আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ২৪-০৫-২০১৯ তারিখে পত্রিকা

আজ আসবে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া

সম্পর্ক আরও জোরদারের প্রত্যাশা আওয়ামী লীগের

দীপক দেব
| প্রথম পাতা

বিপুল বিজয়ের মধ্য দিয়ে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ভারতের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসছে, তা অনেকটা নিশ্চিত হয়ে গেছে। প্রতিবেশি রাষ্ট্র হওয়ায় ভারতের নির্বাচন ও রাষ্ট্র ক্ষমতায় কারা এলো তা নিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সর্বক্ষেত্রে আগ্রহ লক্ষণীয়। কংগ্রেসের সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ঐতিহাসিক সম্পর্ক থাকার কারণে গতবার নির্বাচনের পর অনেকেই মনে করেছিলেন বিজেপি ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে কিছুটা ছেদ পড়তে পারে। কিন্তু গত পাঁচ বছর দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের যে ধরন ছিল, তাতে আগের সেই ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়। এরই মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘আমরা ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদার করতে চাই।’ তিনি বলেন, ‘ভারতের নতুন সরকার তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন আলোচনার বাস্তব রূপ দেবে, আমাদের সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিয়ে যাবেÑ এটিই আমরা আশা করি।’ তবে আজ আওয়ামী লীগের সম্পাদকম-লীর বৈঠকের পর দলটির পক্ষ থেকে ভারতের নির্বাচন নিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাবে। 

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ভারতের জনগণ যে দল বা জোটকে নির্বাচিত করবে, তাদের সঙ্গেই আমাদের সম্পর্ক থাকবে। সরকার টু সরকার, পিপল টু পিপল যে যোগাযোগ ও সম্পর্ক আছে, যে জোট ও যে দলই আসুক না কেন জনগণের নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে। নির্বাচনের পর অমীমাংসিত সমস্যাগুলো আলোচনায় আসবে এবং সমাধানের ব্যাপারে ভারত সরকারের সহযোগিতা আশা করি অব্যাহত থাকবে।’ সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতার এমন বক্তব্যের পর অনেকের কাছেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, দুই দেশ ও সরকারের মধ্যে যে ইতিবাচক সম্পর্কের ধারা বিদ্যমান রয়েছে, তা অব্যাহত থাকবে। 
বুথ ফেরত জরিপ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন জোটের বিজয়ের আভাস দিয়ে রেখেছিল আগেই। গতকাল ভোট গণনা শুরুর পরে তারই প্রমাণ পাওয়া গেছে। ভারতীয় পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভার ৫৪৩টি আসনের মধ্যে ৫৪২টিতে নির্বাচন হয়েছে এবার। সরকার গঠন করার জন্য কোনো দল বা জোটকে ২৭২টি আসন পেতে হবে। প্রাথমিক গণনার ভিত্তিতে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফলাফলের যে পূর্বাভাস পাওয়া গেছে, তাতে নরেন্দ্র মোদীর বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট ৩৪১ আসনে এগিয়ে রয়েছে। আর রাহুল গান্ধীর কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোট ইউপিএ ৯৩টি আসনে এবং ১০৮টি আসনে অন্যান্য দল জয় পেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাই বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট আবারও ভারতের রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসছে, তা অনেকটাই নিশ্চিত। সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় আসনের চেয়ে বেশি সংখ্যক আসন নিশ্চিত হওয়ার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি টুইট করেন, ‘ভারত আবারও জয়ী হলো।’ 
ভূরাজনীতি ও আঞ্চলিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বেশ কিছু বিষয়ের জন্য অন্য যে কোনো প্রদেশের চেয়ে পশ্চিমবঙ্গের ভোট নিয়ে বাংলাদেশের আগ্রহ একটু বেশিই থাকে। এবার সেখানে বড় ধরনের পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। এবার পশ্চিমবঙ্গের ৪২ আসনের মধ্যে ২৩টিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল তৃণমূল কংগ্রেসের এগিয়ে থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। গেল বারের থেকে ১১টি আসন কম পেতে যাচ্ছেন তারা। এবার এখানে পশ্চিমবঙ্গে ১৮টি আসনে এগিয়ে থেকে সবাইকে চমকে দিয়েছে বিজেপি। তৃণমূলের ১১টি আসনসহ কংগ্রেসের তিনটি ও সিপিএম তথা বামদের দুটি আসনও নিজেদের করে নিতে সক্ষম হয়েছে বিজেপি। এটাকে এ অঞ্চলের পুরো রাজনৈতিক অঙ্গনের নতুন রাজনৈতিক সমীকরণের পূর্বাভাস মনে করছেন অনেকেই, যার প্রভাব পরবর্তী বিধানসভা নির্বাচনের লক্ষ্য করা যেতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে। আর বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক বিষয় হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন চুক্তির মতো সমস্যা সমাধান হতে পারে বলেও মনে করেন অনেকেই। তবে এর জন্য হয়তো আরও কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। 
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের কানেকটিভিটির বিষয়টিকে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা ভারতের সঙ্গে এ সম্পর্ক আরও জোরদার করতে চাই।’ নতুন সরকার তিস্তার পানিবণ্টন সমস্যার সমাধান করবে বলে আপনি মনে করেন কি না, জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ছিটমহল হস্তান্তর যেভাবে হয়েছে, সীমান্ত সমস্যার বাস্তবায়ন যেভাবে হয়েছে, আমার মনে হয়, তিস্তাসহ অভিন্ন নদীগুলোর পানিবণ্টন সমস্যারও সমাধান হবে। হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই, আলোচনা চলছে। ভারতের নতুন সরকার এ আলোচনার বাস্তব রূপ দেবে, আমাদের সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিয়ে যাবেÑ এটিই আমরা আশা করি।’ 
এদিকে আওয়ামী লীগের এক কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ভারতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের যে সম্পর্ক তা বিশেষ কোনো দলের ওপর নির্ভর করে না। এটা ঐতিহাসিক ও প্রমাণিত বন্ধুত্ব, যা বিজেপি নেতৃত্ব বিশ্বাস করে। তিনি বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিজেপির আমন্ত্রণে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের সফরের কথা উল্লেখ করে বলেন, ওই সময় বিজেপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দসহ সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। তারা সে সময় বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ সরকার আবার ক্ষমতায় আসুকÑ এটা তারা দেখতে চায়। তারা বিশ্বাস করে, আওয়ামী লীগই আবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসবে। এছাড়া তিস্তার পারিবণ্টন চুক্তি নিয়েও বিজেপি সরকার বহু চেষ্টা করেছে। খোদ নরেন্দ্র মোদি এ বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা সীমান্ত চুক্তিও হয়েছে বিজেপির সরকারের আমলেই। তাই আমরা মনে করি, নিজেদের স্বার্থে ও আঞ্চলিক রাজনীতির স্বার্থেই আমাদের সম্পর্ক আরও বৃদ্ধি পাবে। তিস্তার পানিবণ্টন সমস্যাও এবার সমাধান হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।  
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, এ বিষয়ে আগামীকাল (আজ) আওয়ামী লীগের সম্পাদকম-লীর সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভা শেষে আমাদের সাধারণ সম্পাদক ভারতের নির্বাচন নিয়ে কথা বলবেন বলে আশা করি। তবে শুধু এটুকু বলতে পারি, আওয়ামী লীগ সব সময় জনগণের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। ভারতের সাধারণ জনগণ যে দল বা জোটের প্রতি তাদের রায় দেবে, আমরা সে রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। জনগণের ভোটে যারাই জয়ী হবেন তাদের আমরা স্বাগত জানাব।