আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ২৪-০৫-২০১৯ তারিখে পত্রিকা

রাষ্ট্র মেরামতের লক্ষ্যে সুজনের ১৮ সংস্কার প্রস্তাব

নিজস্ব প্রতিবেদক
| শেষ পাতা

দেশে চলমান রাজনৈতিক ধারাকে জনগণের জন্য অকল্যাণকর উল্লেখ করে জনকল্যাণমুখী রাজনীতি ফিরিয়ে আনার জন্য রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন ও সংস্কার প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) নেতারা। রাজনৈতিক সংস্কৃতি, নির্বাচন পদ্ধতি, সংবিধান সংশোধন, বিকেন্দ্রীকরণ ও স্থানীয় সরকার, স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠা, নির্বাচন কমিশন সংস্কারসহ ১৮টি প্রস্তাব দিয়েছে সুজন। এসব সংস্কার প্রস্তাবের আলোকে জাতীয় সনদ তৈরি করার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। দেশের চলমান সংকট থেকে উত্তরণের জন্য এসব সংস্কার জরুরি বলে মনে করছে তারা। বৃহস্পতিবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে সুজন আয়োজিত ‘কোন দলের কেমন ইশহেতার’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে সুজনের পক্ষ থেকে ১৮ সংস্কার প্রস্তাব তুলে ধরা হয়।
সুজনের সভাপতি ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খানের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন, সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, নির্বাহী সদস্য  সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, প্রকৌশলী মুসবাহ আলীম, সুজনের জাতীয় কমিটির সদস্য ড. সিআর আবরার, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ব্যারিস্টার রুহিন ফারহানা, আবদুল্লাহ আল ক্বাফি রতন, সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, গেল বছর নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময়ে আমাদের তরুণরা ‘রাষ্ট্র মেরামতের’ দাবি তুলেছিল। সাম্প্রতিক নির্বাচন ও পরবর্তী সময়ের অভিজ্ঞতা থেকে এটি সুস্পষ্ট যে, রাষ্ট্র মেরামতের বিষয়টি এখন সময়ের দাবি। প্রয়োজনীয় আইন, কানুন, নীতি, কাঠামো, মূল্যবোধ, পদ্ধতি, প্রক্রিয়া ও প্রতিষ্ঠান একটি রাষ্ট্রের ‘গভর্নেন্স’ বা শাসন ব্যবস্থার অপরিহার্য অঙ্গ। রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রয়োগের মাধ্যমে শাসন কাঠামোর এসব অঙ্গ সক্রিয়তা অর্জন করে। তবে ক্ষমতার সঠিক ব্যবহার হলে শাসন কাঠামো কার্যকর হয়, যা রাষ্ট্রে সুশাসন কায়েম করে। আর ক্ষমতার লাগামহীন ব্যবহার হলে রাষ্ট্রে ‘চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স’ বা নজরদারিত্বের কাঠামো ভেঙে যায়। ফলে এসব অঙ্গগুলো কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে, রাষ্ট্রে অপশাসন কায়েম হয় এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়নের বিস্তার ঘটে। তাই রাষ্ট্র মেরামতের সূচনা হতে হবে শাসন কাঠামোকে কার্যকর করার মাধ্যমে, যার জন্য প্রয়োজন রাষ্ট্র ব্যবস্থাপনায় কতগুলো সুদূরপ্রসারী সংস্কার।
তারা আরও বলেন, আমরা মনে করি, মানব সেবার সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা হচ্ছে রাজনীতি। রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই দেশে অর্জিত হতে হবে গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সুশাসন। আর এজন্য প্রয়োজন সুস্থ ধারার তথা আদর্শভিত্তিক ও জনকল্যাণমুখী রাজনীতি। এককালে এ দেশে সুস্থ ধারার রাজনীতি চর্চা হলেও, বর্তমানে অনেকাংশেই তা অপরাজনীতি ও দুর্বৃত্তায়নের শিকার। কিন্তু জনকল্যাণমুখী রাজনীতি ফিরিয়ে আনার জন্য রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তনের কোনো বিকল্প নেই, যার জন্যও প্রয়োজন রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক সংস্কার।
এ সময় অনুষ্ঠানে সুজনের সংস্কার প্রস্তাবগুলো তুলে ধরা হয়। প্রস্তাবগুলো হলো রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন, নির্বাচনি সংস্কার, কার্যকর জাতীয় সংসদ, স্বাধীন বিচার বিভাগ, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন, সাংবিধানিক সংস্কার, গণতান্ত্রিক ও স্বচ্ছ রাজনৈতিক দল, স্বাধীন বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান, দুর্নীতিবিরোধী সর্বাত্মক অভিযান, যথাযথ প্রশাসনিক সংস্কার, বিকেন্দ্রীকরণ ও স্থানীয় সরকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, শক্তিশালী নাগরিক সমাজ, মানবাধিকার সংরক্ষণ, অর্থনৈতিক বৈষম্য নিরসনে একটি নতুন সামাজিক চুক্তি, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, আর্থিক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, তরুণদের জন্য বিনিয়োগ।
বক্তারা এসব প্রস্তাবনার বিস্তারিত আলোচনা ছাড়াও আরও বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে আমাদের রাজনীতিতে চরম ভারসাম্যহীনতা এবং সংকটময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। অতীতে অনেকবার আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে জাতিগতভাবে আমরা রাজনৈতিক সংকট সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছি। ১৯৯০ সালে স্বৈরশাসনবিরোধী আন্দোলনের সময় ‘রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পারিক আচরণবিধি’ (তিন জোটের রূপরেখা) স্বাক্ষর ছিল এ ধরনের উদ্যোগের একটি সফল পরিণতি। তবে রূপরেখা স্বাক্ষরের ক্ষেত্রে উদ্যোগটি সফল হলেও, বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তা ছিল চরম ব্যর্থ; যে ব্যর্থতার দায়ভার আজও জাতিকে বহন করতে হচ্ছে, বার বার নিপতিত হতে হচ্ছে গভীর সংকটে।