টানা ৬৫ দিন সাগরে মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা আজ থেকে শুরু হচ্ছে। তবে এ আইন অমান্য করে সাগরে মাছ ধরতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলের জেলেরা। আইনটি শিথিলের দাবিতে উপকূলের দুটি জেলা বরগুনা ও পটুয়াখালীর জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা মধ্য এপ্রিল থেকে আন্দোলন শুরু করে। অপরদিকে আইনটি বাস্তবায়নে মৎস্য অধিদপ্তর অনঢ় থাকায় নিষ্ফল হয়েছে মৎস্যজীবীদের আন্দোলন। এমন পরিস্থিতিতে দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলের জেলেরা আইন অমান্য করে মাছ আহরণে সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানান মৎস্যজীবী সংগঠনের একাধিক নেতা।
বরগুনা জেলা ট্রলার মালিক সমিতির সহ-সভাপতি আলম মোল্লা রোববার জানান, পাথরঘাটায় সমুদ্রগামী ট্রলারগুলোতে বরফসহ অন্যান্য রসদ মজুদ করা হচ্ছে। আজ অথবা কাল কয়েকশ’ ট্রলার একযোগে সাগরের দিকে রওনা হবে। রাষ্ট্র্রীয় আইন অমান্যের বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দেওয়া হলে তিনি বলেন, এটা আমাদের রুটি-রুজির বিষয়। যদি সরকার সব ট্রলার ডুবিয়ে দেয় তাহলে আমরাও ট্রলারের সঙ্গে সাগরে ডুবে যাব। না খেয়ে বেঁচে থাকতে পারব না।
মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সাগরে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের প্রজনন মৌসুম হিসেবে চিহ্নিত করে প্রতিবছর ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই ৬৫ দিন সাগরে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করে ১৯৮৩ সালে একটি আইন করে মৎস্য অধিদপ্তর। এটি ২০১৫ সালে সংশোধন করে সে বছর থেকে আইনটির আংশিক কার্যকর করা হয়। ৪ বছর ধরে শুধুমাত্র ট্রলিং ট্রলার সাগরে যেতে নিষিদ্ধ করা হতো। ইলিশ ব্যতীত অন্যান্য মাছ ধরার জন্য এ ট্রলার ব্যবহৃত হয়। ট্রলিং ট্রলারের জেলেরা ইঞ্জিনের মাধ্যমে সাগরের ৪০ ফুট গভীরের পর জাল ফেলে। এ বছর আইনটি শতভাগ কার্যকর করার লক্ষ্যে মাছ আহরণে যান্ত্রিক সব ধরনের নৌযান ৬৫ দিন সাগরে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মৎস্য অধিদপ্তরের এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বাঁধ সাধে উপকূলের ইলিশ জেলে ও ব্যবসায়ীরা। তারা শুধুমাত্র ট্রলিং ট্রলারের ওপর নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত রাখার দাবিতে মধ্য এপ্রিল থেকে লাগাতার আন্দোলনে নামে। এ ক্ষেত্রে তাদের যুক্তি হচ্ছে ইলিশের প্রজনন বৃদ্ধিতে ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত টানা ৮ মাস জাটকা (১০ ইঞ্চির কম সাইজের ইলিশ) নিধন এবং আশ্বিনের পূর্নিমার আগে ও পরে টানা ২২ দিন সব ধরনের মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা পালিত হয়। ক্যালেন্ডারের হিসাব অনুযায়ী জ্যৈষ্ঠ মাস থেকে ইলিশ মৌসুম শুরু। এ সময় ৬৫ দিন সাগরে যেতে না পারলে জেলে ও ব্যবসায়ীরা সর্বশান্ত হবেন। দক্ষিণাঞ্চলে সাগর তীরের জনপদ পটুয়াখালীর কলাপাড়া এবং বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলা দেশের অন্যতম বৃহৎ ইলিশ মোকাম। দক্ষিণাঞ্চলে ট্রলিং ট্রলার না থাকায় ৪ বছর এখানে নিষেধাজ্ঞায় কোনো প্রভাব ছিল না। এবার ইলিশ ট্রলারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় পাথরঘাটা ও কলাপাড়াসহ আশপাশের ইলিশনির্ভর মৎস্যজীবীরা ব্যাপক আান্দোলনে নামে।
বরগুনা জেলা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী জানান, ইলিশের মৌসুমে ৬৫ দিন সাগরে যাওয়া নিষিদ্ধ করা ইলিশের স্বার্থবিরোধী একটি সিদ্ধান্ত। ইলিশ জেলেরা নিষেধাজ্ঞা না মানার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
কলাপাড়া ফিসিং ট্রলার মাঝি সমিতির সভাপতি নুরু মাঝি জানান, দেশের ট্রলার সাগরে যেতে নিষিদ্ধ করার সুযোগে ভারত ও বার্মার ফিসিং ট্রলার বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকে মাছ ধরে। যদি বাংলাদেশ, ভারত ও বার্মা একযোগে মৎস্য আহরণে নিষেধাজ্ঞা দিতো তাহলে মাছের প্রজনন ঠিকই বাড়ত।
মৎস্য অধিদপ্তর বরিশাল বিভাগীয় উপপরিচালক মো. ওয়ালিউর রহমান বলেন, সাগরে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে জেলা পর্যায়ে টাক্সফোর্স সভা করে সব বাহিনীকে সতর্ক করা হয়েছে। রোববার বরিশালে টাক্সফোর্সের সভায় জেলে ও আড়তদারদের বলা হয়েছে যাতে সাগরে ইলিশ শিকারের পরিকল্পনা না নেয়। দাদনও বন্ধ করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। জেলেরা সাগরে যাওয়ার চেষ্টা করলে কোস্ট গার্ড ও নৌবাহিনী তাদের ফেরত পাঠাবে।
উপপরিচালক ওয়ালিউর বরগুনা ও পটুয়াখালীর সাম্প্রতিক তিক্ততার কথা উল্লেখ করে জানান, সেখানে সচেতনতামুলক সভা করতেও জেলেরা বাধা দিয়েছে। উপকূলে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে। তিনি সাফ জানিয়ে দেন, মৎস্য উৎপাদন বাড়াতে বিজ্ঞানীরা মনে করেন নিষেধাজ্ঞা দরকার। আর এজন্য যা যা প্রয়োজন সরকার সবই করবে।