আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ২১-০৫-২০১৯ তারিখে পত্রিকা

বৃষ্টিতে থৈ থৈ ফ্লাইওভার

নকশায় ত্রুটির অভিযোগ ভারি বৃষ্টিতে কিছু সময়ের জন্য পানি জমে : সিডিএ

সাইফুদ্দিন তুহিন, চট্টগ্রাম
| শেষ পাতা

বৃষ্টি পড়লেই থৈ থৈ পানি জমে চট্টগ্রামের সব কয়টি ফ্লাইওভারে। গেল শনিবার রাতে ৩০ মিনিটের বৃষ্টিতে হাঁটু পানিতে সয়লাব হয় এক ফ্লাইওভার। কিন্তু শত কোটি টাকার ফ্লাইওভারে অল্প বৃষ্টিতে পানি কেনÑ এ প্রশ্ন এখন সবার। কেউ বলছেন, ফ্লাইওভারের ডিজাইনে ত্রুটি। আবার কারো মতে বৃষ্টির পানি দ্রুত নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখা হয়নি। তাই অল্প বৃষ্টিতে জমে যায় পানি। তবে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান সিডিএ বলছে বৃষ্টির সময় কিছু সময়ের জন্য পানি জমে। তা দ্রুতই বের হয়ে যায়। আর পথচারী চালক যাত্রীরা বলছেন, বৃষ্টিতে খুব বেশি পানি জমে সব কয়টি ফ্লাইওভারে। 

এ ব্যাপারে সিডিএ‘র প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, ফ্লাইওভারের ডিজাইনে কোনো ধরনের সমস্যা নেই। ফ্লাইওভারের মুখ বালু পানিতে ভর্তি থাকে। বিশেষ করে যেসব ছিদ্র দিয়ে পানি সরে যায় তা জ্যাম থাকে। তাই হঠাৎ ভারী বৃষ্টিতে কিছু সময়ের জন্য পানি জমে। আবার তা দ্রুত চলে যায়। সংশ্লিষ্ট আরেক প্রকৌশলী জানান, যারা ফ্লাইওভার ব্যবহারের করেন তাদের অসচেতনতা কিছুটা দায়ী। ফ্লাইওভারজুড়ে খালি প্লাস্টিক বোতলসহ নানা বর্জ্য চোখে পড়ে। এসব জমে থাকলে বৃষ্টির পানি দ্রুত সরে যেতে পারে না। তাই সবাইকে এ ধরনের প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলা বন্ধ করতে হবে।

নগরীর অভ্যন্তরে যানবাহনের চাপ ক্রমেই বাড়ছে। তাতে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে যানজট। অফিস খোলার দিন নগরজুড়ে যেন নরক যন্ত্রণা নেমে আসে। মোড়ে মোড়ে যানজট। দীর্ঘ যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকায় নগরীতে সময় ধরে গন্তব্যে পৌঁছা কঠিন হয়ে ওঠে। যানজটের দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেতে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ফ্লাইওভার নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। 

সিডিএ সূত্র জানায়, ২০১০ সালের ২ জানুয়ারি চট্টগ্রাম সফরকালে বহদ্দারহাট জংশনে একসঙ্গে পাঁচটি ফ্লাইওভারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) উদ্যোগে ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ২০১৩ সালের ১২ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার উদ্বোধন করেন। ১ দশমিক ৩৩ কিলোমিটার দীর্ঘ চার লেনের এ ফ্লাইওভারটির নির্মাণে ব্যয় হয় ১২০ কোটি টাকা। বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার নির্মাণ শেষ হওয়ার আগেই কদমতলী জংশনে আরও একটি ফ্লাইওভার নির্মাণকাজ শুরু করে সিডিএ। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে খুলে দেওয়া হয়। প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ এ ফ্লাইওভার নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৬৫ কোটি টাকা। মুরাদপুর থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত নির্মাণ হয় আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভার। তার আগে দেওয়ানহাট জংশনে একটি ওভারপাস তৈরি করা হয়। সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে চট্টগ্রাম বন্দরের কাস্টম ব্রিজ এলাকায় মহানগরীর প্রথম ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়। 

বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারটি চালুর বছরেই ভারী বৃষ্টিতে জলমগ্ন হওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে ফ্লাইওভারের কারিগরি ত্রুটি ও ডিজাইন নিয়ে নানা মহল থেকে প্রশ্ন ওঠে। কিন্তু বৃষ্টিতে পানি জমে যাওয়া বন্ধ হয়নি। এর কয়েক বছর পর চালু হয় আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভার। মুরাদপুর থেকে লালখান বাজার মোড় পর্যন্ত ফ্লাইওভারটিতে বৃষ্টি পড়লেই জমে পানি। অনেক সময় হাঁটু পরিমাণ জমে যাওয়া পানিতে যানবাহন চলতে পারে না। গতি আটকে ফ্লাইওভারেই দীর্ঘ গাড়ির সারি চোখে পড়ে। গেল শনিবার রাতে মাত্র ৩০ মিনিটের বৃষ্টিতে আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভার ও বহদ্দরাহাট ফ্লাইওভারে জমে যায় পানি। এসময় ফ্লাইওভারের উভয় দিকে বহু যানবাহন আটকে যায়। জলমগ্ন ফ্লাইওভার পার হতে বেশ বেগ পেতে হয় সব ধরনের যানবাহন চালককে। এতে চালক ও যাত্রীদের মধ্যে দেখা দেয় ক্ষোভ। সংশ্লিষ্ট এক প্রকৌশলী জানান, নির্মাণের সময় পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখা হয়নি। যা রাখা হয়েছে তাতে ভারী বৃষ্টিতে পানি জমে যাওয়া ঠেকানো যায় না। এতে অল্প বৃষ্টিতে দ্রুত জলমগ্ন হয়ে ওঠে ফ্লাইওভার। তবে যারা ফ্লাইওভার ব্যবহারের করেন তাদের অসচেতনতা কিছুটা দায়ী। ফ্লাইওভারজুড়ে খালি প্লাস্টিক বোতলসহ নানা বর্জ্য চোখে পড়ে। এসব জমে থাকলে বৃষ্টির পানি দ্রুত সরে যেতে পারে না। তাই সবাইকে এ ধরনের প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলা বন্ধ করতে হবে।