আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ২১-০৫-২০১৯ তারিখে পত্রিকা

কৃষকের পাশে শিক্ষার্থীরা

ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে

| সম্পাদকীয়

শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি ও ধানের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় সারা দেশে বোরো চাষিরা সংকটে পড়েছেন। অনেকেই শ্রমিক সংকটে ক্ষেত থেকে পাকা ধান কাটতে পারছেন না। আলোকিত বাংলাদেশে প্রকাশ, ধানের ন্যায্যমূল্যের দাবিতে সোচ্চার হয়ে কৃষকের পাশে দাঁড়িয়েছেন বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। দেশের বিভিন্ন স্থানে স্বেচ্ছাশ্রমে কৃষকের ধান কেটে দিয়ে সহায়তা করেছেন তারা। কয়েকটি ছাত্র সংগঠন মানববন্ধন-বিক্ষোভ ও প্রতীকী কর্মসূচিও পালন করেছে। এভাবে কৃষকের পাশে শিক্ষার্থীদের দাঁড়ানো একটি তাৎপর্যম-িত ঘটনা। ধানের ন্যায্যমূল্যের দাবিতে শিক্ষার্থীদের রাজপথে কর্মসূচি পালন কিংবা মাঠের ধান কাটতে কৃষককে সহায়তাদান প্রমাণ করে, তারাও সুখে-দুঃখে গণমানুষের পাশে দাঁড়াতে দ্বিধা করেন না। যেসব শিক্ষার্থী কৃষকের সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন তাদের অভিনন্দন জানাই। আর সরকারকে বলছি, কৃষকের দিকে দৃষ্টি দিন। কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হলে সারা দেশই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
সংশ্লিষ্ট কেউ কেউ মনে করেন, কৃষকের ধানের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার জন্য সরকারের ভুল নীতিই দায়ী। প্রথমত, সরকার ধান-চাল কেনার ঘোষণা দিলেও কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি তা কিনছে না। কিনছে চালকলের মালিকদের কাছ থেকে। এতে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রকৃত কৃষক। অভিযোগ রয়েছে, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চালকল মালিকরা পরিকল্পিতভাবে ধানের মূল্য কমিয়ে দেয়। অথচ ধানের দাম কমিয়ে দিয়ে বাড়িয়ে দেওয়া হয় চালের দাম। উল্লেখ্য, এক মণ ধান উৎপাদন করতে কৃষকের খরচ হচ্ছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, আর বর্তমানে বাজারমূল্য হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। এ অবস্থায় কৃষকের লোকসান ঠেকানোর উপায় নেই। নিরুপায় হয়েই কৃষক প্রতিবাদ করছেন। চলতি বোরো মৌসুমে ধানের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে ১২ মে নিজ ধানক্ষেতে আগুন দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার পাইকড়া গ্রামের আবদুল মালেক নামের এক কৃষক। শুধু তিনি নন, দাম কম হওয়ায় ধানক্ষেতে আগুন ধরিয়ে নওগাঁ, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা জেলাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কৃষক প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তারা বলছেন, জমিতে ধান উৎপাদনে যে খরচ করা হয়েছে, তা তো উঠবেই না, বরং লোকসান হবে। তাই তারা পাকা ধান কাটতে পারছেন না।
এমন পরিস্থিতিতে কৃষকের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। তা না হলে দেখা যাবে অচিরেই ধান উৎপাদনে নিরুৎসাহিত হয়ে এ পেশা থেকে সরে যাবেন কৃষক। এতে সংকটে পড়বে দেশ। উল্লেখ্য, অবিলম্বে কৃষকের সমস্যা সমাধান না হলে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। কৃষকের দাবিগুলো সহৃদয়তার সঙ্গেই বিবেচনা করা প্রয়োজন। তাই অচিরেই মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য হ্রাস করে কৃষকের মুখে হাসি ফোটাতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কার্যকর ভূমিকা পালন করবেÑ এমনটাই প্রত্যাশা।