আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ২৪-০৫-২০১৯ তারিখে পত্রিকা

চট্টগ্রামে জমে উঠেছে ঈদবাজার

শানে আলম সজল, চট্টগ্রাম
| নগর মহানগর

- পছন্দের জিনিস কিনতে দোকানে দোকানে ঘুরছে ক্রেতারা

- বিক্রি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া বিক্রেতাদের

- সুতি কাপড়ের কদর বেশি

পবিত্র রমজানের অর্ধেক শেষ। ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে চট্টগ্রামে ঈদের কেনাবেচাও তত জমে উঠছে। চট্টগ্রাম নগরীর মার্কেট আর বিপণিবিতানগুলোতে এখন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ঈদের কেনাকাটা চলছে। ব্যবসায়ীদের দম ফেলার ফুরসত নেই। 

বুধবার বাণিজ্য রাজধানীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক এলাকা টেরিবাজার, রিয়াজুদ্দিন বাজার, জিইসির মোড়, চকবাজার, আগ্রাবাদসহ নগরীর ছোট থেকে বড় মার্কেটের কাপড় ও জুতার দোকানগুলো ঘুরে দেখা গেছে বিপুলসংখ্যক ক্রেতা ঈদের কেনাকাটা করছেন। বিপুলসংখ্যক উৎসাহী শিশু, মহিলা, তরুণ-তরুণী ঈদ উপলক্ষে আসা নিত্যনতুন ফ্যাশনের জামা, শাড়ি এবং জুতা নিচ্ছেন। পছন্দের জিনিসটি কিনতে এক দোকান থেকে অন্য দোকানে ঘুরছেন ক্রেতারা। এবার গরমের তীব্রতা বেশি হওয়ার কারণে ক্রেতারা বেশি কিনছেন সুতির কাপড়। তাই কদরও বেড়েছে এসব কাপড়ের। বেচা-বিক্রি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে বিক্রেতাদের মাঝে। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বিপণিবিতানগুলো নারী ক্রেতাদের দখলে থাকছে। পুরুষের উপস্থিতি বাড়ে রাতের বেলায়। নগরীর মানুষ এখন মার্কেটমুখী। সামর্থ্যরে মধ্যে পছন্দের জামা, কাপড়, শাড়ি, জুতা এবং প্রসাধনী কিনে খুশিমনে বাড়ি ফিরছেন সবাই। তবে গতবারের চেয়ে সব জিনিসের দাম এবার তুলনামূলক বেশি বলে অভিযোগ ক্রেতাদের। 
তবে বিক্রেতারা বলছেন দাম এবার হাতের নাগালে রয়েছে। এবারের ঈদবাজারে মহিলা ক্রেতারা কিনছেন ভারতীয় পার্টি ও টিস্যু শাড়ি, দেশীয় কাতান, দেশি জামদানি, দেশীয় কটনশাড়ি, টাঙ্গাইলের তাঁতের ও সুতির নকশি শাড়ি। থ্রি-পিসের দোকানে বেশিরভাগ বুটিকস, ক্যাটলক, মহিনি গ্লামার, গাউন, বিপন এবং বিনয় বাহারি নামের সব পোশাকের দিকে ক্রেতাদের আগ্রহ বেশি। তরুণী ক্রেতারা কিনছেন ভারতীয় গারারা, গঙ্গা, কারমা, দিল্লি বুটিকস ও এলিট, পাকিস্তানি আসিম ঝুপা, মরিয়ম, সানাসাফিনাসহ বাহারি সব নামের থ্রি-পিস। শিশু ক্রেতাদের আগ্রহ দেখা গেছে গেঞ্জি, ফতুয়া ও পাঞ্জাবির প্রতি। পুরুষ ক্রেতারা কিনছেন জিন্সের প্যান্ট, শার্ট ও পাজামা-পাঞ্জাবি। বরাবরের মতো এবারও তরুণদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে পাঞ্জাবি। তাই ব্রান্ডের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের উপস্থিতি বাড়ছে। নগরীর সবচেয়ে বড় কাপড়ের বাজার টেরিবাজারে গিয়ে দেখা যায়, দিনরাত সমান তালে ক্রেতারা দোকানে দোকানে ভিড় করছে কাপড় নিতে। টেরিবাজারের আজমির শপিং সেন্টারের বিক্রয়কর্মী মো. খালেক বলেন, টেরিবাজারের দোকানগুলোতে পাইকারি-খুচরা উভয় কাপড় বিক্রি হয়। রমজান শুরুর এক মাস আগে থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের দোকানিরা এসে পাইকারি মালামাল নিয়ে যায়। ১০ রমজানের পর পাইকারি বিক্রি কমলেও বেড়েছে খুচরা বিক্রি। বেলা ১১টা থেকে রাত ২টা পর্যন্ত দোকান খোলা থাকে। যতক্ষণ খোলা থাকে ততক্ষণ ক্রেতারা ভিড় করতে থাকে। 
আজমির শপিংয়ে শাড়ি নিতে আসা গৃহিণী নাজমা আক্তার বলেন, ছেলেমেয়েদের কাপড় আগে-ভাগে কিনে সেলাই করতে টেইলার্সে দিয়েছেন। পছন্দের শাড়ি ও থান কাপড় নিতে লালখান বাজার থেকে টেরিবাজারে এসেছি। টেরিবাজারে কাপড়ের মান ভালো এবং দামও কম থাকে বলেন এ গৃহিণী। টেরিবাজারে হরেক রকম কাপড়ের বেশ কয়েকটি শোরুম রয়েছে। সেখানে ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে। টেরিবাজারের সবচেয়ে বড় কাপড়ের দোকান সানা ফ্যাশন মলের দোকানের বিক্রয়কর্মী মো. কামাল বলেন, আমাদের বিদেশি সব কালেকশন আছে। ফিক্সড প্রাইজের পণ্য বিক্রি হয়। এবার দেশীয় বুটিকসের থ্রি-পিসের সঙ্গে বেশি চলছে পাকিস্তানি সানাসাফিনা, মরিয়ম, গোলবাহার থ্রি-পিস। 
এছাড়াও ভারতীয় গারারা, দিল্লি বুটিকসের কাপড়ের কদর বেড়েছে। গরমের তীব্রতার কারণে ক্রেতারা সুতির জামা বেশি কিনছেন। তিনি বলেন, ইন্ডিয়ান গারারা থ্রি-পিস ৩ হাজার থেকে শুরু করে মানভেদে ১০ হাজার টাকার ঊর্ধ্বে বিক্রি হচ্ছে। দিল্লি বুটিকসের থ্রি-পিস ৪ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। পাকিস্তানি সানাসাফিনা থ্রি-পিস ৭ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা দামের আছে। অভিজাত বস্ত্র বিপণি সানা ফ্যাশন মলের শাড়ি বিক্রয়কর্মী মো. জাহেদ বলেন, এবারের ঈদের বেচাকেনা খুব ভালো। বর্তমানে ২ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা মূল্যে নিমজরি ও সুতা-চুমকির টিস্যু শাড়ি, ৩ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা মূল্যে সিল্ক ও জর্জেট শাড়ি, ইন্ডিয়ান কাতান শাড়ি ২ থেকে ৫ হাজার টাকা, বাংলাদেশি কাতান ১ হাজার থেকে ৩ হাজার, জামদানি শাড়ি ৩ থেকে ৮ হাজার এবং ১০ থেকে ৩০ হাজার টাকা মূল্যে ইন্ডিয়ান পার্টি শাড়ি বিক্রি হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এবারের ঈদবাজারে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে ইন্ডিয়ান পার্টি-শার্টি, সিল্ক, ঢাকাইয়া জামদানি ও টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি। টেরিবাজারের অভিজান বস্ত্র বিপণি নূর ক্লথ স্টোরের দোকানি ইউসুফ মিয়া বলেন, গত বছরে তুলনায় বেচা-বিক্রি কম। প্রবাসীদের মন্দা অর্থনীতির প্রভাব কাপড়ের দোকানগুলোতে পড়েছে। বিদেশে প্রবাসীদের আয় রোজগার ভালো হলে কাপড়ের দোকানের ব্যবসা ভালো হয়।