আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ২৪-০৫-২০১৯ তারিখে পত্রিকা

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক

উড়াল সড়ক, সেতু ও ওভারপাস খুলছে কাল

সাগর আহম্মেদ, কালিয়াকৈর
| শেষ পাতা

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঘরমুখো যাত্রীদের নিরাপদে ও নির্বিঘেœ ঈদযাত্রার জন্য ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চারলেনের দুটি উড়াল সড়ক, দুটি সেতু, চারটি ওভারপাস কাল থেকে খুলে দেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কাল (শনিবার) এসব উড়াল সড়ক ও সেতু আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন। ফলে এবার ঈদে এ মহাসড়ক দিয়ে নিরাপদে ও নির্বিঘেœ বাড়ি ফিরবে ঘরমুখো মানুষ। তবে এ মহাসড়কে গাড়ি থামিয়ে বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজি, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং, চালকদের এলোমেলো গাড়ি চালানো, নিষিদ্ধ হওয়ার পরও পুলিশকে মাসোহারা দিয়ে অটোরিকশা, সিএনজি অটোরিকশা মহাসড়কে চলাচল করায় নির্বিঘেœ ঈদযাত্রা নিয়ে কিছুটা শঙ্কায় রয়েছেন যাত্রীরা। 
এলাকাবাসী, যাত্রী, পরিবহন শ্রমিক ও পুলিশ জানায়, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন দেশের উত্তরবঙ্গের ১১৮টি রোডের হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করে। ঈদে যানবাহনের চাপ আরও বৃদ্ধি পায়। উত্তরবঙ্গের সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগের একমাত্র পথ এ মহাসড়কে এক সময় যানজট ছিল নিত্যনৈমিত্তিক। যানজটে আটকে পড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানবাহনে বসে থাকতে হতো। ভাঙাচোরা সড়কে এলোমেলো গাড়ি চলাচল ও ধুলায় ধূসর হয়ে উঠত মহাড়সকটি। এসব কারণে অসুস্থ হয়ে পড়তেন অনেক যাত্রী। আবার সময়মতো পৌঁছতে না পেরে অনেকেই নানা সমস্যার সম্মুখীন হতেন। বিশেষ করে দুটি ঈদের ছুটিতে ঘরমুখো মানুষকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হতো। এছাড়া পহেলা বৈশাখ, পূজাসহ বিভিন্ন উৎসব ছুটিতেও দুর্ভোগ কম ছিল না। গাজীপুরের কড্ডা, কোনাবাড়ী ও কালিয়াকৈরের চন্দ্রা ত্রিমোড়েতো যানজট লেগেই থাকত। 
এখানকার হাইওয়ে, জেলা ও থানা পুলিশ, কমিউনিটি পুলিশসহ স্থানীয় প্রশাসনের লোকজন এসব এলাকার যানজট নিরসনে ব্যস্ত ছিলেন; কিন্তু তারা যানজট নিরসনে হিমশিম খেতেন। ফলে দুই ঈদে অন্য জেলা-থানা পুলিশ এসব এলাকায় যানজট নিরসনে কাজ করেছেন। তাদের পাশাপাশি স্কাউট শিক্ষার্থীরা যানজট নিরসনে কাজ করে। তবুও লেগেই থাকত চিরচেনা সেই যানজট। ফলে এ পথে যাতায়াতের কথা শুনলেই শরীরে ঘাম ঝরা শুরু হতো। এসব বিবেচনায় এ মহাসড়ক চারলেনে উন্নতিকরণের কাজটি হাতে নেয় বর্তমান সরকার। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের উদ্যোগে এডিবির অর্থায়নে সাউথ এশিয়া রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন প্রজেক্টের আওতায় ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে এ মহাসড়কের চারলেনের কাজ শুরু হয়। ৫ হাজার ৫৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে গাজীপুর ভোগড়া বাইপাস মোড় থেকে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার মহাসড়ক চারলেনে উন্নতিকরণ করা হচ্ছে। এ প্রকল্পে ৯টি উড়াল সড়ক, দুটি রেলওয়ে ওভারপাস ব্রিজ, ২৬টি সেতু নির্মাণ, ৭৪টি কালভার্ট সম্প্রসারণ, সাতটি আন্ডারপাস ও ১৩টি পথচারী সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে কালিয়াকৈর উপজেলার গোয়ালবাথান এলাকার এবং টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার দেওড়া এলাকার দুটি রেলওভার ব্রিজ খুলে দেওয়া হয়েছে আগেই। এবার ঈদে নিরাপদে ও নির্বিঘেœ ঘরমুখো মানুষের বাড়ি ফেরার জন্য গাজীপুরের কোনাবাড়ী ১ হাজার ৬৫০ মিটার দীর্ঘ ও কালিয়াকৈরের চন্দ্রা ত্রিমোড়ে ৩০০ মিটার দীর্ঘ দুটি উড়াল সড়ক খুলে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া গাজীপুরের কড্ডা ও বাইমাল এলাকায় দুটি সেতুসহ চারটি ওভারপাস খুলে দেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কাল (শনিবার) এসব উড়াল সড়ক ও সেতু আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন। 
এদিন প্রধানমন্ত্রী একই মহাসড়কের কড্ডা ও বাইমাল এলাকায় দুটি সেতু এবং চারটি ওভারপাসও উদ্বোধন করবেন বলেও জানিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। সংশ্লিষ্টদের দাবি, এটি খুলে দেওয়ার ফলে এবার ঈদে এ মহাসড়ক দিয়ে নিরাপদে ও নির্বিঘেœ বাড়ি ফিরবে ঘরমুখো মানুষ। তবে এ মহাসড়কে ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন থামিয়ে একাধিক স্থানে চাঁদাবাজি, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং, চালকদের এলোমেলো গাড়ি চালানো, নিষিদ্ধ হওয়ার পরও পুলিশকে মাসোহারা দিয়ে অটোরিকশা, সিএনজি অটোরিকশা মহাসড়কে চলাচল করা, অতিরিক্ত ভাড়াসহ বিভিন্ন কারণে নির্বিঘেœ ঈদযাত্রা নিয়ে কিছুটা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় লোকজন ও যাত্রীরা। 
সালনা (কোনাবাড়ী) হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মজিবর রহমান জানান, ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নির্বিঘœ করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে পুলিশ। এছাড়া অটোরিকশা, সিএনজি অটোরিকশা মহাসড়কে চলাচল একেবারেই নিষিদ্ধ। তারপরও হয়তো দু-একটি এসব যান চলাচল করছে। সেগুলো নিয়ন্ত্রণে জেলা পুলিশ এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে। তবে এবার ঈদে নিরাপদ ও নির্বিঘœ ঘরমুখো মানুষ চলাচল করবে। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী ও সাউথ এশিয়া সাব-রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক) প্রজেক্টের এক নম্বর প্যাকেজের প্রকল্প ব্যবস্থাপক হাফিজুর রহমান জানান, সাসেক-১ এর কাজ প্রায় শেষ; বর্তমানে সাসেক-২ এর কাজ চলছে। এবারের ঈদযাত্রা নিরাপদে ও নির্বিঘেœ করার জন্য দুটি ফ্লাইওভার, দুটি সেতু ও চারটি ওভারপাস খুলে দেওয়া হবে, যা কাল (শনিবার) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন। এর ফলে এবারের ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক হবে। সুতরাং ঘরমুখো মানুষের ঈদযাত্রায় আর কষ্ট হবে না।