আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ২০-০৫-২০১৯ তারিখে পত্রিকা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন মঈন খানের

নিজস্ব প্রতিবেদক
| খবর

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান ও শিক্ষকদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান।
তিনি বলেন, সম্প্রতি লন্ডনভিত্তিক টাইমস হায়ার এডুকেশন পরিচালিত র?্যাঙ্কিং ব্যবস্থা এশিয়ার ৪১৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে, যেখানে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থান করে নিতে পারেনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বৈশ্বিক র‌্যাঙ্কিংয়ে হাজারের মধ্যেও নেই কেন? সেটি আজ জাতির কাছে বড় প্রশ্ন।
রোববার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আবদুল মঈন খান এ কথা বলেন।
বিএনপির এ শীর্ষ নেতা বলেন, র?্যাঙ্কিংয়ে সার্বিকভাবে চীনের ৭২টি, ভারতের ৪৯টি, তাইওয়ানের ৩২টি, পাকিস্তানের ৯টি এবং হংকংয়ের ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম আছে। এমনকি নেপাল ও শ্রীলঙ্কার বিশ্ববিদ্যালয়ও আছে এ র?্যাঙ্কিংয়ের তালিকায়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এ তালিকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নেই।
র?্যাঙ্কিংয়ে স্থান না পাওয়ার বিষয়ে বেশ কিছু পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন আবদুল মঈন খান। তিনি বলেন, কোর্স কারিকুলাম বা সিলেবাসগুলো অনেক ডিপার্টমেন্টেই উন্নত বিশ্বের নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে হালনাগাদ করা হয় না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে উন্নত বিশ্বের দেশগুলো থেকে ছাপা হওয়া নামি প্রকাশকের পাঠ্য বইয়ের বদলে অখ্যাত ভারতীয় বা অনুন্নত বিভিন্ন দেশের প্রকাশকের পাঠ্যবইগুলো বেছে নেওয়া হয় ক্লাসরুমে পাঠদানের জন্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব আজ চরম আকার ধারণ করেছে। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধা মূল্যায়ন না করে নিছক দলীয় রাজনৈতিক কর্মী অর্থাৎ ‘ছাত্রলীগের কর্মীকে’ নিয়োগ প্রদানের মাধ্যমে ভোটার তৈরির চেষ্টা করা হয়, যাতে শিক্ষক রাজনীতিতে প্রভাব বজায় রাখা সম্ভব হয়।
গবেষণার বিষয়ে বিএনপি নেতা মঈন খান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার কথা শিক্ষা ও গবেষণার স্থান। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা কার্যক্রম অপ্রতুল, যা আমরা সবাই জানি। গবেষণা তহবিলের অপ্রতুলতার কথাও বহুল আলোচিত। কিন্তু প্রশ্ন হলো পর্যাপ্ত তহবিল দিয়ে দিলেই কী সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বা রাতারাতি গবেষণা কার্যক্রম বিশ্বমানে পৌঁছাতে সাহায্য করবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে? আমার মনে হয় তা না। বেশ কিছু সমস্যা রয়ে গেছে, যা দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সমাধান করতে হবে। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের পরীক্ষা নেওয়া এবং খাতা দেখার মতো কাজের জন্য বাড়তি সময় দেওয়ার কারণেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা মৌলিক গবেষণায় অংশগ্রহণের জন্য পর্যাপ্ত সময় বের করতে পারেন না।
বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্ঞানের আদান-প্রদানের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে মঈন খান বলেন, বিশ্বায়নের এ যুগে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এবং গবেষণা সংস্থাগুলোর মধ্যে এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের আওতায় জ্ঞান আদান-প্রদানের প্রয়োজনীয়তা সর্বজনস্বীকৃত। এতে করে উন্নত বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষণাগারে লব্ধ জ্ঞান অনুন্নত বিশ্বের গবেষকরা সহজে জানতে পারেন এবং তার ভিত্তিতে নিজেদের পরবর্তী গবেষণা কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম মান্ধাতার আমলেই রয়ে গেছে, মূলত কাগজপত্রের আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, বিশ্বমানের গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করেÑ এমন কোনো উল্লেখযোগ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে জ্ঞানভিত্তিক সম্পর্ক স্থাপনের উদ্যোগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে পরিলক্ষিত হয়নি।
আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়ে বিএনপির নেতা মঈন খান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে বিদ্যালয়ের পার্থক্যটাই হলো এই যে, শিক্ষা প্রদান, জ্ঞান উৎপাদন ও বিতরণের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করে আর বিদ্যালয় তা গ্রহণ না-ও করতে পারে। বিদ্যালয় শুধু শিক্ষা প্রদানের মধ্যেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখে, মৌলিক জ্ঞান উৎপাদন ও বিতরণে নজর দেয় না। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্ত চিন্তাকে বিশেষভাবে উৎসাহিত করা হয় এবং মৌলিক জ্ঞান উৎপাদন ও বিতরণের ক্ষেত্রে জাতীয় বা দেশীয় সীমানা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পেরিয়ে যায়। 
তিনি আরও বলেন, দুঃখজনকভাবে আজ বলতে হচ্ছেÑ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি বিনষ্ট হয়ে গেছে। একসময় অনেক বিদেশি ছাত্রছাত্রী পড়তে এলেও আমার জানা মতে এ মুহূর্তে একজন বিদেশি শিক্ষার্থীও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত নেই।