আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ২৪-০৫-২০১৯ তারিখে পত্রিকা

লোকসভা নির্বাচনের ফল

মোদির হাতেই ভারত

মৌসুমী সাহা
| প্রথম পাতা

- পরাজয় মেনে নিয়েছেন রাহুল

- শ্মশানের নীরবতা বিরোধী শিবিরে 

- মুখ থুবড়ে পড়ল মায়াবতী-অখিলেশ জোট

- ২৬ মে সরকার গঠনের ইচ্ছা মোদির

 

মোট আসন : ৫৪২

সরকার গঠনে প্রয়োজন ২৭২

ভারত

বিজেপি ৩০২ (+২০)

এনডিএ (মোট) ৩৫৪ (+১৯)

কংগ্রেস ৫০ (+৬)

ইউপিএ (মোট) ৮৮ (+২৯)

অন্যান্য ৯৯ (-৪৯)

 

পশ্চিমবঙ্গ

তৃণমূল ২২ (-১২)

বিজেপি ১৮ (+১৬)

কংগ্রেস ২ (-২)

বাম ০ (-২)

সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনের কঠিন যুদ্ধে বিশাল জয় পেয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বারানসি থেকে যুদ্ধে জয়ী হয়ে মোদির জয়রথ সারা ভারত ঘুরে থামল দিল্লিতে। আবারও দিল্লির মসনদে তিনিই বসতে যাচ্ছেন। তুমুল গেরুয়া ঝড়ে দিশেহারা বিরোধীরা। ভারতবাসী এবারও ‘চৌকিদার’ মোদিকেই বেছে নিয়েছে। পদ্মফুল নিয়ে শেষ হাসিটা তাই মোদিই হাসলেন। মোদির বিশাল জয়ের পর উল্লাসে মেতে উঠেছেন বিজেপি কর্মীরা। অপরদিকে শ্মশানের নীরবতা নেমে এসেছে বিরোধী শিবিরে। 

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এবারের নির্বাচনে মোদির নেতৃত্বধীন এনডিএ জোট এগিয়ে আছে ৩৫৪ আসনে। এর মধ্যে বিজেপি পেয়েছে ৩০২ আসন। ইউপিএ এগিয়ে আছে ৮৮ আসনে। এর মধ্যে কংগ্রেস পেয়েছে ৫০ আসন। অন্যান্য দল এগিয়ে আছে ৯৯ আসনে। ২০১৪  সালের চেয়েও বড় জয় নিয়ে টানা দু’বার সরকার গঠন করে ভারতের প্রয়াত সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর কৃতিত্বকে ছুঁতে চলেছেন মোদি।
লোকসভা নির্বাচনে এনডিএ জোটের ব্যাপক জয়ের পর নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন মোদি। বৃহস্পতিবার এক টুইটার বার্তায় তিনি বলেন, আবারও জিতল ভারত। তিনি বলেন, একসঙ্গে আমরা বাড়ছি।  আমাদের একসঙ্গে শ্রীবৃদ্ধি হচ্ছে। আমরা একসঙ্গে মজবুত ভারত তৈরি করব। আবারও ভারতের জয়। ২৬ মে কেন্দ্রে সরকার গঠনের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন মোদি। বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ বলেন, এই জয় মোদির উন্নয়ন এবং তার প্রতি মানুষের আস্থার জয়। নির্বাচনে মূলত মোদি-শাহ জুটি বাজিমাত করেছে। 
এবারের নির্বাচনে গেরুয়া ঝড়ে বেসামাল হিন্দি বলয় থেকে শুরু করে পশ্চিমবঙ্গ, বিহার-ওড়িশা, এমনকি উত্তর-পূর্ব ভারত। ভোট গণনার প্রবণতায় স্পষ্ট হয়ে যায় যে, কংগ্রেসের আসন সংখ্যা বাড়লেও সরকার গঠনের ধারে-কাছে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই ইউপিএ জোটের। চন্দ্রবাবু নায়ডু, মমতা ব্যানার্জি, মায়াবতী-অখিলেশরা যে জোট গড়ার চেষ্টায় ছিলেন, নিজেদের রাজ্যেই শোচনীয় ফল তাদের। পশ্চিমবঙ্গে এক ধাক্কায় আসন বেড়েছে বিজেপির। অন্ধ্রে ব্যাপক উত্থান ওয়াইএসআরসিপির।
এদিকে কেরালার ওয়েনাডে জিতলেও নিজেদের দুর্গ আমেথিতে বিজেপি নেত্রী স্মৃতি ইরানির কাছে হারলেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। একইসঙ্গে উত্তরপ্রদেশসহ গোটা ভারতে ফের একবার স্বপ্নভঙ্গ হলো কংগ্রেসের। এদিন ফলাফলের চিত্র কিছুটা পরিষ্কার হতেই সংবাদ সম্মেলন করে নিজের হার স্বীকার করে নিলেন রাহুল। তিনি স্পষ্ট জানালেন, মানুষ প্রধানমন্ত্রী পদে নরেন্দ্র মোদিকে চেয়েছে। তিনিই প্রধানমন্ত্রী হবেন। এখন অন্য কিছু আলোচনা না করে আমি নরেন্দ্র মোদিকে অভিনন্দন জানাব। মানতেই হবে, বিজেপি ও মোদি দারুণ জয় পেয়েছেন।
এবারে বিরোধীদের কাছে কার্যত তুরুপের তাস ছিল উত্তরপ্রদেশ। কারণ, আসন সংখ্যার নিরিখে ভারতের মধ্যে সবচেয়ে বড় এই রাজ্যে দীর্ঘদিন বাদে দুই চির প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তি মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টি এবং অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টি এক হয়ে ভোটে লড়েছে। সঙ্গে ছিল অজিত সিংহের আরএলডি-ও। কিন্তু তাতেও বিজেপির জয়রথ থামাতে পারলেন না তারা। ভোট গণনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সেখানে স্পষ্ট হয়ে যায় বিজেপির জয়ের বিষয়টি। এই রাজ্যে মায়াবতী-অখিলেশ জোট ৫০টিরও বেশি আসনে জয় পাওয়ার আশা করেছিল। যাদব ও মুসলিম সম্প্রদায়ের ভোটে ভর করে বিজেপিকে পেছনে ফেলার প্রত্যাশা করেছিলেন তারা। কিন্তু বিজেপির অপ্রতিরোধ্য জয়ে মুখথুবড়ে পড়েছে মায়াবতী-অখিলেশ জোট। এর আগে মায়াবতী ভারতের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হওয়ার প্রত্যাশা জানিয়েছিলেন। কিন্তু যে আশায় ভর করে তিনি এই প্রত্যাশা জানিয়েছিলেন তা মোদি ঝড়ে ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। 
এদিকে উত্তর প্রদেশে কংগ্রেসের পরিস্থিতি আরও শোচনীয়। তারা রাজ্যটির অধিকাংশ আসনে প্রার্থী দিয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালালেও কাক্সিক্ষত ফল পায়নি। প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্রকে নিয়ে এসে কংগ্রেস উত্তর প্রদেশে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করার চেষ্টা করেছিল।  কিন্তু মোদির লোকসভা কেন্দ্র বারানসি ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের শক্তিকেন্দ্র গোরক্ষপুর যে রাজ্যটিতে অবস্থিত সেখানে প্রিয়াঙ্কা ফ্যাক্টর কোনো প্রভাব রাখতে পারেনি। ধারণা করা হচ্ছে, কংগ্রেসকে জোটের বাইরে রাখার মায়াবতীর সিদ্ধান্তে বিজেপি-বিরোধী ভোট ভাগাভাগি হয়ে খোদ বিজেপিরই সুবিধা করে দিয়েছে। তবে উত্তর প্রদেশেই জয়ের দেখা মিলছে গান্ধী পরিবারের সদস্য মেনকা গান্ধী ও বরুণ গান্ধীর। তবে গান্ধী পরিবারের আলোচিত এ দুই সদস্য কংগ্রেসের নয় বরং বিজেপির হয়েই জয়মাল্য গলায় পরছেন। 
ধরাশায়ী চন্দ্রবাবু নাইডু : এদিকে বিরোধী মহাজোটের নেতৃত্ব দেওয়া টিডিপির চন্দ্রবাবু নাইডু নিজের রাজ্য অন্ধ্রপ্রদেশেই ধরাশায়ী হলেন।  একদিকে কেন্দ্রে মোদিবিরোধী জোট সরকার গঠনের দিকে তিনি এগোচ্ছিলেন আটঘাট বেঁধে; ভারতের বিভিন্ন আঞ্চলিক নেতৃত্বকে পাশে পেতে। অন্যদিকে, নিজের রাজ্য অন্ধ্রপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনে সুফল পেতে রাজ্যের বিশেষ তকমার বিষয়টিকেও হাতিয়ার করে গত বছর এনডিএ জোট ছেড়েছিলেন। লক্ষ্য ছিল, প্রতিবেশী তেলেঙ্গানার শাসক দল তেলেঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতির আদলে রাজ্যের আইডেন্টিটির তাস খেলে ভোটবাক্সে সুবিধা তোলা। কিন্তু চন্দ্রবাবুর সে গুড়ে বালি পড়ল। কেন্দ্রে মোদির বিজেপি ফিরল বিপুল জনাদেশ নিয়ে এবং রাজ্যে ওয়াইআরএস কংগ্রেসের কাছে জাতীয় এবং সাধারণ নির্বাচনে ধুয়েমুছে সাফ হয়ে গেল টিডিপিÑ যারা একসময়ে চন্দ্রবাবুর অভিনেতা-রাজনীতিবিদ শ্বশুর এনটি রামা রাও’র নেতৃত্বে দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে উঠে এসেছিল।
গুজরাটে বিজেপির সার্জিক্যাল স্ট্রাইক : এদিকে মোদির গড় গুজরাটে বিজেপির ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে’ বিরোধীরা ধুয়ে-মুছে সাফ হয়ে গেছে।  ২৬টি লোকসভা আসনের গুজরাতে নিজেদের গড় ধরে রাখার বড় ধরনের  চ্যালেঞ্জ ছিল বিজেপির সামনে। দুর্গ ধরে রাখতে মরিয়া প্রচেষ্টা গুজরাটের মাটিতে চালিয়েছিল বিজেপি। আর সে চেষ্টার ফল মিলল। গুজরাটের ২৬ আসনই এখন মোদি-শাহের পকেটে। বিজেপির চাণক্য অমিত শাহ এবার প্রবীণ বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আদভানির জায়গায় গুজরাটের গান্ধীনগর থেকে লড়াই করেছেন। তা নিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে একাধিক সমালোচনা হলেও, শেষমেশ সেনাপতিসহ গুজরাটের মাটি থেকে জয় ছিনিয়ে নেয় বিজেপি। গুজরাটের পাতিদার ইস্যু একটি বড় বিষয়। এই সম্প্রদায়ের ক্ষোভের কারণে ২০১৮ বিধানসভা নির্বাচনে গুজরাটে সংকটের মেঘ আসে আনন্দীবেন প্যাটেল সরকারের ওপর। তবে সেই সমস্যা কাটিয়ে পাতিদার অধ্যুষিত মহসেনা আসনও দখল করে নিয়েছে বিজেপি। 
দিল্লিতে পদ্ম-তুফানে সাফ আপ-কংগ্রেস : রাজধানী দিল্লির  আকাশ এখন গেরুয়া আবিরে রঙিন। দিল্লির মোট ৭টি আসনে পদ্মফুলের ঘায়ে উড়ে গিয়েছে আম আদমি পার্টির (আপ) ঝাঁটা-কংগ্রেসের হাত! নির্বাচনের ফল গণনা শুরু হতেই দেখা যায়, দিল্লির বিভিন্ন জায়গা থেকে বিজেপির প্রার্থীদের এগিয়ে থাকার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায়। দিল্লিতে বিজেপির দায়িত্বভার সামলাচ্ছেন মনোজ তিওয়ারি, কার্যত তার সঙ্গেই ‘কাঁটে কি টক্কর’ ছিল কংগ্রেসের শীলা দিক্ষীতের। আর ভোটের ফল সামনে আসতেই দেখা যায়, পূর্ব দিল্লি থেকে আপের অতশীকে পিছনে ফেলে জয়ের পথে চলে যান ক্রিকেটার গৌতম গম্ভীর। ২০১৪ সাল থেকে অনেক ভালো ফল করে এবার ফের একবার দিল্লিতে বিজয় নিশান সদর্পে ওড়াচ্ছে বিজেপি। ফলের ট্রেন্ড আসা শুরু হতেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হর্ষবর্ধন তার নেপথ্য কারণ হিসেবে ‘মোদি-ঝড়’কেই তুলে ধরেছেন। 
এদিকে দিল্লি কংগ্রেসের কেবল দায়িত্বেই তিনি ছিলেন না, এককালে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীও ছিলেন শীলা দীক্ষিত। তবে ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে উত্তর-পূর্ব দিল্লির লোকসভা আসন থেকে পিছিয়ে পড়েন তিনি। প্রসঙ্গত, আপের দিক থেকে রাজধানীর লোকসভা আসন হাতছাড়া হওয়াও একটি বড় ব্যর্থতা। রাজনৈতিক কারণ থেকে শাসক-দুর্নীতির মতো একাধিক ইস্যু তুলে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে হাওয়া গরম করেছিল বিজেপি। আর সে হাওয়াতেই পাল লাগিয়ে দিল্লি দখল করে ফেলল পদ্ম শিবির।
পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির চমক : পশ্চিমবঙ্গেও বড় চমক দেখিয়েছে বিজেপি। তৃণমূলের ঘাঁটি পশ্চিমবঙ্গে বড় থাবা বসিয়েছে তারা। তবে শেষ পর্যন্ত জয় ছিনিয়ে আনতে না পারলেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির কপালে চিন্তার ভাঁজ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে তারা। 
বিষন্ন কংগ্রেস : এদিকে ২০১৮ সালে জেতা বিধানসভা ভোটের ক্যারিশমা এবারের লোকসভা নির্বাচনে খুব একটা কাজে এলো না কংগ্রেসের। এদিন ভোটের ফল সামনে আসতে থাকার মধ্যেই দাদা রাহুলের বাসভবনে যান প্রিয়াঙ্কা। মনে করা হচ্ছে, আগামী পদক্ষেপ সম্পর্কে আলোচনা করতেই কংগ্রেস সভাপতির সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা। কংগ্রেস নেতা অভিষেক মনু সিংঘভি জানিয়েছেন, রাহুল সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করেছেন তিনি। স্বচ্ছ ও স্পষ্ট প্রচারে বিশ্বাসী ছিলেন তিনি। কোনো কিছুকেই ভয় পাননি। এবার  কংগ্রেসের ঝুলিতে পাঁচ বছর আগের চেয়ে বেশি আসন এলেও তাতে শেষ রক্ষা হয়নি। দলের সভাপতি রাহুল এবার কোমর বেঁধে নেমেছিলেন মোদিকে হারানোর লক্ষ্যেÑ রাফায়েল কান্ড বা কর্মসংস্থান বিষয়ক ইস্যুগুলোর উপরে জোর দিয়েছিলেন, ময়দানে নামিয়েছিলেন বোন প্রিয়াঙ্কাকেও, তারপরও এই ফলাফলে স্বাভাবিকভাবেই কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকদের প্রবল হতাশা গ্রাস করারই কথা। এখানে উল্লেখ্য, গত ডিসেম্বরেই বিধানসভা নির্বাচনে হিন্দি বলয়ের তিনটি বড় রাজ্য রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ এবং ছত্তীসগড়ে ক্ষমতায় ফেরে কংগ্রেস। আর তার কিছু মাস আগে কর্ণাটকেও বিজেপিকে ক্ষমতা থেকে দূরে ঠেকিয়ে রাখতে জোট বাঁধে কংগ্রেস ও জনতা দল (সেক্যুলার)। যখন ভাবা হচ্ছিল কংগ্রেস বুঝি এবারে ঘুরে দাঁড়াবে, তখনই এই বিপর্যয়। 
জোট বাধতে ব্যর্থতা রাহুলের : এবার কোথাও জোট করতে পারেননি রাহুল। এবারে নির্বাচনে তিনি নিঃসন্দেহে লড়েছিলেন জান লাগিয়ে। পরিশ্রম, নিষ্ঠা কিছুই কম দেখাননি। কিন্তু যেটা তিনি পারেননি তা হলো জোট তৈরি। পশ্চিমবঙ্গে বামেদের সঙ্গে হোক বা উত্তরপ্রদেশে মহাজোট বা দিল্লিতে আম আদমি পার্টিÑ কংগ্রেস কোথাও সুবিধা করতে পারেনি আর সেটা নিঃসন্দেহে শীর্ষ নেতৃত্বের ব্যর্থতা। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, গত বছর গো-বলয়ে জেতার সময়ই এবারের লোকসভা নির্বাচনের জোট তৈরির কাজ করে রাখা উচিত ছিল রাহুলের, যা তিনি করেননি। হয়তো ভেবেছিলেন ওই রাজ্য নির্বাচনের ফলাফলের পর আপনাআপনিই বিজেপি এবারে হেরে যাবেÑ যা বাস্তবে হয়নি। 
এবারের নির্বাচনে বিশ্লেষকরা আরও মনে করছেন, মোদির বিকল্প হিসেবে রাহুলকে এখনও ভাবতে রাজি নয় মানুষ। দ্বিতীয়ত, রাহুলের নেতৃত্বের উপরে মানুষের বিশ্বাস যে এখনও মজবুত হয়নি, এটা তারই পরিচয়। হয়তো তিনি সাক্ষাৎকার আগের চেয়ে ভালো দিচ্ছেন, নির্দিষ্ট এজেন্ডা নিয়ে কথা বলছেন কিন্তু নিজেকে মোদির যোগ্য বিকল্প হিসেবে তৈরি করতে এখনও সফল হননি। তার জন্য যেভাবে তৃণমূল স্তরে  দলকে চাঙ্গা করার প্রয়োজন, সেটা তিনি এখনও করে উঠতে পারেননি। রাহুল মোদিকে সরাসরি নিশানা করলেও বিভিন্ন রাজ্য স্তরে কংগ্রেসের কোনো পোক্ত নেতৃত্ব এবং সংগঠনই নেইÑ যা বিজেপির সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে। সলিলসমাধি। 
তুরুপের শেষ তাস প্রিয়াঙ্কার প্রভাব কাজে লাগেনি : এবারে কংগ্রেসের সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার কারণ যে এই নির্বাচনে তুরুপের শেষ তাসটি, অর্থাৎ প্রিয়াঙ্কাকে নির্বাচনের সাংগঠনিক কাজে নামিয়েও কোনো লাভ হলো না। কংগ্রেসের দুর্গ আমেথিতেও রাহুলের পরাজয়ে বোঝা যাচ্ছে, গান্ধী পরিবারের গণআবেদন এবারে নিম্নমুখী এবং তা আগামী দিনে কংগ্রেসের অস্তিত্বের পক্ষে বেশ সংকটের কারণ হতে পারে। এই পরাজয়ে অন্তত এ কথাটি পরিষ্কার যে, মুখ নয়, মোদির বিরুদ্ধে সফলভাবে লড়তে গেলে কংগ্রেসের চাই নতুন ভাবনাচিন্তা। কংগ্রেসের এ শোচনীয় পরাজয়ের পর দলের মনোবল ও বাঁধন আলগা হয়ে হাতছাড়া হতে পারে মধ্যপ্রদেশ এবং কর্ণাটকের মতো দুটি বড় রাজ্য। কারণ সেখানে কংগ্রেসের (জোট) সরকার বেশ টলমল করে চলছে। আর সে দুঃস্বপ্ন যদি সত্যি হয় তাহলে হয়তো রাজনীতি থেকে অকালে সন্ন্যাস নেওয়া ছাড়া রাহুলের আর কোনো উপায় থাকবে না।
এদিকে কেরালার ওয়েনাডে বিশাল জয় পেলেও কংগ্রেসের দুর্গ আমেথিতে বিজেপির কাছে পরাজিত হওয়া সম্পর্কে বলতে গিয়ে রাহুল বলেন, আমেথির মানুষকে ধন্যবাদ। স্মৃতি ইরানিকে তারা জিতিয়েছেন। আশা করি, স্মৃতি আমেথির মানুষের পাশে থেকে তাদের জন্য কাজ করবেন।  
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অভিনন্দন বার্তা : মোদির জয়ের খবর পেয়েই অভিনন্দনের বার্তা আসছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে। মোদিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দেশ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। এক টুইটার বার্তায় তিনি বলেন, বিজেপি ও তার সহযোগী দল ভোটে জয়লাভ করার জন্য আমি প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। দক্ষিণ এশিয়ার পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য এবং এই এলাকার সমৃদ্ধির জন্য আমি তার সঙ্গে কাজ করতে চাই। ‘মোদির জোয়ার’ অব্যাহত, আর সেই জোয়ারে ভেসেই আবার একবার ভারতের সরকার গঠন করতে চলেছে বিজেপি। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন অভিনন্দন জানিয়েছেন মোদিকে। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনয়ামিন নেতানিয়াহু মোদিকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। বন্ধুত্ব আরও শক্ত হওয়ার বার্তা দিয়েছেন তিনি। এক টুইটার বার্তায় তিনি লিখেছেন, ভোটের ফলই বুঝিয়ে দিল যে বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতন্ত্রকে কীভাবে নেতৃত্ব দেন আপনি। অভিনন্দন জানিয়েছেন আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানিও। ভারতের মানুষ সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। একইসঙ্গে তিনি বলেছেন, আগামীদিনে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার সম্পর্ক আরও এগিয়ে যাবে। ফোন এসেছে জাপান থেকেও।