বিজেপি নতুন মেয়াদে সরকার গঠন করলেও ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সহযোগিতার সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক আগের মতোই অটুট থাকবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন বলেন, ভারতের নির্বাচনে যে রাজনৈতিক দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন, দেশটির সঙ্গে সহযোগিতার সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে। সে দেশের সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গেই বাংলাদেশের সুসম্পর্ক রয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চায়না ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন অব হংকংয়ের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারতের জাতীয় নির্বাচনের পর যে রাজনৈতিক দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন, তাদের সঙ্গে আমাদের সহযোগিতার সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে। ভারতের বিজেপি, কংগ্রেসসহ সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক রয়েছে। তিনি বলেন, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক বিদ্যমান। আমরা প্রতিবেশী দেশের স্থিতিশীলতাও চাই। ভারতের সঙ্গে আমাদের গভীর বন্ধুত্ব রয়েছে। সেখানে যে রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসুক না কেন, সেই বন্ধুত্ব অটুট থাকবে। নরেন্দ্র মোদি আবারও সরকার গঠন করলে আমাদের সেই সম্পর্কই থাকবে। তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যদি বন্ধুত্ব থাকে তাহলে সবকিছুই অর্জন করা সম্ভব। দক্ষিণ এশিয়ার এ দেশটিতে বাংলাদেশ স্থিতিশীল সরকার চায় বলেও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন।
দরকষাকষির সুযোগ আরও বাড়বে : আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন বলেন, নরেন্দ্র মোদির দ্বিতীয় বারের মতো সরকার গঠন করায় তিস্তার পনি বণ্টনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দরকষাকষির সুযোগ আরও বাড়বে। ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক আগের মতোই অটুট থাকবে। তিনি বলেন, অতীতে রেঝিম চেঞ্জ হওয়ার ফলে ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের উঠানামা করত। ২০১৪ সালে মোদি এসে প্রমাণ করে দিলেন যে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক রেঝিম চেঞ্জ দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে না।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, নিকটতম প্রতিবেশী হওয়ায় ভারতের নির্বাচন নিয়ে এ দেশের মানুষের আগ্রহ কম নয়। বিশেষ করে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি সই না হওয়ায় হতাশাও আছে খানিকটা। সীমান্তে মানুষ হত্যার বিষয়ের মতো বিষয়েও অসন্তোষ আছে এখনও। রোহিঙ্গা সংকট সমধানেও সেই অর্থে নয়াদিল্লিকে পাশে পায়নি ঢাকা। অন্যদিকে এ অঞ্চলে প্রভাব বাড়ছে চীনের। এ বিবেচনায় বাংলাদেশকে ভারতের অবহেলা করার সুযোগ কম।
অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন বলেন, পুরো দক্ষিণ এশিয়াতেই কিন্তু ভারত কিছুটা ব্যাকফুটে আছে। আমরা যদি শ্রীলঙ্কা ও নেপালের দিকে তাকাই, এমনকি মালদ্বীপের দিকে তাকাই তাহলে দেখব ভারতের সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার এসব দেশের সম্পর্ক স্বস্তিকর নয়। বাংলাদেশের সঙ্গে সবার সম্পর্কই ভালো আছে। ভারত বাংলাদেশকে ঠিক কোণঠাসা করা বা কোনো বিষয়ে অন্যায়ভাবে বা অযৌক্তিকভাবে কিছু একটা করার সুযোগ নেই। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক যতটা আস্থার অন্য দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক ততটা আস্থায় নেই। এটার মূল্যায়ন ভারতকে করতেই হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে কংগ্রেসের সম্পর্ক ঐতিহাসিক। বিজেপির সঙ্গে সেই সম্পর্ক কেমন যাবে ২০১৪ সালে এমন প্রশ্ন যারা তুলেছিলেন গেল ৫ বছর তাদের বেশ ভালোই জবাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।