আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ২০-০৫-২০১৯ তারিখে পত্রিকা

লোকসভার শেষ ভোট

মোদিরই ক্ষমতায় থাকার আভাস

কলকাতা প্রতিনিধি
| প্রথম পাতা

বুথফেরত জরিপে দেখা গেছে ভারতে বিনা বাধায় আবারও সরকার গঠন করতে যাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদি। রিপাবলিক টিভি সি ভোটারের সমীক্ষায়ও তেমনই ইঙ্গিত। সি ভোটারের সমীক্ষার ইঙ্গিত, এনডিএ জোট পেতে পারে ২৮৭টি আসন। ইউপিএ জোট পেতে পারে ১২৮টি আসন। অন্যদের ঝুলিতে যেতে পারে ১২৭টি। এছাড়া টাইমস নাও-ভিএমআর’র বুথফেরত সমীক্ষা আভাস দিয়েছে, এনডিএ পেতে পারে ৩০৬টি আসন। ১৩২টি আসন পেতে পারে ইউপিএ। অন্যরা ১০৪টি আসন। তবে অনেক সময়ই এই বুথফেরত সমীক্ষা কাজে লাগেনি। এর আগে এক লোকসভা নির্বাচনে অটল বিহারি বাজপেয়ির ক্ষমতায় আসার তথ্য সমীক্ষায় পাওয়া গেলেও ভোটের ফলে তা হয়নি।

এদিকে শেষ দফার লোকসভা নির্বাচনে রোববার পশ্চিমবঙ্গসহ বিভিন্ন স্থানে বোমাবাজি, ছাপ্পা, বুথ জ্যাম, কেন্দ্রীয় বাহিনীর লাঠিচার্জ এবং তৃণমূল ও বিজেপির সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। ভোটগ্রহণ শুরুর পর থেকেই পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র থেকে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের খবর আসতে থাকে। 

খোদ কলকাতার মুদিয়ালি দেশপ্রাণ বীরেন্দ্রনাথ ইনস্টিটিউশনে ভোট দিতে এসে কেন্দ্রীয় বাহিনীর বাধার মুখে পড়েন ওই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী মালা রায়। দমদমে প্রিসাইডিং অফিসারকে হুমকি ও কলকাতার বেলগাছিয়ার গুরুদাসপল্লীর বুথে

সিপিএম এজেন্টকে বুথে বসতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। একই দলের বিরুদ্ধে বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের মিনাখায় বুথ জ্যামের অভিযোগ ওঠে কলকাতার তিলজলায় বিজেপি প্রার্থী রাহুল সিনহাকে ঘিরে বিক্ষোভ ও ইটবৃষ্টি। ইটের আঘাতে আহত হন দুই বিজেপি কর্মী। বারাসত কেন্দ্রের দেগঙ্গার পিলাবাড়িয়ায় তৃণমূল বিজেপি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। চলে বোমাবাজিও। মারধর করা হয় বিজেপি কর্মীদের। দেগঙ্গার নুরনগরে তৃণমূল বিজেপি সংঘর্ষে মাথা ফাটল এক বিজেপি কর্মীর। উত্তর কলকাতার পোস্তার রবীন্দ্র সরণিতে চলে বোমাবাজি। জানা যায়, বাইকে করে দুষ্কৃতকারীরা এসে বোমাবাজি করে পালিয়ে যায়। ভাঙচুর করা হয় যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রের মুকুন্দপুরে বিজেপি প্রার্থী অনুপম হাজরার গাড়ি। ডায়মন্ড হারবারেও বিজেপি প্রার্থীর গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। অভিযোগ তৃণমূলের বাইক বাহিনী পুলিশের সামনেই গাড়ি ভাঙ্গচুর করে। বারাসতের শাসনে কমিশনের কুইক রেসপন্স টিমের গাড়ি আক্রান্ত হয়। বারাসত লোকসভা কেন্দ্রের দেগঙ্গায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর সঙ্গে বচসায় জড়ায় তৃণমূল প্রার্থী কাকলি ঘোষ দস্তিদার। এদিন সকালে কলকাতার জোড়াসাঁকো এলাকায় বিজেপির বিদায়ী সাংসদ তথা গায়ক বাবুল সুপ্রিয়কে ঘিরে বিক্ষোভ দেখানো হয়। তাছাড়া ভাটপাড়া বিধানসভার উপনির্বাচনে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় ভাটিপাড়ার কাকিনাড়ায়। চলে ব্যাপক বোমাবাজি। কেন্দ্রীয় বাহিনী কড়া হাতে এলাকায় এলাকায় তল্লাশিতে নামে। শেষ দফার ভোট ঘিরে বারাসতের শাসনে তৃণমূল বিজেপি সংঘর্ষে এক বিজেপি কর্মীর মাথা ফেটে যায়। রায়দিঘিতেও চলে ব্যাপক বোমাবাজি। এক্ষেত্রে অভিযোগের তীর ওঠে বিজেপির দিকে। কলকাতা সংলগ্ন নিউটাউনে এদিন দুই ড্রাম ভর্তি বোমা উদ্ধার হয়। ভোটের সময় যতো গড়িয়েছে ততোই পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে বিক্ষিপ্ত অশান্তির খবর উঠে আসে।
শেষ দফায় যাদের ভাগ্য নির্ধারণ হবে : ভারতের লোকসভার নির্বাচনের শেষ দফায় অন্যতম নজরকাড়া লোকসভা কেন্দ্র উত্তরপ্রদেশের ‘বারাণসী’। এই কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী হিসাবে লড়াই করছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তার বিরুদ্ধে কংগ্রেসের প্রার্থী অজয় রাই, সমাজবাদী পার্টি ও বহুজন সমাজ পার্টির জোট প্রার্থী হয়েছেন শালিনী যাদব। এছাড়াও শেষ দফার নির্বাচনে হেভিওয়েট প্রার্থীদের মধ্যে আছেন বিজেপি প্রার্থী কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ, কেন্দ্রীয় শক্তি প্রতিমন্ত্রী রাজকুমার সিং, লোকসভার সাবেক স্পিকার কংগ্রেসের মীরা কুমার, কংগ্রেসের প্রার্থী শত্রুঘœ সিনহা, বিজেপি প্রার্থী ও কেন্দ্রীয় যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী মনোজ সিনহা। বিজেপির ভোজপুরী অভিনেতা রবি কিষাণ, আপনা দল প্রার্থী ও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী অনুপ্রিয়া সিং প্যাটেল, রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) প্রার্থী মিশা ভারতীকে (লালু প্রসাদের কন্যা)। সাবেক কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় লোক সমতা পার্টি (আরএলএসপি) উপেন্দ্র কুশওয়া, ঝাড়খ-ের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও ঝাড়খ- মুক্তি মোর্চা (জেএমএম) প্রধান শিবু সোরেন। কংগ্রেস প্রার্থী ও সাবেক মন্ত্রী মণিশ তিওয়ারি। কেন্দ্রীয় ন্যায় বিচার ও ক্ষমতায়ন প্রতিমন্ত্রী বিজেপির বিজয় সমপলা। বিজেপি প্রার্থী অভিনেতা সানি দেওল। কেন্দ্রের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রী বিজেপির হরসিমরাত কউর বাদল। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী (গৃহায়ন প্রতিমন্ত্রী) বিজেপির হরদীপ পুরি। বিজেপির অভিনেত্রী প্রার্থী কিরণ খের প্রমুখ। পশ্চিমবঙ্গে ডায়মন্ডহারবার কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির ভাতিজা অভিষেক ব্যনার্জি। দমদম কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী সাবেক কেন্দ্রীয় নগরায়ণ প্রতিমন্ত্রী সৌগত রায়, তার বিরুদ্ধে বিজেপির প্রার্থী সাবেক বিধায়ক সমীক ভট্টাচার্য। ১৯৯৮ ও ১৯৯৯ সালে এই কেন্দ্রে বিজেপি জয় পেলেও ২০০৪ সাল থেকে এটি তৃণমূলের দখলে। নজর থাকবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির একসময়ের কেন্দ্র ‘কলকাতা দক্ষিণ’ এর দিকেও। এই কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী চন্দ্র কুমার বসু (স্বাধীনতা সংগ্রামী নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর নাতনি), তৃণমূলের প্রার্থী মালা রায়। যাদবপুর কেন্দ্রে তৃণমূলের নবাগত প্রার্থী অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তী, বিজেপি প্রার্থী তৃণমূল থেকে আসা বর্তমান সংসদ সদস্য অনুপম হাজরা, সিপিআইএম প্রার্থী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য। বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী বসিরহাট কেন্দ্রে তৃণমূলের আরেক অভিনেত্রী প্রার্থী নুসরত জাহান, তার বিরুদ্ধে বিজেপির প্রার্থী দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু। গেলবার এই ৯টি কেন্দ্রেই জয়ী হয়েছিল তৃণমূলের প্রার্থীরা।