোখারি)।
যিনি রোজা রাখেন বা সিয়াম সাধনা করেন সব ক্ষেত্রে তাকে সংযত হতে হবে। দেহ ও মনকে সব পাপ কাজ থেকে বিরত রাখতে হবে। রাসুল (সা.) বলেন, তুমি যখন রোজা রাখবে তখন তোমার কর্তব্য হবে তোমার কান, চোখ, মুখ, হাত, পা এবং সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে আল্লাহর অপছন্দনীয় কাজ থেকে বিরত রাখা। (কাশফুল মাহজুর)।
সবাই যদি রাসূল (সা.) এর কথা মেনে চলে এবং বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করে তাহলে হ্রাস পাবে সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়। সমাজে থাকবে না পারিবারিক কলহ, অশ্লীলতা, অবাধ যৌনাচার, ঝগড়া-বিবাদ, হানাহানি-মারামারি ও সমকামিতার মতো ঘৃণিত কোনো কাজ। আর কোনো নারীকে মাহে রমজানে ধর্ষণের শিকার হতে হবে না।
রোজার মাধ্যমে মানুষের প্রবৃত্তি পদদলিত হয়। নফসের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়। পাপাচার ও অশালীন কাজে আসে অনাগ্রহ। ফলে রোজাদার সিয়াম সাধনার মাধ্যমে নিজেকে করতে পারে পরিশুদ্ধ, বাড়াতে পারে ঈমানের তেজ। আর যারা নিজেদের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করতে পারে তারাই সফলতা লাভ করে। আল্লাহ তাদের সম্পর্কে বলেন, নিঃসন্দেহে সে সফলকাম হয়েছে, যে নিজেকে পরিশুদ্ধ করেছে। এবং সে ব্যর্থ হয়েছে, যে (নফসকে) নিজেকে  কলুষিত করেছে।’ (সূরা আশ শামস : ৯, ১০)। 
তাই আসুন মাহে রমজানের সিয়াম সাধনার মাধ্যমে নিজেদের সংশোধন করি। আত্মাকে করি পরিশুদ্ধ। সবাই যদি নিজেকে সংশোধন করতে পারি তাহলে হ্রাস পাবে সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়।