দায়িত্ব পালনের দুই বছর পূর্তিতে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) ভিসি অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেছেন, শিক্ষা, গবেষণা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের ক্ষেত্রে দেশের সবচেয়ে দ্রুত বিকাশমান বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে যবিপ্রবি। যবিপ্রবির প্রশাসনিক ভবনে রোববার সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
ভিসি বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে বিশ^বিদ্যালয়গুলোকে যে তিনটি গ্রুপে ভাগ করা হয়, তার মধ্যে গবেষণা বিশ^বিদ্যালয় প্রথম। কিন্তু বাংলাদেশে এখনও পর্যন্ত কোনো স্বীকৃত গবেষণা বিশ^বিদ্যালয় নেই। আমরা যবিপ্রবিকে গবেষণা বিশ^বিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছি। এ লক্ষ্যে শিক্ষকদের গবেষণা কর্মে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। এরই মধ্যে তিনটি গবেষণালব্ধ ফলাফলের পেটেন্ট রাইটের জন্য জমা দেওয়া হয়েছে, যা বাংলাদেশের অন্যান্য বিশ^বিদ্যালয়ের জন্য দৃষ্টান্ত। তিনি বলেন, বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বিশ^ র্যাঙ্কিংয়ে সম্মানজনক অবস্থানে নেই। এ বিশ^বিদ্যালয়ের সম্মানজনক র্যাঙ্কিংয়ে উত্তরণ ঘটাতে আমরা ভিশন ও মিশন নির্দিষ্ট করেছি। গবেষণা ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ আর্থিক সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। শিক্ষকেরা এখন গবেষণায় নিবিড় মনোযোগ দিচ্ছেন। এর ফলে তারা দুই কোটির অধিক টাকা গবেষণা অনুদান আনতে সক্ষম হয়েছেন। পিএইচডি গবেষকের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। পিএইচডি এবং এমফিল গবেষকদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় হলে বিশেষ আবাসিক সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। ফলে, বিদেশি শিক্ষার্থীরাও এখন এ বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি গবেষণায় আকৃষ্ট হচ্ছেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ভিসি বলেন, যবিপ্রবি প্রশাসন দুর্নীতির বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতিতে আছে। একটি নিয়োগের বিষয়ে দুর্নীতির কথা উঠেছিল, স্বচ্ছতার জন্য সেই প্রার্থীর নিয়োগও বাতিল করা হয়। দুর্নীতি ধরা পড়লে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেব। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা আমার সন্তান। তাদের নিরাপত্তার বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী, স্থানীয় সংসদ সদস্যগণ, পুলিশ প্রশাসন অবগত আছেন। প্রয়োজনে আমি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ে যাব। তিনি অভিভাবকদের আশ্বস্ত করে বলেন, একজন মানুষ ও পিতা হিসেবে আমার যতটুকু করার, ততটুকু করব। অভিভাবকদের বলব, আপনাদের কাছে সন্তান যতটুকু নিরাপদ থাকবে, আমার কাছেও ততটুকু নিরাপদ থাকবে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ভিসি বলেন, সবার প্রচেষ্টায় অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার বাস্তবায়ন হচ্ছে। আজকে সব বিভাগের স্নাতক শ্রেণির সব বর্ষের প্রথম সেমিস্টার পরীক্ষা একযোগে হচ্ছে, যা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিরল অর্জন। যবিপ্রবিতে তার যাত্রা মোটেই সুখকর ছিল না উল্লেখ করে তিনি বলেন, যশোরের শহরভিত্তিক রাজনীতি আমার আগমনকে স্বাগত জানায়নি। এমনকি তাদের সঙ্গে হাত মেলানোর জন্য হুমকিও দেওয়া হয়েছিল। যদি আমি সেটা করতাম, এ বিশ্ববিদ্যালয় আর বিশ্ববিদ্যালয় থাকত না। জাতীয় ও বিশ্ব উন্নয়নেও ভূমিকা রাখতে পারত না। তিনি আরও বলেন, গবেষণা কর্মকা-কে গতিশীল করার জন্য গত এক বছরে বিশ^মানের জিনোম সেন্টার, এ অঞ্চলের মৎস্য খাতের বিকাশ ও উৎকর্ষ সাধনের জন্য ‘হ্যাচারি অ্যান্ড ওয়েট ল্যাব’ স্থাপন করা হয়েছে। সব বিভাগের ল্যাবরেটরিগুলো আধুনিকায়নের জন্য প্রায় ৫০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প জমা দেওয়া হয়েছে। এডিবি অর্থায়নে অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত ‘আইসিটি সেন্টার ফর এক্সেলেন্স’ নামে একটি ভবন নির্মাণকাজ খুব শিগগিরই শুরু হতে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী সামনে রেখে, আগামী ১০ বছরের জন্য দেড় হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।