আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ২৪-০৫-২০১৯ তারিখে পত্রিকা

‘হাইকোর্টকেই হাইকোর্ট দেখাচ্ছেন’

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের প্রতি হাইকোর্টের ক্ষোভ

নিজস্ব প্রতিবেদক
| প্রথম পাতা

বাজার থেকে ৫২টি ভেজাল পণ্য সরানোর বিষয়ে কোনো প্রতিবেদন দাখিল না করায় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের প্রতি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। নামিদামি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৫২টি ভেজাল খাদ্য পণ্য বাজার থেকে প্রত্যাহার চেয়ে দায়ের করা রিটের শুনানিতে বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের বেঞ্চ এ ক্ষোভ প্রকাশ করেন। 

আদালত নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের উদ্দেশে বলেন, ‘আমাদের ভদ্রতাকে দুর্বলতা মনে করবেন না, ৫২টি ভেজাল খাদ্য পণ্য নিয়ে হাইকোর্টকেই হাইকোর্ট দেখাচ্ছেন। আপনাদের নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের অফিসে রাখার দরকার কী? আপনারা তো ব্যাংকের কেরানিগিরি করতে পারেন। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের এখানে থাকার দরকার কী? বাসায় গিয়ে রান্নাবান্নার কাজ করুন। আপনারা আদালতের আদেশ মানেনি। এখনও মানহীন পণ্য বাজারে আছে। ধোকা দিয়েছেন। ১৭ জন জনবল নিয়েও আপনারা একটি দোকান থেকে কোনো পণ্য সরাতে পারেননি। ১৭ জনের দলবল নিয়ে অফিসের পাশের কোনো দোকান থেকে একটি প্যাকেটও সরাতে পারেননি।’ ক্ষোভ প্রকাশের পর আদালত নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানকে তলব করেন। আগামী ১৬ জুন তাকে আদালতে হাজির হয়ে ৫২টি পণ্য বাজার থেকে না সরানোর কারণ ব্যাখ্যা করতে বলা হয়। একই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে কেন আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হবে নাÑ মর্মে রুল জারি করা হয়। জবাব দিতে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানকে দুই সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, বিএসটিআইয়ের পরীক্ষা করা আরও ৯৩ পণ্যের প্রতিবেদন আগামী ১৬ জুনের মধ্যে দাখিল করতে বিএসটিআইকে 

নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। শুনানিতে রিটের পক্ষে বক্তব্য উপস্থাপন করেন অ্যাডভোকেট শিহাব উদ্দিন খান। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পক্ষে অ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলাম, বিএসটিআইয়ের পক্ষে ব্যারিস্টার এমআর হাসান ও রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেছুর রহমান। এছাড়া, শুনানিতে প্রাণ অ্যাগ্রোর পক্ষে অ্যাডভোকেট এমকে রহমান, এসিআইর পক্ষে ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ, সান চিপসের পক্ষে ব্যারিস্টার তানজীব উল আলম, বাঘাবাড়ী ঘি’র পক্ষে অ্যাডভোকেট মোমতাজ উদ্দিন আহমদ মেহেদী বক্তব্য উপস্থাপন করেন।

৯ মে এক আদেশে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) পরীক্ষায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মানহীন ও ভেজালযুক্ত ৫২টি পণ্যের তদারকির বিষয়ে ব্যাখ্যা চান হাইকোর্ট। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও বিএসটিআইয়ের উপ-পরিচালকের নিচে নয়Ñ এমন দুজন কর্মকর্তাকে হাইকোর্টে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়। সে অনুযায়ী, ১২ মে হাইকোর্টে হাজির হন বিএসটিআইয়ের উপপরিচালক মো. রিয়াজুল হক এবং বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পরিচালক ড. সহদেব চন্দ্র সাহা। ওই দিন তাদের বক্তব্য শোনার ভেজাল খাদ্যপণ্য বাজার থেকে দ্রুত প্রত্যাহার করে এ বিষয়ে ২৩ মে প্রতিবেদন দাখিল করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। কিন্তু, বেঁধে দেওয়া সময়ে কোনো প্রতিবেদন দাখিল করেননি সংশ্লিষ্টরা। 

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৫২টি মানহীন ও নিম্নমানের পণ্য জব্দ এবং এসব পণ্য বাজার থেকে প্রত্যাহারের নির্দেশনা চেয়ে জনস্বার্থে রিট দায়ের করেন ভোক্তা অধিকার সংস্থা কনসাস কনজুমার্স সোসাইটির (সিসিএস) আইন উপদেষ্টা সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান। ভেজাল খাদ্য পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে সিটি ওয়েলের সরিষার তেল, গ্রিন ব্লিচিংয়ের সরিষার তেল, শমনমের সরিষার তেল, বাংলাদেশ এডিবল ওয়েলের সরিষার তেল, কাশেম ফুডের চিপস, আরা ফুডের ড্রিংকিং ওয়াটার, আল সাফির ড্রিংকিং ওয়াটার, মিজান ড্রিংকিং ওয়াটার, মর্ণ ডিউয়ের ড্রিংকিং ওয়াটার, ডানকান ন্যাচারাল মিনারেল ওয়াটার, আরার ডিউ ড্রিংকিং ওয়াটার, দিঘী ড্রিংকিং ওয়াটার, প্রাণের লাচ্ছা সেমাই, ডুডলি নুডলস, শান্ত ফুডের সফট ড্রিংক পাউডার, জাহাঙ্গীর ফুড সফট ড্রিংক পাউডার, ড্যানিশের হলুদের গুঁড়া, প্রাণের হলুদের গুঁড়া, ফ্রেশের হলুদের গুঁড়া, এসিআইর ধনিয়ার গুঁড়া, প্রাণের কারি পাউডার, ড্যানিশের কারি পাউডার, বনলতার ঘি, পিওর হাটহাজারী মরিচ গুঁড়া, মিষ্টিমেলার লাচ্ছা সেমাই, মিঠাই’র লাচ্ছা সেমাই, ওয়েল ফুডের লাচ্ছা সেমাই, এসিআইর আয়োডিনযুক্ত লবণ, মোল্লা সল্টের আয়োডিনযুক্ত লবণ, কিং এর ময়দা, রূপসার দই, মক্কার চানাচুর, মেহেদীর বিস্কুট, বাঘাবাড়ীর স্পেশাল ঘি, নিশিতা ফুডসের সুজি, মধুবনের লাচ্ছা সেমাই, মঞ্জিলের হলুদের গুঁড়া, মধুমতির আয়োডিনযুক্ত লবণ, সান ফুডের হলুদের গুঁড়া, গ্রিন লেনের মধু, কিরনের লাচ্ছা সেমাই, ডলফিনের মরিচের গুঁড়া, ডলফিনের হলুদের গুঁড়া, সূর্যের মরিচের গুঁড়া, জেদ্দার লাচ্ছা সেমাই, অমৃতের লাচ্ছা সেমাই, দাদা সুপারের আয়োডিনযুক্ত লবণ, মদীনার আয়োডিন যুক্ত লবণ, নূরের আয়োডিনযুক্ত লবণ।

২ মে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনের প্রকাশিত রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, বিএসটিআই সম্প্রতি ২৭ ধরনের ৪০৬টি খাদ্য পণ্যের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করেছে। এর মধ্যে ৩১৩টি পণ্যের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে, যেখানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৫২টি পণ্য নিম্নমানের ও ভেজাল রয়েছে। পরে এ বিষয়ে গেল ৩ ও ৪ মে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে বিএসটিআই কর্তৃক বাজারে এসব পণ্যে ভেজাল ধরা পড়ার পরও তা জব্দ না করা বা সেগুলো বাজার থেকে প্রত্যাহারের ব্যবস্থা না নেওয়া ও প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় ৬ মে দুই মন্ত্রণালয়ের সচিব ও তিন প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে আইনি নোটিশ দেন ভোক্তা অধিকার সংস্থা কনসাস কনজুমার্স সোসাইটি (সিসিএস)। নোটিশের পরও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় এ রিট দায়ের করা হয়। রিটে ওইসব প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট পণ্যসমূহ কেন জব্দ করা হবে না, বা বাজার থেকে কেন প্রত্যাহার করা হবে না এবং তাদের বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা জানতে রুল জারির আবেদন জানানো হয়।