বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাবে ধরিত্রীর ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাব্য বিবরণ নিয়ে চলছে বিশ্বব্যাপী নানা উৎকণ্ঠা। সদ্য এক গবেষণার তথ্যমতে, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে গ্রিনল্যান্ড ও অ্যান্টার্কটিকায় বরফ গলার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় এ শতকের শেষ নাগাদ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা যতটুকু বাড়বে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল, তা আরও বেড়ে দ্বিগুণ হতে পারে বলে নতুন এক গবেষণায় আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। সাগরপৃষ্ঠের ওপর তুষারস্রোতের প্রভাব নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সুখ্যাত বিজ্ঞান সাময়িকী ‘প্রসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেস’ জার্নালে প্রকাশিত গবেষণার বরাত দিয়ে বিবিসির প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। এতদিন পর্যন্ত বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল, ২১০০ সাল নাগাদ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা সর্বোচ্চ এক মিটার বাড়তে পারে। বিশেষজ্ঞ মতামতের ভিত্তিতে নতুন গবেষণা বলছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা এর দ্বিগুণের বেশি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এর ভয়ংকর পরিণামে লাখ লাখ মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়তে পারে। বলাই বাহুল্য, এর প্রভাব বাংলাদেশের জনজীবনে ভয়াবহ দুর্গতি সৃষ্টির শঙ্কা রয়েছে।
উল্লেখ্য, জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক জাতিসংঘের সংস্থা ইন্টার গভার্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জের (আইপিসিসি) ২০১৩ সালের পঞ্চম মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ক্রমবর্ধমান উষ্ণতার কারণে ২১০০ সালের মধ্যে বিশ্বে পানির স্তর ৫২ থেকে ৯৮ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে। অনেক বিশেষজ্ঞ এ অনুমানকে রক্ষণশীল হিসেবে দেখে আসছেন। বিজ্ঞানীরাও মনে করছেন, সাগরপৃষ্ঠের ওপর ব্যাপক তুষারস্রোতের প্রভাব নিয়ে পূর্বাভাসের জন্য যেসব মডেল ব্যবহার করা হয়, সেগুলো বরফ গলার বর্তমান অনিশ্চয়তাগুলোকে হিসাবে ধরে না। তবে মতদ্বৈধতা যাই থাকুক, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা যে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে, এটা নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। আর এ ধারা অব্যাহত থাকলে আগামীর পৃথিবীর জন্য তা যন্ত্রণাই বয়ে আনবে। ফলে বিশ্বের খাদ্য উৎপাদনকারী অনেক ভূমি হারিয়ে যেতে পারে। বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ এলাকায় মানুষের বাস করা কঠিন হয়ে পড়বে। সবচেয়ে বড় কথা, পরিবেশগত উদ্বাস্তুর সংখ্যা তীব্রতর হবে। ফলে মানুষ হন্যে হয়ে দেশান্তরী হবে। শুরু হবে বিশ্বব্যাপী নতুন ধরনের অস্থিরতা, যা পৃথিবীর ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক সমীকরণকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।
বাংলাদেশ পরিবেশগত পরিবর্তনজনিত ক্ষয়ক্ষতির চরম বিন্দুতে রয়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা আশঙ্কাজনক হারে বাড়লে উপকূলবাসীর পক্ষে টিকে থাকা দুরূহ হয়ে পড়বে। পাশাপাশি বিপুল এলাকা জলমগ্ন হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। আর লবণাক্ত পানির আধিক্যে মানুষ ও পরিবেশের জন্য ভয়াবহ প্রতিকূল পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। এ অবস্থা থেকে সুরক্ষায় এখনই টেকসই ব্যবস্থা নিয়ে এগোতে হবে। পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে মনোযোগী হওয়া জরুরি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেও এক্ষেত্রে বাংলাদেশের সমস্যার সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। কারণ এটি বৈশ্বিক সমস্যা। এর সমাধান বৈশ্বিক পরিম-লেই খুঁজতে হবে। হ