আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ২০-০৫-২০১৯ তারিখে পত্রিকা

বাজেট ২০১৯-২০

ঋণনির্ভরতা বাড়ছে অভ্যন্তরীণ উৎসের

মৌসুমী ইসলাম
| প্রথম পাতা

-ঘাটতি পূরণে ব্যাংক
থেকে ৫৪,৮০০ এবং
-সঞ্চয়পত্র থেকে ৩০,৮০০
-কোটি টাকা ঋণ লক্ষ্য

 

 

বরাবরের মতোই আগামী অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি অর্থায়নেও বাড়ছে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ নির্ভরতা। আগামী অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংক ব্যবস্থা এবং সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য ব্যাংক বহির্ভূত খাত থেকে সম্ভাব্য ঋণের লক্ষ্য ৮৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। আর বৈদেশিক সূত্র থেকে ঋণের সম্ভাব্য লক্ষ্যমাত্রা ৬০ হাজার কোটি টাকা। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জা আজিজুল ইসলাম মনে করেন, সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নির্ভরতায় বাড়ছে সুদের দায়। 

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটের সম্ভাব্য আকার ৫ লাখ ২৩ হাজার কোটি টাকা। বিশাল অংকের এ বাজেটে ঘাটতি দাঁড়াচ্ছে ১ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা। বিশাল এ ঘাটতি অর্থায়নে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ বাড়াবে সরকার। বৈদেশিক সূত্র থেকে যে ঋণ লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে তা জিডিপির ২ দশমিক ১ শতাংশ। আর অভ্যন্তরীণ ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ লক্ষ্যমাত্রা ৫৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১ দশমিক ৯ শতাংশ। এছাড়া সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য ব্যাংক বহির্ভূত খাত থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ধরা হচ্ছে ৩০ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। যা জিডিপির ১ শতাংশ।

চলতি বাজেটে ঘাটতি ও অর্থায়ন : চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ৪ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ঘাটতি ধরা হয় ১ লাখ ২৫ হাজার ২৯৪ কোটি টাকা। যা জিডিপির ৪ দশমিক ৯ শতাংশ। তবে, বছরের মাঝামাঝি সময়ে এসে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ২৫ হাজার ৯৩৭ কোটি টাকা। তখন ঘাটতির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় জিডিপির ৫ শতাংশ। মূল বাজেটের ঘাটতির বিপরীতে বৈদেশিক সূত্র থেকে অর্থায়নে প্রাক্কলন ছিল ৫৪ হাজার ৬৭ কোটি টাকা। যা সংশোধিত বাজেটে কিছুটা কমিয়ে নির্ধারণ হয় ৪৫ হাজার ২৭৯ কোটি টাকা। আর অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য সূত্র থেকে অর্থায়নের পরিমাণ ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার কোটি টাকা।

কিছুটা বেড়েছে বিদেশি সহায়তা : বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে কয়েক বছরের সঞ্চয়পত্রই মূল উৎস। কারণ বাজেটে যে ঋণ লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে বছর শেষে ঋণ দাঁড়াচ্ছে তার দ্বিগুণেরও বেশি। চলতি অর্থবছরের বাজেটে অভ্যন্তরীণ সূত্র থেকে সংগ্রহের লক্ষ্য ছিল ৭১ হাজার ২২৬ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে এবার লক্ষ্য ধরা হয় ৪২ হাজার ২৯ কোটি টাকা। আর সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক বহির্ভূত খাত থেকে ঋণ লক্ষ্য ধরা হয় ২৯ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা। তার মধ্যে শুধু সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ লক্ষ্য ধরা হয় ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা। কিন্তু অর্থবছরের ৯ মাসে এ খাত থেকে ঋণ হয়েছে ৩৯ হাজার কোটি টাকার বেশি। বাজেট বক্তৃতায় অভ্যন্তরীণ উৎসের ওপর চাপ কমাতে বৈদেশিক সহায়তা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তবে, পাইপলাইনে থাকা বৈদেশিক সাহায্যের ব্যবহার কিছুটা বাড়ায় চলতি অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে মনে করছে অর্থবিভাগ। চলতি অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত প্রকল্প সাহায্যের ব্যবহার হয়েছে বার্ষিক বরাদ্দের প্রায় ৬১ দশমিক ১ শতাংশ। যা এর আগের বছরের একই সময়ে হার ছিল বার্ষিক বরাদ্দের ৪৭ দশমিক ৭ শতাংশ।
কমছে ব্যাংক ঋণনির্ভরতা : চলতি অর্থবছরের জন্য ঘাটতি অর্থায়নে ব্যাংক থেকে ঋণের লক্ষ্য ধরা হয় ৪২ হাজার ২৯ কোটি টাকা। অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে সরকার ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে নিট ঋণ নিয়েছে ৩ হাজার ১৬৮ কোটি টাকা। যেখানে আগের বছরের একই সময়ে ব্যাংক থেকে ঋণ না নিয়ে বরং পরিশোধ করা হয়েছিল ৮ হাজার ৬৯৩ কোটি টাকা। এ হিসাবে ৬ মাসে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে প্রকৃত ঋণ নেওয়া হয়েছে প্রায় সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা। গেল ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ব্যাংকিং খাত থেকে ২৮ হাজার ২০৩ কোটি টাকা ঋণ সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে শেষ পর্যন্ত ১৮ হাজার কোটি টাকা নিয়েছে সরকার। সঞ্চয়পত্রে সুদহার যেখানে সাড়ে ১১ শতাংশ, সেখানে ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে সুদ পরিশোধ করতে হয় ক্ষেত্র বিশেষ ৬ শতাংশের নিচে। সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নিলে উচ্চ সুদ গুনতে হয়, তারপরও ব্যাংক ব্যবস্থায় ঝুঁকছে না সরকার। এ প্রসঙ্গে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এবি মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে বৈদেশিক সহায়তার দিকে আরও বেশি নজর দেওয়া প্রয়োজন। প্রতিবছরই দেখা যাচ্ছে, ব্যাংকব্যবস্থা এবং সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ বাড়ছে। বিশেষ করে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়ার ফলে সরকারের সুদ বাবদ ব্যয় বাড়ছে। সরকার মনে করে, সঞ্চয়পত্রে উচ্চ সুদ সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের একটি অংশ। ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নিলে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে সংকট তৈরি হতে পারে। তাই সরকার সঞ্চয়পত্রের দিকেই ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে ঝুঁকিমুক্ত মনে করছে। সার্বিকভাবে কর কাঠামো সংস্কার করার প্রয়োজন, এতে ঋণের দায় কমবে এবং সরকার বাজেট বাস্তবায়নে আরও সক্ষম হবে।