আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ২১-০৫-২০১৯ তারিখে পত্রিকা

লোডশেডিংয়ে দুর্ভোগ

বাঁশখালীতে দৈনিক ১০ ঘণ্টাও বিদ্যুৎ থাকে না

বাঁশখালী (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা
| দেশ

চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় সারা বছরই থাকে পল্লী বিদ্যুতের ভেল্কিবাজি। একদিকে চলছে গ্রীষ্মের তাপপ্রবাহ, অন্যদিকে গুরুত্বপূর্ণ মাস মাহে রমজান। পবিত্র রমজানের শুরু থেকে তীব্র গরমের মধ্যে অসহনীয় লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে এ উপজেলা ৮০ হাজারের চেয়ে অধিক গ্রাহক। তারাবির নামাজ, সাহরি ও ইফতারের মতো গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বাঁশখালীজুড়ে লোডশেডিং অব্যাহত রয়েছে। সারা বছর বিদ্যুতের ভেল্কিবাজিতে অতিষ্ট বাঁশখালীবাসী। দিনের বেশির ভাগই বিদ্যুৎ থাকে না। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে চলে বিদ্যুতের যাওয়া-আসা। অব্যাহত লোডশেডিং ও ভ্যাপসা গরমে জনজীবন অসহনীয় হয়ে উঠছে। রাতে দীর্ঘক্ষণ বিদ্যুৎ না থাকায় মানুষ গরমে নিন্দ্রাহীন অবস্থায় রাত্রী পার করছেন। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অসুবিধায় পড়েছে ছোট ছোট শিশু ও বয়স্করা। বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া ব্যাহত হওয়া ছাড়াও অফিস-আদালতে কাজকর্ম স্থবির হয়ে পড়েছে। হাসপাতালে গুরুতর অসুস্থ রোগীদের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়ছে। শিশু-বৃদ্ধরা আক্রান্ত হচ্ছে নানা জটিল অসুখে। গেল এক মাসে দৈনিক গড়ে ১০ ঘণ্টাও বিদ্যুৎ পাচ্ছে না বলে দাবি এলাকাবাসীর। এক এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ আসতে না আসতেই বন্ধ হয়ে যায় অন্য এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ। এত ঘন ঘন বিদ্যুৎ আসা-যাওয়ার কারণে লাইট, টিভি, ফ্রিজ ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইলেকট্রিক জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে দুর্ভোগ বেড়েছে গ্রাহকের। সরেজমিন দেখা যায়, অতিরিক্ত লোডশেডিংয়ের কারণে বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ীরা সময় মতো তাদের পণ্য গ্রাহকের কাছে দিতে পারছেন না। এতে করে সাধারণ মানুষ তীব্র ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। পল্লী বিদ্যুৎ বাঁশখালী জোনাল অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় বর্তমান গ্রাহকসংখ্যা প্রায় ৮০ হাজারের অধিক। এর মধ্যে আবাসিক গ্রাহক ৭ হাজার ৮১৩, বাণিজ্যিক ৪ হাজার ৮০২, শিল্প ৩৪৩, সেচ সংযোগ রয়েছে ৫৮০টি, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দির, গীর্জায় ১ হাজার ১৬৪। সর্বমোট ৭৭ হাজার ৭৫৫ বাকিগুলো চলমান সংযোগ। চাম্বল এলাকার বাসিন্দা তরুণ আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাজ্জাত হোসেন তালুকদার বলেন, রমজানে ঘন ঘন লোডশেডিং আমাদের জনজীবনকে অতিষ্ট করে তুলেছে। দিনে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টাও আমরা বিদ্যুৎ পাই না। এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. তৌহিদুল আনোয়ার বলেন, অতিরিক্ত লোডশেডিংয়ের কারণে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অনেক মূল্যবান যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বিদ্যুতের ব্যাপক হারে লোডশেডিংয়ের কারণে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তিকৃত রোগীরা তীব্র গরমে অতিষ্ট হয়ে পড়ছেন। যেখানে রোগীরা সেবা নিতে মেডিকেলে আসেন, সেখানে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ বাঁশখালী জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার নাইমুল হাসান জানান, বাঁশখালীতে যথেষ্ট বিদ্যুতের চাহিদা থাকার পরও মোটামুটি বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। অনেক সময় সংযোগ ক্যাবলে গাছের ডালপালা ছাঁটাই করতে গিয়ে সাময়িক বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে কাজ করতে হয়। তবে চেষ্টা করি সর্বোচ্চ বিদ্যুৎসেবা প্রদান করতে। তিনি আরও বলেন, লোডশেডিংয়ের বর্তমান সমস্যা আমাদের সৃষ্ট নয়। এটি চন্দনাইশ গ্রিডের সমস্যা। কারণ দোহাজারী থেকে সাতকানিয়া হয়ে দীর্ঘ ৪৫ কিলোমিটার অতিক্রম করে বাঁশখালীতে বিদ্যুৎ আসে। তবে গুণাগুরি থেকে সাতকানিয়া হয়ে রাস্তাগুলো পাহাড়ি এবং অতিরিক্ত খারাপ হওয়ায় জনবল সংকটের কারণে ত্রুটির সৃষ্টি হয়। যার ফলে সাময়িক বিদ্যুৎ বিভ্রাট হয়ে থাকে। বাঁশখালীতে ৮০ হাজার গ্রাহকের মধ্যে প্রতিদিন আমাদের চাহিদা লাগে ২২ মেগাওয়াট, এরই মধ্যে আমরা ২২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎই পাচ্ছি। বর্তমানে চাহিদা অনুযায়ী আমরা বিদ্যুৎ সরবরাহ করছি, যার ফলে তেমন কোনো বড় ধরনের লোডশেডিং হচ্ছে না।