নিজস্ব প্রতিবেদক : সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন করে আর প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে না। দীর্ঘদিন ধরে সহকারী শিক্ষকরা পদোন্নতি না পাওয়ায় তাদের মধ্যে এক ধরনের প্যারালাইজড মানসিকতা কাজ করছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সরকার তাদের পদোন্নতি দিয়ে মনোবলকে আবার চাঙ্গা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সোমবার রাজধানীর প্রাইমারি টিচার্স ইনস্টিটিটে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিপিই) আয়োজিত ‘উদ্ভাবনী মেলা ও শোকেসিং-২০১৯’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন এসব কথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষকদের মধ্যে পদোন্নতি না হওয়ায় তারা এক ধরনের অচল হয়ে পড়ছেন। তারা মনে করছেন, জীবনে তাদের আর পদোন্নতি হবে না। এ কারণে তারা হতাশার মধ্যে দিন পার করছেন। কিন্তু তাদের বলতে চাই, সরকার এ পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটিয়ে সহকারী শিক্ষকদের মধ্য থেকে প্রধান শিক্ষক অথবা সহকারী থানা শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে পদোন্নতি কার্যক্রম বিষয়টি শুরু করতে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীরা শতভাগ বাংলা পড়তে পারে নাÑ বিশ্বব্যাংকের এমন প্রতিবেদনের মন্তব্য করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা বাংলা পড়তে পারে না, এটি আমাদের ব্যর্থতা। আমাদের মনিটরিং ব্যবস্থা বেশ দুর্বল থাকায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। দুই-চারজন দিয়ে মনিটরিং করা সম্ভব হবে না। এতে সবাই ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ পাবে। এটিকে ঢালাওভাবে সাজিয়ে শক্তিশালী করে তুলতে হবে। যার যতটুকু দায়িত্ব, ততটুকু পালন করলে প্রাথমিক শিক্ষাকে আরও বেগবান করে তোলা সম্ভব হবে।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আকরাম আল হোসেন বলেন, উদ্ভাবনী মেলার মূল লক্ষ্যই হচ্ছে নাগরিক সেবার মান বৃদ্ধি করে সহজ ও জনবান্ধব করে শিক্ষার মান উন্নত করা। যত বেশি উদ্ভাবন হবে, তত বেশি মান বৃদ্ধি পাবে। এতে জাতির উন্নতি ঘটবে। প্রাথমিক শিক্ষাকে আনন্দঘন করে তুলতে না পারলে গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করা যাবে না। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সচিব বলেন, প্রাথমিকের শিখন যোগ্যতাকে নিশ্চিত করা, ছাত্ররা ঠিকমতো পঠন করতে পারছে কি না, সে দিকটা উন্নত করতে পারলে শিক্ষার মানোন্নয়ন হবে।
সভাপতির বক্তব্যে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএফএম মনজুর কাদির বলেন, উদ্ভাবনী কিছু করতে চাইলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ সবার মানসিকতার পরিবর্তন আনতে হবে। শুধু গতানুগতিক কাজ করে গেলেই হবে না, এর বাইরে শিক্ষকদের ভাবতে হবে, তাদের প্রতিষ্ঠান ও শিশুদের জন্য নতুন কী করা যায়। তিনি বলেন, উদ্ভাবনী তখনই হবে, যখন আপনি অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের কথা শিক্ষক এবং প্রধান শিক্ষকরা শুনবেন। আমাদের কাছে অভিযোগ আসে, প্রধান শিক্ষকরা অভিভাবকদের কথা শুনতে চান না। এমনটা করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে না। মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও প্রধান উদ্ভাবনী কর্মকর্তা বদরুল হাসান বাবুল বলেন, ‘আমাদের নানা ধরনের উদ্ভাবনী নিয়ে আসতে হবে, যাতে সবার কাজে আসে। আমরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম আনলাইন প্রক্রিয়ায় আনতে পারি, যার ফলে শিক্ষার্থীদের একটি ডেটাবেজ পাওয়া সম্ভব হবে।
জানা যায়, ২০১৩ সাল থেকে শুরু হয়ে দ্বিতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত উদ্ভাবনী মেলায় ১১৫টি আইডিয়া থেকে ১৫টি আইডিয়া নিয়ে ১৬টি স্টলের মাধ্যমে প্রদর্শন করা হচ্ছে। কম খরচে, দ্রুততার সঙ্গে জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছানোর মাধ্যমে জনপ্রত্যাশা পূরণের লক্ষ্যেই এ মেলা আয়োজন করা হয়েছে। ১৫টি সেরা উদ্ভাবনী আইডিয়া ও সফল উদ্ভাবকগুলো হলোÑ উদ্ভাবনী উদ্যোগ, ক্লাসরুম লাইব্রেরি, দৃষ্টি সংযত ও মনোযোগ, মোবাইল মাসী (বিদ্যালয় বন্ধু), শিশুদের শব্দ ভা-ারসমৃদ্ধ করতে শিক্ষার্থীদের নৈতিক শিক্ষা প্রদান ও সৎ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তথ্য আদান-প্রদানে অনলাইন সার্ভিস, থিম বেইজ ক্লাসরুম (বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস), Bloom Software-এর মাধ্যমে SRM (Decodable & Level Book) তৈরি ও তার ব্যবহার, উপজেলা শিক্ষক তথ্যভা-ার, অনলাইনে বিদ্যালয়ে মেরামত কাজ পরিদর্শন ও জিপিএফ অনুমোদন এবং মাঠপর্যায়ে সংবাদ পাঠানো, ÔThe Student of the dayÕ’, স্থাপন, শিশুর আন্তঃমূল্যায়ন, Kids Creative Class, খেলার ছলে গণিত শেখা, লেখাপড়ার পাশাপাশি জীবন দক্ষতা অর্জন ইত্যাদি।