ইসলাম সম্প্রীতির ধর্মÑ এ কথা সর্বজন স্বীকৃত। ইসলামের শুরু থেকে এ পর্যন্ত অসংখ্য উদাহরণ তার বাস্তবতা। কিন্তু কখনও কখনও তা মানুষ বুঝতে ভুল করেছে। ভুল করেছে ইসলামের মৌলিক শিক্ষাকে ধারণ করতে। ফলে কিছু বিপথগামী অনুসারীর অসংযত আচরণকে প্রাধান্য দিয়ে ইসলামের মৌলিক দর্শনকে বিতর্কিত করার প্রচেষ্টা যেমন কখনও যৌক্তিক হিসেবে বিবেচিত হবে না, তেমনি তা গ্রহণযোগ্যতাও পাবে না। রাসুলুল্লাহ (সা.) যিনি সমগ্র মানুষের জন্য শুধু রহমতস্বরূপ আসেননি বরং তিনি সবার জন্য অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় আদর্শও, তিনি তার সমগ্র জীবনে সম্প্রীতির বাস্তব উদাহরণ হিসেবে নিজেকে যথাযথভাবে প্রকাশ করেছেন সফলভাবে। তাঁর (সা.) অনুসারীদের জীবনেও সম্প্রীতির বাস্তব উদাহরণ আমরা লক্ষ্য করি। ইসলাম এ ব্যাপারে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে সুস্পষ্ট ধারণা দিয়েছে।
সম্প্রীতির সমার্থকবোধক শব্দ অভিধানগুলোতে পাই ‘সদ্ভাব’, ‘সন্তোষ’, ‘আহ্লাদ’, ‘আনন্দ’ ইত্যাদি। একে অপরের মাঝে সদ্ভাব, সন্তোষজনক, আহ্লাদি, আনন্দপূর্ণ ইত্যাদি সম্পর্ককে সম্প্রীতি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। সুতরাং কোনো সমাজে যদি একে অপরের সঙ্গে সদ্ভাব, সন্তোষজনক, আনন্দপূর্ণ সম্পর্ক থাকে তাহলে তাকে সম্প্রীতির সমাজ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
প্রকৃত অর্থে ইসলামের মৌলিক বাণীই হলো সম্প্রীতি। সম্প্রীতিকে তাই সামাজিক জীবনের মূল ভিত্তি ধরে সব বিধান প্রণয়ন করা হয়েছে এ অর্থেÑ যাতে মানুষ শুধু দুনিয়াবি জীবনে শুধু নয় বরং মৃত্যু-পরবর্তী জীবনেও শান্তি লাভ করতে পারে। ইসলামের সামাজিক সম্প্রীতির মৌলিক সে ধারণার কিছু তুলে ধরা হলো :
সম্প্রীতি হবে আল্লাহর (সৃষ্টিকর্তা) সন্তুষ্টির জন্য : যে কোনো কাজের মূল উদ্দেশ্য যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য না হয় সেখানে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর নিজস্ব সুযোগ-সুবিধা ও চাওয়া-পাওয়ার প্রাধান্য বেড়ে যায়, যা সত্যিকার অর্থে অন্যকে বঞ্চিত করার সুযোগ তৈরি করে দেয়। ফলশ্রুতিতে বঞ্চিতরা প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে ওঠে। ফলে সম্প্রীতি রক্ষা অনেক কঠিন হয়ে যায়। এজন্য ইসলাম ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে যখনই সামাজিক সম্প্রীতি ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের কথা বলেছে সেখানেই এসবের উদ্দেশ্য হিসেবে আল্লাহর সন্তুষ্টিকে ভিত্তি ধরা হয়েছে। কোরআনে আল্লাহ ঘোষণা দিচ্ছেন, ‘বলুনÑ হে আহলে কিতাবরা, একটি বিষয়ের দিকে আস যা আমাদের ও তোমাদের মধ্যে সমান, আমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করব না, তাঁর সঙ্গে কোনো শরিক সাব্যস্ত করব না এবং একমাত্র আল্লাহকে ছাড়া কাউকে পালনকর্তা বানাব না। তারপর যদি তারা স্বীকার না করে, তাহলে বলে দাও, সাক্ষী থাক আমরা তো অনুগত (মুসলিম)।’ (সূরা আলে ইমরান ৩ : ৬৪)।
একে অপরের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষা : সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সব মানুষ সমান। এখানে কোনো পার্থক্য নেই, না নারী-পুরুষে, না মুসলিম-অমুসলিমে। চিন্তাচেতনা, দর্শনে কিংবা বিশ্বাসে ভিন্ন মতের কারণে যদি কারও ব্যক্তিগত কিংবা ধর্মীয় জীবনে ক্ষতির আশঙ্কা না থাকে তাহলে সেসবের ঊর্ধ্বে একে অপরের মাঝে সামাজিক সুসম্পর্ক বজায় রাখা জরুরি। এ ক্ষেত্রে, প্রত্যেকেই তার সম্মান ও মর্যাদা যথাযথভাবেই পাবে। শুধু ওইসবের ভিন্নতার কারণে কাউকে হেয় করা কিংবা অপমান করা যাবে না। আল্লাহ ঘোষণা করছেন, ‘(হে নবী, আপনি ঘোষণা দিন) তোমাদের ধর্ম তোমাদের জন্য এবং আমাদের ধর্ম আমাদের জন্য।’ (সূরা আল-কাফিরুন ১০৯ : ৬)।
একে অপরের প্রতি সহিষ্ণুতা : একে অপরের প্রতি সহিষ্ণুতা ইসলামের অন্যতম সৌন্দর্য। ভিন্ন মত, দর্শন কিংবা বিশ্বাসের কারণে কারও প্রতি সহিংসতা, জুলুম, নির্যাতন ও বঞ্চনা ইসলামের শিক্ষা নয়। বরং কোরআনের বিভিন্ন জায়গায় বিচার ফয়সালায় ন্যায়পরায়ণতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। সেখানে কোনো ভিন্নাচরণের উল্লেখ করা হয়নি। (সূরা আন-নিসা ৪ : ৫৮)।
একে অপরের অধিকার ও কর্তব্য এবং কল্যাণ নিশ্চিত করা : কোনো পরিস্থিতিতে কারও অধিকার খর্ব করার বৈধতা ইসলামে নেই। কোনো সমাজ ব্যবস্থায় একে অপরের অধিকার নিশ্চিত করতে পারলে পাশাপাশি তাদের একে অপরের কর্তব্যের ব্যাপারে যথাযথভাবে সচেতন হলে একটি কল্যাণ রাষ্ট্র গঠন করা সহজ হয়ে যায়। সেখানে সম্প্রীতি অবশ্যাম্ভাবী। ইসলাম তাই এটিকে বাধ্যতামূলক ঘোষণা করেছে।
সবার জন্য কল্যাণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ এবং সে মর্মে সহযোগিতা করা : সামাজিক সম্প্রীতির অন্য একটি নিয়ামক হলো জনগণ নির্দিষ্ট কোনো কল্যাণময় কাজের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে একে অপরের সহযোগিতা করছে কি না। সেখানে ইসলাম অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে সামাজিক কল্যাণের জন্য একে অপরকে সহযোগিতা করতে যেমন নির্দেশ দিয়েছে, তেমনি অকল্যাণকর সব কাজ থেকে নিজেদের বিরত রাখার পাশাপাশি অন্যদের যেন সহযোগিতা না করা হয় তার জন্য আদেশ দিয়েছে। কোরআন ঘোষণা করছে, ‘তোমরা একে অপরের কল্যাণের ব্যাপারে সহযোগিতা কর; কিন্তু অকল্যাণ ও শত্রুতার জন্য সহযোগিতা করো না।’ (সূরা আল-মায়িদা ৫ : ৩)।
সহিংসতা না করার ব্যাপারে একমত হওয়া : সহিংসতা নিজে কোনো ব্যক্তি কিংবা একপক্ষ না করলেই সমাজের সম্প্রীতি রক্ষা করা যায় না। বরং ভিন্ন মত ও পথের সবাইকে এ ব্যাপারে একমত হতে হবে যে, কেউ কারও জন্য সহিংসতামূলক কোনো আচরণই করবে না। ইসলাম এ ব্যাপারে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে কোরআনের বিভিন্ন জায়গায় নির্দেশনা দিয়েছে। শুধু মুসলিমদের নয়, সমাজের অমুসলিমদেরও তাই বিশৃঙ্খলা ও সহিংসতা না করার আদেশ দিয়েছে। কোরআনে এসেছে, ‘তোমরা জমিনে বিশৃঙ্খলা করো না।’ (সূরা আল-বাকারাহ ২ : ১১; সূরা আল-আ’রাফ ৭ : ৫৬ ও ৮৫; সূরা মুহাম্মদ ৪৭ : ২২)। অন্য জায়গায় এসেছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীকে পছন্দ করেন না।’ (সূরা আল-মায়িদা ৫ : ৬৪; সূরা আল-কাসাস ২৮ :৭৭)
ইসলাম পরিপূর্ণ এবং শান্তির ধর্ম হিসেবে এমন কিছু নীতিমালা প্রণয়ন করেছে, যা পালনে সমাজে শান্তি, সম্প্রীতি অর্জন করা সম্ভব। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে, আমরা সেগুলোকে না জেনে, না বুঝে নিজেদের চিন্তাচেতনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে হিতেবিপরীত করছি প্রতিনিয়ত। সুতরাং সামাজিক সম্প্রীতির জন্য যে বা যারাই কাজ করছেন তাদের উচিত এ ব্যাপারে ইসলাম কী বলেছে তা জেনে নেওয়া। ৯০ শতাংশ মুসলিম অধ্যুষিত এ সমাজে শান্তি ও সম্প্রীতি তখনই সম্ভব হবে যখন ইসলামের এ অনুসারীরা তাদের ধর্মকে যথাযথভাবে বাস্তব জীবনে পালন করতে সক্ষম হবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সে তৌফিক দান করুন। আমিন। হ
ষ ড. মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ
শিক্ষাবিদ ও গবেষকইসলামে সম্প্রীতির ধারণা
হড. মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ
ইসলাম সম্প্রীতির ধর্মÑ এ কথা সর্বজন স্বীকৃত। ইসলামের শুরু থেকে এ পর্যন্ত অসংখ্য উদাহরণ তার বাস্তবতা। কিন্তু কখনও কখনও তা মানুষ বুঝতে ভুল করেছে। ভুল করেছে ইসলামের মৌলিক শিক্ষাকে ধারণ করতে। ফলে কিছু বিপথগামী অনুসারীর অসংযত আচরণকে প্রাধান্য দিয়ে ইসলামের মৌলিক দর্শনকে বিতর্কিত করার প্রচেষ্টা যেমন কখনও যৌক্তিক হিসেবে বিবেচিত হবে না, তেমনি তা গ্রহণযোগ্যতাও পাবে না। রাসুলুল্লাহ (সা.) যিনি সমগ্র মানুষের জন্য শুধু রহমতস্বরূপ আসেননি বরং তিনি সবার জন্য অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় আদর্শও, তিনি তার সমগ্র জীবনে সম্প্রীতির বাস্তব উদাহরণ হিসেবে নিজেকে যথাযথভাবে প্রকাশ করেছেন সফলভাবে। তাঁর (সা.) অনুসারীদের জীবনেও সম্প্রীতির বাস্তব উদাহরণ আমরা লক্ষ্য করি। ইসলাম এ ব্যাপারে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে সুস্পষ্ট ধারণা দিয়েছে।
সম্প্রীতির সমার্থকবোধক শব্দ অভিধানগুলোতে পাই ‘সদ্ভাব’, ‘সন্তোষ’, ‘আহ্লাদ’, ‘আনন্দ’ ইত্যাদি। একে অপরের মাঝে সদ্ভাব, সন্তোষজনক, আহ্লাদি, আনন্দপূর্ণ ইত্যাদি সম্পর্ককে সম্প্রীতি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। সুতরাং কোনো সমাজে যদি একে অপরের সঙ্গে সদ্ভাব, সন্তোষজনক, আনন্দপূর্ণ সম্পর্ক থাকে তাহলে তাকে সম্প্রীতির সমাজ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
প্রকৃত অর্থে ইসলামের মৌলিক বাণীই হলো সম্প্রীতি। সম্প্রীতিকে তাই সামাজিক জীবনের মূল ভিত্তি ধরে সব বিধান প্রণয়ন করা হয়েছে এ অর্থেÑ যাতে মানুষ শুধু দুনিয়াবি জীবনে শুধু নয় বরং মৃত্যু-পরবর্তী জীবনেও শান্তি লাভ করতে পারে। ইসলামের সামাজিক সম্প্রীতির মৌলিক সে ধারণার কিছু তুলে ধরা হলো :
সম্প্রীতি হবে আল্লাহর (সৃষ্টিকর্তা) সন্তুষ্টির জন্য : যে কোনো কাজের মূল উদ্দেশ্য যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য না হয় সেখানে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর নিজস্ব সুযোগ-সুবিধা ও চাওয়া-পাওয়ার প্রাধান্য বেড়ে যায়, যা সত্যিকার অর্থে অন্যকে বঞ্চিত করার সুযোগ তৈরি করে দেয়। ফলশ্রুতিতে বঞ্চিতরা প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে ওঠে। ফলে সম্প্রীতি রক্ষা অনেক কঠিন হয়ে যায়। এজন্য ইসলাম ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে যখনই সামাজিক সম্প্রীতি ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের কথা বলেছে সেখানেই এসবের উদ্দেশ্য হিসেবে আল্লাহর সন্তুষ্টিকে ভিত্তি ধরা হয়েছে। কোরআনে আল্লাহ ঘোষণা দিচ্ছেন, ‘বলুনÑ হে আহলে কিতাবরা, একটি বিষয়ের দিকে আস যা আমাদের ও তোমাদের মধ্যে সমান, আমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করব না, তাঁর সঙ্গে কোনো শরিক সাব্যস্ত করব না এবং একমাত্র আল্লাহকে ছাড়া কাউকে পালনকর্তা বানাব না। তারপর যদি তারা স্বীকার না করে, তাহলে বলে দাও, সাক্ষী থাক আমরা তো অনুগত (মুসলিম)।’ (সূরা আলে ইমরান ৩ : ৬৪)।
একে অপরের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষা : সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সব মানুষ সমান। এখানে কোনো পার্থক্য নেই, না নারী-পুরুষে, না মুসলিম-অমুসলিমে। চিন্তাচেতনা, দর্শনে কিংবা বিশ্বাসে ভিন্ন মতের কারণে যদি কারও ব্যক্তিগত কিংবা ধর্মীয় জীবনে ক্ষতির আশঙ্কা না থাকে তাহলে সেসবের ঊর্ধ্বে একে অপরের মাঝে সামাজিক সুসম্পর্ক বজায় রাখা জরুরি। এ ক্ষেত্রে, প্রত্যেকেই তার সম্মান ও মর্যাদা যথাযথভাবেই পাবে। শুধু ওইসবের ভিন্নতার কারণে কাউকে হেয় করা কিংবা অপমান করা যাবে না। আল্লাহ ঘোষণা করছেন, ‘(হে নবী, আপনি ঘোষণা দিন) তোমাদের ধর্ম তোমাদের জন্য এবং আমাদের ধর্ম আমাদের জন্য।’ (সূরা আল-কাফিরুন ১০৯ : ৬)।
একে অপরের প্রতি সহিষ্ণুতা : একে অপরের প্রতি সহিষ্ণুতা ইসলামের অন্যতম সৌন্দর্য। ভিন্ন মত, দর্শন কিংবা বিশ্বাসের কারণে কারও প্রতি সহিংসতা, জুলুম, নির্যাতন ও বঞ্চনা ইসলামের শিক্ষা নয়। বরং কোরআনের বিভিন্ন জায়গায় বিচার ফয়সালায় ন্যায়পরায়ণতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। সেখানে কোনো ভিন্নাচরণের উল্লেখ করা হয়নি। (সূরা আন-নিসা ৪ : ৫৮)।
একে অপরের অধিকার ও কর্তব্য এবং কল্যাণ নিশ্চিত করা : কোনো পরিস্থিতিতে কারও অধিকার খর্ব করার বৈধতা ইসলামে নেই। কোনো সমাজ ব্যবস্থায় একে অপরের অধিকার নিশ্চিত করতে পারলে পাশাপাশি তাদের একে অপরের কর্তব্যের ব্যাপারে যথাযথভাবে সচেতন হলে একটি কল্যাণ রাষ্ট্র গঠন করা সহজ হয়ে যায়। সেখানে সম্প্রীতি অবশ্যাম্ভাবী। ইসলাম তাই এটিকে বাধ্যতামূলক ঘোষণা করেছে।
সবার জন্য কল্যাণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ এবং সে মর্মে সহযোগিতা করা : সামাজিক সম্প্রীতির অন্য একটি নিয়ামক হলো জনগণ নির্দিষ্ট কোনো কল্যাণময় কাজের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে একে অপরের সহযোগিতা করছে কি না। সেখানে ইসলাম অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে সামাজিক কল্যাণের জন্য একে অপরকে সহযোগিতা করতে যেমন নির্দেশ দিয়েছে, তেমনি অকল্যাণকর সব কাজ থেকে নিজেদের বিরত রাখার পাশাপাশি অন্যদের যেন সহযোগিতা না করা হয় তার জন্য আদেশ দিয়েছে। কোরআন ঘোষণা করছে, ‘তোমরা একে অপরের কল্যাণের ব্যাপারে সহযোগিতা কর; কিন্তু অকল্যাণ ও শত্রুতার জন্য সহযোগিতা করো না।’ (সূরা আল-মায়িদা ৫ : ৩)।
সহিংসতা না করার ব্যাপারে একমত হওয়া : সহিংসতা নিজে কোনো ব্যক্তি কিংবা একপক্ষ না করলেই সমাজের সম্প্রীতি রক্ষা করা যায় না। বরং ভিন্ন মত ও পথের সবাইকে এ ব্যাপারে একমত হতে হবে যে, কেউ কারও জন্য সহিংসতামূলক কোনো আচরণই করবে না। ইসলাম এ ব্যাপারে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে কোরআনের বিভিন্ন জায়গায় নির্দেশনা দিয়েছে। শুধু মুসলিমদের নয়, সমাজের অমুসলিমদেরও তাই বিশৃঙ্খলা ও সহিংসতা না করার আদেশ দিয়েছে। কোরআনে এসেছে, ‘তোমরা জমিনে বিশৃঙ্খলা করো না।’ (সূরা আল-বাকারাহ ২ : ১১; সূরা আল-আ’রাফ ৭ : ৫৬ ও ৮৫; সূরা মুহাম্মদ ৪৭ : ২২)। অন্য জায়গায় এসেছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীকে পছন্দ করেন না।’ (সূরা আল-মায়িদা ৫ : ৬৪; সূরা আল-কাসাস ২৮ :৭৭)
ইসলাম পরিপূর্ণ এবং শান্তির ধর্ম হিসেবে এমন কিছু নীতিমালা প্রণয়ন করেছে, যা পালনে সমাজে শান্তি, সম্প্রীতি অর্জন করা সম্ভব। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে, আমরা সেগুলোকে না জেনে, না বুঝে নিজেদের চিন্তাচেতনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে হিতেবিপরীত করছি প্রতিনিয়ত। সুতরাং সামাজিক সম্প্রীতির জন্য যে বা যারাই কাজ করছেন তাদের উচিত এ ব্যাপারে ইসলাম কী বলেছে তা জেনে নেওয়া। ৯০ শতাংশ মুসলিম অধ্যুষিত এ সমাজে শান্তি ও সম্প্রীতি তখনই সম্ভব হবে যখন ইসলামের এ অনুসারীরা তাদের ধর্মকে যথাযথভাবে বাস্তব জীবনে পালন করতে সক্ষম হবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সে তৌফিক দান করুন। আমিন।
ড. মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ
শিক্ষাবিদ ও গবেষক