আইমান আবু মুহাইদী গাজার পার্শ্ববর্তী এলাকা আল নাসের শহরে বাস করেন। তিনি বলেন, গাজায় এবারের হামলা আমাদের ২০১৪ রমজানে হামলার কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। তার ছেলেরা ২০১৪ হামলার কথা ভুলতে পারেনি। ২০১৪ হামলার স্মৃতিচারণ করে আইমান বলেন, ‘তখন আমার ছেলেরা ছোট ছিল। বোমার শব্দ হলে আমি তাদের অভয় দেওয়ার জন্য বলতাম, এগুলো বিয়ের অনুষ্ঠানে আতশবাজির শব্দ। কিন্তু এবার তারা আগের চেয়ে কিছুটা বড়। এবার তাদের কীভাবে মিথ্যা বলি?’
মুহাম্মদ আল বরেই আল জাওয়িয়া মার্কেটের একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। তিনি ভেবেছিলেন, তার মজুত পণ্যগুলো এবার রমজান উপলক্ষে শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু ইসরাইলি বোমা হামলার কারণে গাজার লোকজন এবার ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। তারা রমজানে মসজিদেও যেতে পারছেন না নামাজ পড়ার জন্য। মুহাম্মদ বলেন, ‘সব ধর্মীয় উৎসবগুলোকেই তো সম্মান জানানো উচিত।’
‘যদি ফিলিস্তিনিরা ইসরাইলি বাহিনীর ওপর তাদের উৎসবের দিনগুলোতে হামলা চালাত, তাহলে বিশ্বব্যাপী এর নিন্দা করা হতো যে, ফিলিস্তিনিরা ধর্মীয় উৎসবে হামলা চালিয়েছে। আমরা বোমা চাই না। আমরা শান্তি চাই।’ যোগ করেন মুহাম্মদ আল বরি।
গাজায় গেল রোববার যখন ইসরাইলি বোমা হামলা চলছিল, তখনও সেখানে বোমা আতঙ্ক উপেক্ষা করে বিভিন্ন দোকানপাট খোলা থাকতে দেখা গেছে এবং এই ভীতিকর পরিস্থিতির মধ্যেই বিভিন্ন লোককে রমজানের প্রস্তুতির জন্য বাজারে যেতে দেখা যায়।
মাহমুদ সাইদ নাখলেহ আরেকজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। তিনি অনেক কষ্টের জমানো সব টাকা খরচ করে একটা কাপড়ের দোকান দিয়েছিলেন, রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে অনেক কেনাকাটা হবেÑ এই ছিল তার আশা। কিন্তু ইসরাইলি হামলায় তাদের মার্কেটটি একবারে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। মাহমুদ বলেন, ‘আমার যা ছিল, সবই শেষ হয়ে গেল। এখন আমি জানি না, আমি কি করব?’
সম্প্রতি ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি হামলায় দুদিনে দুজন অন্তঃসত্ত্বা মাসহ ২৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গাজায় অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও দারিদ্র্যের কারণে লক্ষাধিক লোক খাদ্য সংকটের মধ্যে রয়েছে। এর ওপর যুক্ত হলো বোমা আতঙ্ক। কিন্তু এই বোমা আতঙ্ক আর খাদ্য সংকটের ভেতর থাকা গাজাবাসী রমজান পালনের বিষয়ে বেশ মনোবলের অধিকারী।
গাজার ফারাস মার্কেটে ৫৯ বছর বয়সী আমেনা হামিদা বোমারু বিমান ও শেলের শব্দ উপেক্ষা করে ‘মাকলুবা’ নামক এক ঐতিহ্যবাহী সবজি কিনছিলেন। নাতি-নাতনিদের নিয়ে তিনি প্রথম রোজাটি বেশ আনন্দের সঙ্গে শুরু করতে চানÑ এই তার ইচ্ছা।
হামিদা বলেন, ‘আজ তেরটি বছর ধরে আমরা অবরুদ্ধ আছি। আমরা আল্লাহর কাছে শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য দোয়া করি।’
‘রমজান এলে আমাদের আনন্দ লাগে। আমাদের সন্তানরা রমজানকে ভালোবাসে। কিন্তু রমজানকে আমরা তেমন করে উপভোগ করতে পারি না। কারণ, আমাদের সব সময় চিন্তা থাকে, এই বোমা হামলা কবে বন্ধ হবে?’ যোগ করেন হামিদা।
সূত্র : ইসলাম টাইমস