আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ২৪-০৫-২০১৯ তারিখে পত্রিকা

মালিকদের ক্ষোভ-হুঁশিয়ারি

ঈদে ২৩ লঞ্চ ভিড়তে বরিশাল নৌবন্দরে তিনটি পন্টুন

খান রফিক, বরিশাল
| শেষ পাতা

২০১২ সালে ঢাকা-বরিশাল নৌরুটে ১৪টি লঞ্চ চলাচল করত। ওই সময় বরিশাল বন্দরে পন্টুন ছিল তিনটি। এবারের ঈদ উৎসবে এ রুটে বৃহৎ ২৩টি লঞ্চ চলাচল করবে; কিন্তু ৭ বছর পর পন্টুন সংখ্যা সেই তিনটিই রয়েছে। পন্টুনের এমন তীব্র সংকটে ঈদে দুর্ভোগ ও দুর্ঘটনার আশঙ্কা করা হচ্ছে সব সেক্টর থেকে। এরপরও বৃহস্পতিবার বরিশালে ঈদ উপলক্ষে বিশেষ সমন্বয় সভায় পন্টুন বৃদ্ধির প্রস্তাব নাকচ করে দেওয়া হয়েছে। ঢাকা-বরিশাল নৌপথের লঞ্চ মালিকরা উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ক্ষোভ-অসন্তোষ প্রকাশ করে নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। বেলা ১১টায় বরিশাল জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমানের সভাপতিত্বে ঈদ উপলক্ষে বিশেষ সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। 

সভায় যাত্রী নিরাপত্তায় পন্টুনের সংখ্যা বৃদ্ধির তাগিদ দেন লঞ্চ মালিকরা। এমনকি নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপপরিচালক আজমল হুদা মিঠু সংকটের কথা তুলে ধরে পন্টুন বৃদ্ধির প্রস্তাব রাখেন। প্রয়োজনে খেয়াঘাট সরিয়ে পন্টুন স্থাপনের কথাও তিনি জানান। তবে সভায় জেলা প্রশাসক বলেন, এ মুহূর্তে পন্টুন বাড়ানো যাবে না। তাছাড়া নতুন পন্টুন রাখার পর্যাপ্ত স্থানও নেই বন্দর এলাকায়। লঞ্চগুলো যাতে একটির পেছনে আর একটি বার্দিং করা না হয় সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সভায় জেলা প্রশাসকের তাগিদে আজমল হুদা মিঠু বলেন, ঈদে লঞ্চ দুর্ঘটনা এড়াতে সর্বোচ্চ সতর্কতা নেওয়া হবে। বাড়তি যাত্রী লঞ্চে নিতে দেওয়া হবে না। 

তবে সমন্বয় সভার এমন সিদ্ধান্তে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন এমভি পারাবাত লঞ্চের স্বত্বাধিকারী শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া। তিনি বলেন, লঞ্চ ভেড়ানোর যেহেতু কোনো ব্যবস্থাই করছে না, সেহেতু ঈদের পর লঞ্চ চালানো বন্ধ করে দেবেন। তিন মাস আগে বিষয়টি নৌপ্রতিমন্ত্রী ও চেয়ারম্যানকে বরিশাল বন্দরে পন্টুন দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যানকে ফোন করে বৃহস্পতিবারও পন্টুন দেওয়ার কথা বলা হয়েছে; কিন্তু এ মুহূর্তে পন্টুন দিতে চাননি। তিনি বলেন, এমনটি হলে লঞ্চ তো ভেঙেচুরে যাত্রী দুর্ঘটনায় পড়বে। 
লঞ্চ মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় নেতা সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, তিনি ঈদে ঝুঁকি এড়াতে পন্টুন বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু তারা রাজি হননি। অন্তত দুটি পন্টুন দরকার বরিশাল নৌবন্দরে। দুই মাস আগে এ বিষয়টি বলা হয়েছে। তিনি বলেন, এবার লঞ্চের সংখ্যা বেশি। পন্টুন না বাড়ালে লঞ্চগুলো বাধ্য হয়ে একটার পেছনে আর একটি ভিড়বে। তাতে যাত্রী ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। অবশ্য জেলা প্রশাসন সভায় বলেছেন পেছেনে ভিড়তে পারবে না কোনো লঞ্চ।
এমভি সুন্দবন-৯ এর মাস্টার মো. মজিবর রহমান বলেন, এবার ২২ থেকে ২৩টি লঞ্চ ঈদে সার্ভিস দেবে। গত বছর ঈদে লঞ্চ চলেছে ১৮টি। তিনি বলেন, তাদের অন্যতম সমস্যা পন্টুন সংকট। ঈদের সময় ২২-২৩টি লঞ্চ এ পন্টুনে বার্দিং সম্ভব নয়। বর্তমানে যে পন্টুন রয়েছে তাতে ১৪ থেকে ১৫টি লঞ্চ ভেড়ানো যায়। বাকিগুলো একটির পেছনে আর একটি ঝুলতে থাকে। তারা বিষয়টি পোর্ট অফিসারকে অবহিত করে আরও দুটি পন্টুন স্থাপনের আহ্বান জানিয়েছেন। পারাবাত-৯ লঞ্চের মাস্টার শামিম আহমেদ বলেন, পন্টুনের সংখ্যা না বাড়ালে ঈদে বরিশাল বন্দরে লঞ্চ ভেড়ানো কঠিন হয়ে যাবে। বরিশাল-ঢাকা লঞ্চ রোটেশন প্রথা বন্ধে গঠিত কমিটির সদস্য কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, ঈদে হাজার হাজার যাত্রী আসবে; কিন্তু সময়মতো লঞ্চ ভিড়তে পারবে না। এখানে প্রতিযোগিতা থেকেই যাবে। ফলে যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তিনি ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।