আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ২৪-০৫-২০১৯ তারিখে পত্রিকা

পশ্চিমবঙ্গেও গেরুয়া ঝড়

কলকাতা প্রতিনিধি
| প্রথম পাতা

গেরুয়া রংটা পশ্চিমবঙ্গের ছিল না। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস এবং পরে দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে সেখানে শাসন করেছে বামরা (সিপিআইএম)। মমতা ব্যানার্জির দল তৃণমূল কংগ্রেস বামদের হটিয়ে ক্ষমতায় আসে ২০১১ সালের মে মাসে। এরপর থেকে রাজ্যটির রাজনীতিতে অভূতপূর্ব পরিবর্তন আসতে শুরু করে। রাজ্যের সবচেয়ে প্রভাবশালী দল সিপিআইএম দুর্বল হতে শুরু করে; আরও দুর্বল হয় ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস। সেইসঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরোধীতায় নেমে উত্থান ঘটতে থাকে রাজ্যের নতুন রাজনৈতিক শক্তি বিজেপির (প্রতীক পদ্ম)। এবার তো তাক লাগানোর মতো ঘটনাই ঘটল! লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি  আসনের মধ্যে ১৮টিতেই এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। সর্বশেষ লোকসভা নির্বাচনের চেয়ে এবার ১৬টি আসন বেশি পেয়েছে দলটি। 
পদ্ম ফুটল বঙ্গে। বিজেপির এ গেরুয়া ঝড়ে কোনোমতে প্রাণরক্ষা হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের। কলকাতা থেকে প্রকাশিত দৈনিক আনন্দবাজারের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, রাজ্যের ক্ষমতাসীন দলটি এগিয়ে আছে ২২টি আসনে, যা গেলবারের চেয়ে ১২টি কম। একটি আসনেও এগিয়ে নেই ৩৪ বছর রাজ্যের ক্ষমতায় থাকা সিপিআইএম। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস দুটি আসনে এগিয়ে আছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, পশ্চিমবঙ্গে মমতা ব্যানার্জির তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান বিরোধী শক্তি এখন বিজেপিই। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেবে গেরুয়ারা। অনেকে বলছেন, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য ক্ষমতায় আসতে পারে বিজেপি। 
ঠিক কি কারণে পশ্চিমবঙ্গে পদ্মের এ উত্থান? এটা কি কেবল দেশব্যাপী গেরুয়া ঝড় বয়ে যাওয়ার প্রভাব, নাকি এর চেয়েও বেশি কিছু? ভারতের সদ্য সমাপ্ত সাত পর্বের লোকসভা নির্বাচনে বিহার এবং কর্নাটকেও অবিশ্বাস্য সাফল্য পেয়েছে বিজেপি। বিহারে সর্বোচ্চ ১৬টি আসনে এগিয়ে আছে দলটি; আর কর্নাটকের ২৮টি লোকসভা আসনের ২৪টিতেই এগিয়ে আছে তারা। এ পরিস্থিতিতে বলাই যায়, ভারতব্যাপী যে গেরুয়া ঝড় চলছে, তার প্রভাব পড়েছে পশ্চিমবঙ্গেও। কিন্তু এর বাইরেও বেশ কিছু বিষয় আছে, যা বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাজ্যটির রাজনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। 
এবারের নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে প্রচারণায় এসে দুর্নীতিসহ নানা ইস্যুতে মমতা ব্যানার্জির রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করেছেন বিজেপি নেতা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মমতার জোরালো সমালোচনা করেছেন সর্বভারতীয় বিজেপি সভাপতি অমিত শাহও। নির্বাচনে বিজেপির বিশেষ দৃষ্টি ছিল পশ্চিমবঙ্গে, যা শেষ পর্যন্ত কাজ দিয়েছে। প্রচারণায় এসে তৃণমূলকে আক্রমণ করলেও সিপিআইএম ও কংগ্রেসের তেমন সমালোচনা শোনা যায়নি গেরুয়া শিবিরের নেতাদের মুখে। কার্যত তৃণমূল কংগ্রেসকেই টার্গেট করেছেন তারা। এ কারণে রাজ্যের বিরোধী দলগুলো পদ্মের ছায়াতলে জড়ো হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। বলা হচ্ছে, এবার বাম দলগুলোর অনেক ভোট পড়েছে পদ্মে। 
বিজেপি নির্বাচনি প্রচারণায় এসে ধর্মীয় বিষয়কে সামনে এনেছে বেশি। ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান তুলে তারা রাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু ভোটারদের টানতে সক্ষম হয়েছে বলে মনে করা হয়। সেইসঙ্গে তারা দেখাতে সক্ষম হয়েছে, ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস এ স্লোগানকে গ্রহণ করে না, যা হিন্দুত্ববাদ বিরোধী। কেউ ‘জয় শ্রী রাম’ বললে তাকে কারাগারে পাঠান মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিÑ এমন একটা গুজবও ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন বিজেপি নেতারা। বিভিন্ন সময় নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহ পশ্চিমবঙ্গে এসে সমাবেশে ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান দিয়ে মমতা ব্যানার্জির উদ্দেশে বলেছেন, তাদের যেন জেলে পাঠানো হয়। এবারের নির্বাচনে তাই হিন্দুত্ববাদের বিষয়টি বেশ জোরালো ভূমিকায় ছিল। 
নির্বাচনি প্রচারণায় পশ্চিমবঙ্গে আসামের মতো এনআরসি (জাতীয় নাগরিক পঞ্জি) করার বিষয়টিকে জোর দিয়েছে বিজেপি, যার বিরোধীতায় ছিলেন মমতা। বিজেপি প্রচার করেছে, পশ্চিমবঙ্গে বিপুল সংখ্যক অনুপ্রবেশকারী রয়েছেন। তাদের চিহ্নিত করতে চান তারা। এ ইস্যুতে বিজেপির সমর্থন বেড়ে থাকতে পারে। কারণ, রাজনৈতিক এ চাল আসাম ও ত্রিপুরায় বেশ কাজ দিয়েছিল বিজেপির জন্য। ওই দুই রাজ্যে এখন বিজেপির সরকার। আসামে নাগরিক পঞ্জি থেকে বাদ পড়েছেন ৪০ লাখ ভারতীয়। এদের প্রায় সবাই বাঙালি।